১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

দোকান গোছাতেই ব্যস্ত বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১০ এপ্রিল, ২০২৩, ০৭:০৪ পিএম
দোকান গোছাতেই ব্যস্ত বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা


আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর চেষ্টা করছেন তারা। কেউ কেউ ফুটপাতে ছোট চৌকি, কেউ কেউ টেবিল ও বেঞ্চ বিছিয়ে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা আপাতত চৌকি বসিয়ে ব্যবসা পুনঃচালুর লক্ষ্যে দোকানোর গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সোমবার (১০ এপ্রিল) বঙ্গবাজার এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবার ঈদুল ফিতরের এই সময়ে দিনে লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছে। এবার এক হাজার টাকাও বেচাকেনা হয়নি। অধিকাংশ ব্যবসায়ী অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ  সকাল থেকে আসর পর্যন্ত দোকান গোছাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

আগুনে বিদ্যুৎলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো এনেক্সকো টাওয়ারে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি। ফলে কখনো  অন্ধকারে, কখনো জেনারেটর চালিয়ে যতটুকু সম্ভব কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি তাদের  বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে  ঋণ দেয়, তাহলে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। পাশাপাশি তারা যেসব ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন, সেসব ব্যাংক যদি সুদের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ায়, তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। 

ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকাররের পাশাপাশি অনেক সংস্থা রয়েছে, যারা ‘বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সহায়তা তহবিল’-এ অনেক অর্থ দিয়েছে, সেই অর্থ তারা কেউই এখন পর্যন্ত পাননি।  তারা বলছেন, ঈদের আগে যদি সহায়তা তহবিল থেকে তাদের সহায়তা করা হয়, তবেই কাজে লাগবে।  

মায়ের দোয়া কালেকশনের স্বত্বাধিকারী মো. আসলাম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘শুনেছি অনেকে রাতে আসে সাহায্য করতে। পথের মানুষ বিভিন্ন দোকান নিজেদের বলে পরিচয় দিয়ে টাকা নেয়। অথচ তারা রাস্তার মানুষ। আমরা যারা সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, তারা এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি। আমার দোকান থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়েছে মাত্র ৭০০ টাকা। অথচ ঈদের এই সময় আমাদের লাখ টাকা বেচাকেনা হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। ব্যাংক থেকে সুদবিহীন অথবা স্বল্প সুদে ঋণ পেলে উপকার হতো।’


এস.কে ট্রেডার্সের মালিক মো. কামাল হোসেইন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা এনেক্সকো টাওয়ার থেকে মাল সরিয়ে নিয়েছিলাম।  আমাদের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমরা আবারও দোকানে সরিয়ে ফেলা মাল তুলছি। তবে ব্যবসা এখনো শুরু করতে পারিনি।’

মেসার্স লাটু ট্রেডার্সের মালিক মো. জামাল উদ্দিন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মার্কেটে বিদ্যুৎ নেই। কাস্টমার তেমন নেই। আমার ৮০ লাখ টাকা মাল পুড়ে গেছে। গতকাল থেকে দোকান গোছাচ্ছি। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। আশা করছি, ঈদের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমরাও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। সবার সহযোগিতা থাকলে ঘুরে দাঁড়াবো।’

 বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি র সভাপতি নাজমুল হুদা ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ফান্ডে দেড় কোটি টাকার মতো অনুদান জমা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকেও অনুদান আসবে ফান্ডে। আমাদের প্রধান হচ্ছেন মেয়র তাপস। তিনি ঠিক করবেন কখন কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা করবেন। তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহে  ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কোনো শর্ত ছাড়া সহায়তা করা হবে।’

নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের টার্গেট হচ্ছে, যারা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন, তাদের বেশি সহায়তা করা। তারা যেন কিছুটা হলেও আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন