১৯ মে ২০২৪, রবিবার



লাইফ স্টাইল
প্রিন্ট

কেন বাড়ছে স্বামী-স্ত্রীর আলাদা ঘুমানোর প্রবণতা?

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১২:০২ এএম
কেন বাড়ছে স্বামী-স্ত্রীর আলাদা ঘুমানোর প্রবণতা?


দম্পতি অথবা সঙ্গীরা এক ছাদের তলায় থাকেন, অথচ আলাদা ঘরের আলাদা বিছানায় ঘুমান, তখন সেই বিষয়টাকে 'স্লিপ ডিভোর্স' বলা হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, মোট ৪৫ শতাংশ পুরুষ স্বীকার করেছেন যে, তারা মাঝেমধ্যে বা বেশির ভাগ সময়ই রাতে অন্য ঘরের সোফায় কিংবা অতিথিদের রুমে গিয়ে শুতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। অন্যদিকে ২৫ শতাংশ নারীরা এই কথা স্বীকার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকলিন হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ স্টেফানি কলিয়ার বিবিসিকে জানান, স্লিপ ডিভোর্স হলো এমন একটা বিষয়, যেটি প্রাথমিকভাবে সাময়িক সময়ের জন্য করা হয়। কিন্তু যখন দম্পতিরা বুঝতে পারেন একা ঘুমালে তাদের ভালো ঘুম হয়, তখন বিষয়টি আর সাময়িক থাকে না। তিনি বলেন, স্লিপ ডিভোর্সের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত কারণ জড়িত।

তিনি বলেন, যারা নাক ডাকেন ও ঘুমের মাঝে পা নাড়ান। তাদের স্লিপ ওয়াকিং, অর্থাৎ ঘুমের ঘোরে হাঁটার অভ্যাস থাকতে পারে অথবা শারীরিক সমস্যার কারণে তারা ঘনঘন বাথরুমেও যেতে পারে। সুতরাং তারা অনেক বেশি নড়াচড়া করে, গড়াগড়ি খায় ও এটি তাদের সঙ্গীকে বিরক্ত করে।

অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য তারা মাঝে মাঝে বা প্রায় প্রতিদিনিই সঙ্গী থেকে আলাদা রুমে ঘুমায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮ থেকে ৪২ বছর বয়সী (এরা মিলেনিয়াল বা ওয়াই জেনারেশন, এদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মাঝে) উত্তরদাতাদের ৪৩ শতাংশ জানিয়েছে, তারা তাদের সঙ্গীর সঙ্গে ঘুমায় না।

যাদের জন্ম ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি, অর্থাৎ যারা জেনারেশন এক্সের মানুষ, তাদের ৩৩ শতাংশ; জেনারেশন জেড (১৯৯৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মাঝে যাদের জন্ম)-এর ২৮ শতাংশ এবং বেবি বুমার্সদের (১৯৪৬ এবং ১৯৬৪ সালের মাঝে যারা জন্মগ্রহণ করেছে) ২২ শতাংশও একই কথা জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. কলিয়ার বলেন, তরুণ প্রজন্মের মাঝে স্লিপ ডিভোর্সের প্রবণতা বেশি কেনো এর কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আলাদা ঘুমানোর বিষয়টিকে তারা ততটা অসম্মানজনক মনে করে না। এটি একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। তারা ভাবে, যদি আমি ভালো ঘুমাই, ভালো বোধ করি, তবে কেন নয়

ঐতিহাসিকদের মতে, অতীতে দম্পতিদের কাছে আলাদা রুমে ঘুমানোটা খুব সাধারণ একটি বিষয় ছিল। কিন্তু ইতিহাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই ধারণাতেও পরিবর্তন এসেছে।

ঐতিহাসিকরা বলছেন, ডাবল বিছানা (বৈবাহিক বিছানা) হলো একটি আধুনিক ধারণা এবং শিল্প যুগের বিকাশের সময় এই ধারণা বিস্তার লাভ করেছিলো। তখন মানুষকে জনবহুল এলাকায় বসবাস করতো। উনিশ শতকের আগে বিবাহিত দম্পতিদের আলাদা ঘুমানো একটি সাধারণ বিষয় ছিল।

চিলির ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল স্কুলের সোমনোলজিস্ট (ঘুম বিশেষজ্ঞ) পাবলো ব্রকম্যান বলেন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাদের বেশি ভালো ছিল, তাদের মাঝে স্লিভ ডিভোর্স তত বেশি সাধারণ বিষয় ছিল।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলাদা রুমে ঘুমানোর বেশ কিছু সুবিধা আছে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. কলিয়ার বলেন, সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর কারণে তারা একটা নিয়মিত এবং গভীর ঘুমের অভ্যাস গড়তে পারে। তিনি বলেন, ভালো ঘুম সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য, স্লিপ ডিভোর্স একটি সুস্থ সম্পর্ক রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

ডা. কলিয়ার বলেন, স্লিভ ডিভোর্সের কিছু অসুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, আলাদা ঘুমাতে হলে একটি অতিরিক্ত বিছানা এবং রুম দরকার। কিন্তু অনেক দম্পতির জন্য এটার বন্দোবস্ত করা সম্ভব না। এমনকি এমন সিদ্ধান্তের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।  

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক দম্পতিই তাদের মধ্যকার ইন্টিমেসি, অর্থাৎ পারস্পরিক সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা করেন। এতে সম্পর্ক-সান্নিধ্য বা পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এটা ততটা গুরুতর কোনও সমস্যা না। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ অনেক বেশি।  

ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. ব্রকম্যান বলেন, ‘স্লিপ ডিভোর্স’ সব দম্পতির জন্য কার্যকর না। একসঙ্গে ঘুমানোর বেশ কিছু জৈবিক উপকারিতা রয়েছে। অনেকের কাছে এই বন্ধন স্বপ্নে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন মা এবং তার সন্তানের মাঝে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এই বন্ধন তৈরি হয়। মা এবং শিশুর ঘুমের সময়ও একই থাকে, তখন তারা দু’জনেই বিশ্রাম নেয়।

তিনি বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, এমন অনেক দম্পতি আছেন, যারা বছরের পর বছর একসঙ্গে ঘুমাচ্ছেন এবং তারা পারস্পরিক সংস্পর্শে আসার পর গভীরভাবে ঘুমাতে পারেন।  

ড. ব্রকম্যান বলেন, নাক ডাকার সমস্যা, ঘুমের মাঝে হাঁটা বা পা নাচানোর অভ্যাস থাকলেও এটা তাদের জন্য কঠিন হতে পারে। কারণ কিছু মানুষ আছে, যারা ভিন্ন বিছানায় ঘুমাতে পছন্দ করে না। সাধারণত পুরুষরা এটি করতে অনিচ্ছুক। কিন্তু গবেষণা এটাই নির্দেশ করছে যে স্লিপ ডিভোর্সের হার ঊর্ধ্বগতিতে। বিশেষ করে কিছু দেশে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল বেড ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালেও যেসব ব্রিটিশ দম্পতি একসঙ্গে ঘুমাতো, তাদের প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ দম্পতি এখন আলাদা ঘুমায়। শুধু তাই নয়, তাদের প্রতি ১০ জনের নয় জন, অর্থাৎ ৮৯ শতাংশ মানুষ পৃথক রুমে ঘুমায়।

২০০৯ সালে দ্য স্লিপ কাউন্সিলের একটি জরিপে দেখা গেছে, ১০ জনের মধ্যে একজনেরও (সাত শতাংশ) কম দম্পতির আলাদা বিছানা রয়েছে। ন্যাশনাল বেড ফেডারেশন বলছে, গত এক দশকে আলাদা ঘুমানোর হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।



আরো পড়ুন