টানা এক সপ্তাহ ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলছে চুয়াডাঙ্গায়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে এবং হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে তীব্র শীতের অনুভূতি স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত করে দিচ্ছে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচতে পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা।
গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন শহরের অভিজাত মার্কেটসহ ফুটপাতের দোকানগুলোতে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের সমবায় নিউমার্কেট, আব্দুল্লাহসিটি, প্রিন্সপ্লাজা, পুরাতন গলির মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট এবং ফুটপাত মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, গরম কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি। ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি উচ্চবিত্তরাও রাস্তার পাশের এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। অভিজাত মার্কেটগুলোতে সোয়েটারের দাম বেশি হলেও ফুটপাতের দোকানে একটি সোয়াটারের দাম ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, বাচ্চাদের কাপড় ৬০ থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত, মাফলার ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীত বাড়লেই পরিবারের সবার জন্য শীতের পোশাক কিনতে হয়। অভিজাত মার্কেটগুলোতে পোশাকের যে দাম, তাতে আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। তাই অল্প টাকায় বেশি পোশাক কিনতে ফুটপাতের দোকানগুলো থেকেই কিনতে হয়।
ফুটপাতের কয়েকজন শীতবস্ত্র বিক্রেতা বলেন, এখানে সব বয়সী মানুষের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। শীত বেশি পড়লে ব্যবসা অনেক ভালো হয় এবং শীত কম হলে বেচাকেনা কম হয়। বড়দের জ্যাকেট, সোয়েটার, কোট, বাচ্চাদের কাপড় পাওয়া যায়, সেগুলোর দাম তুলনামূলক একটু কম হয়। কোনো পোশাকের মূল্য নির্দিষ্ট করা থাকে না। দরকষাকষির মাধ্যমে কিনতে হয়। পোশাকের দাম একটু বেশি করে চাওয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। ৫ জানুয়ারি সকাল ৬টায় রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮৭ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪০০ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘এই শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র শীতে হিমেল বাতাসের কারণে বেশি নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে, সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং টাটকা ও গরম খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’
ঢাকা বিজনেস/এইচ