০৪ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

তীব্র শীতেও গরম কাপড়ের দোকানে ‘ভিড় নেই’

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪, ০১:০১ পিএম
তীব্র শীতেও গরম কাপড়ের দোকানে ‘ভিড় নেই’


রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র শীতে কাঁপছে। এই শীতে রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় শপিংমলগুলোতে যে পরিমাণ গরম কাপড় বিক্রির কথা ছিল, তা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডিসেম্বরে শীত খুব একটা না পড়ায় ক্রেতারা শীতবস্ত্র কেনা থেকে বিরত ছিলেন। তবে এই মুহূর্তে শীতের তীব্রতা বাড়লেও তা দীর্ঘমেয়াদি হবে না মনে করে সাধারণ মানুষ গরম কাপড় তেমন কিনছেন না। রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর ৬ ও ১০ নম্বরের ফুটপাত, বিভিন্ন শো-রুম, ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে এই  তথ্য পাওয়া  গেছে।

ক্রেতারা জানান, মানুষের ব্যয় যে-পরিমাণ বেড়েছে, সেই পরিমাণ আয় বাড়েনি। পণ্যের দামও আকাশচুম্বী। এমন পরিস্থিতিতে শীতে গরম কাপড় কেনা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, গত বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি ছিল না, ছিল না রাজনৈতিক সভা-মিছিল।  যে-কারণে গত বছর শীতবস্ত্র বেচাকেনা অনেক বেশি ছিল। এছাড়া গেলো মাসের শুরুর দিকে কিছু ক্রেতা শীতবস্ত্র কিনেছেন। এখনো নির্বাচন পরবর্তী সামান্য কিছু বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ নয়। বর্তমানে যে-রকম প্রচণ্ড শীত নেমেছে। তবে, তা বেশিদিন থাকবে না। বড়জোর এক সপ্তাহ।  এসব ভেবে হয়তো ক্রেতারা শীতবস্ত্র কিনতে খুব একটা ভিড় করছেন না। 

বিক্রেতারা আরও জানান, ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এখন বিদেশ থেকে শীতবস্ত্র আনতে তাদের অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। যখন এক ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা ছিল, তখন যে-পরিমাণ অর্থ খরচ হতো, এখন তার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ খরচ হয়। বর্তমানে এক ডলারের বিপরীতে ১২০ টাকার ওপরে খরচ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। ক্রেতারাও বেশি দামে কিনতে চান না।

রাজধানীর ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপার মার্কেটে বাচ্চাসহ সস্ত্রীক কম্বল কিনতে এসেছেন আবুল হোসেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমি ১ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে এক পার্টের একটি কম্বল কিনেছি। এই কম্বল ৪/৫ দিন আগেও ৭০০ টাকায় পাওয়া গেছে। কয়েকদিন ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় কম্বলের দাম বেড়েছে। শীতে গরম কাপড়ের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। যারা বুদ্ধিমান তারা শীত আসার আগেই গরম কাপড় কিনে ফেলেন।’

মিরপুর-১০ নম্বরে শীতবস্ত্র কিনতে এসেছেন ডিপ্লোমা পাস করে আইইএলটিএস-এ ভর্তি হওয়া মাহফুজ। দাম বেশি হওয়ায় তিনি দামাদামি করে চলে যান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে বসুন্ধরা শপিংকমপ্লেক্স; সবখানে ছোটবড় সবার জ্যাকেট, ব্লেজার, ফুলহাতা টি শার্ট, হুডি, ওভার জ্যাকেট, হাতমোজা, পায়ের মোজা ও উলের টুপিসহ যাবতীয় শীতের বস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্থানভেদে দাম ভিন্ন। ফুটপাতগুলোতে কম্বল ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছোট ও বড়দের জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। উলের টুপি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা ও হাত মোজা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। শপিংমলগুলোতে কম্বল সাড়ে ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে একটি ৩ থেকে ৪ বছরের বাচ্চার জ্যাকেট ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।

মিরপুর-১০ নম্বর ফুটপাতে শীতবস্ত্র বিক্রি করেন আলামিন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা নরসিংদী থেকে কম্বল কিনে নিয়ে আসি। এবার পণ্যের দাম অনেক চড়া। মানুষের হাতে টাকা পয়সাও খুব কম। বেচাকেনা নাই বললেই চলে।’ 

একই স্থানের আরেক ব্যবসায়ী আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘অন্যদের কেমন বিক্রি হচ্ছে বলতে পারবো না। তবে আমার শীতবস্ত্র যা বিক্রি হচ্ছে তাতেই খুশি। অন্যান্য বারের শীতের তুলনায় এবার বেচাকেনা কম। গত বছর এই সময়ে প্রত্যেকদিন ২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো। এবার সেখানে ১০ হাজার টাকার বস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।’

রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের রিদজানিয়া শো-রুমের বিক্রেতা সজিব। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি থাকায় আমাদের এখানে শীতবস্ত্র কিনতে খুব কম আসছেন ক্রেতারা। সব-শ্রেণীর ক্রেতাদের এখন পছন্দের মার্কেট ফুটপাত। অনেক ক্রেতা গাড়ি থামিয়ে ফুটপাত থেকে কাপড় কিনে থাকেন। আমাদের বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়া, কর্মীদের বেতনসহ যাবতীয় অনেক খরচ রয়েছে। যে-কারণে আমাদের পণ্যের দাম বেশি পড়ে যায়। ফলে আমরা চাইলেও কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারি না। আর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে পণ্য আনতে আমাদের খরচ আগের তুলনায় অনেক বেশি পড়ে যায়। গত বছরেও এই সময়ে আমরা প্রত্যেকদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বস্ত্র বিক্রি করেছি। এখন সেখানে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বস্ত্র বিক্রি করছি। তাও টেনেটুনে।’


এদিকে মিরপুর ৬ ও ১০ নাম্বারের শো-রুমগুলো ঘুরে জানা গেছে, ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত তারা ডিসকাউন্ট দিয়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করছে। তারপরেও শো-রুমগুলোয় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে না। 

মিরপুর-৬ নম্বরে ডিমান্ড শো-রুমের ম্যানেজার সজিব ঢাকা বিজনেস বলেন, ‘আমরা রানিং পণ্যে ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। আর গত বছরের শীতবস্ত্রগুলোতে দিচ্ছি ৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট। তবু ক্রেতাসমাগম খুব একটা নেই। নানা কারণে এবার শীতে গরম কাপড় খুব একটা কেনেননি ক্রেতারা। আর জানুয়ারি মাসে মানুষের নানারকম খরচ এসে চাপে। ফলে শীতবস্ত্র কেনায় খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ক্রেতারা। তবে একেবারে যে বিক্রি হচ্ছে না, তা নয়। টুকটাক তো বিক্রি হচ্ছেই। আমাদের বেশিরভাগ বিক্রেতাই প্রফিটে নেই। লসে আছি। আমাদের এখানে ছোটবড় সবার জ্যাকেট পাওয়া যায়, পাওয়া যায় ব্লেজার, হুডিসহ অন্যান্য শীতবস্ত্রও।’  

অনেক ব্যবসায়ী দুঃখপ্রকাশ করে জানান, এবার যেসব শীতের কাপড় তারা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো যদি বিক্রি করতে না পারেন, তবে গোডাউনে রাখতে হবে। গোডাউনে তেলাপোকা, ছারপোকা খেয়ে অনেক কাপড় নষ্ট করে ফেলবে। বাকি যতটুকু কাপড় ভালো থাকবে সেগুলো আগামী বছরের শীতে বিক্রি করার চেষ্টা করতে হবে।’

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের মার্ভেল হিরোজ স্পাইডার ম্যান শো-রুমের বিক্রয়কর্মী আব্দুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। ক্রেতাদের বেশিরভাগই দামাদামি করে চলে যান। দুপুর পর্যন্ত মাত্র একটি শীতবস্ত্র বিক্রি করেছি। মানুষ এখন পোশাক কেনায় ব্যস্ত না। তারা ব্যস্ত জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় মেটাতে।’

রাজধানীর কাওরান বাজারের ডিআইডি-২ মার্কেটের বিসমিল্লাহ্ বেডিং সেন্টারের লেপ-তোষক বিক্রেতা শাহ-আলম। তিনি ঢাকা বিজনেস বলেন, ‘করোনার পর থেকেই লেপ-তোষকের চাহিদা অনেক কমে গেছে। আর এখন কম্বলের যুগ। কেউ সহজে লেপ বানায় না। আর তোষক বানালেও দিনে একটি বিক্রি করতেও কষ্ট হয়ে যায়। আজ বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত একটিও লেপ বা তোষক বিক্রি করতে পারিনি। ক্রেতা নাই বললেই চলে। সারাদিনে দুই/একজন ক্রেতা আসেন।’

/ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন