১৯ মে ২০২৪, রবিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

রিলায়েন্স ব্যবসা গুটিয়ে ‘চলে যাচ্ছে না’

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৭ মার্চ, ২০২৩, ০৯:৩৩ পিএম
রিলায়েন্স ব্যবসা গুটিয়ে ‘চলে যাচ্ছে না’


ইন্ডিয়ার রিলায়েন্স এডিএ গ্রুপের কোম্পানি রিলায়েন্স পাওয়ারের কার্যক্রম বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান। সম্প্রতি রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন ও গুজব বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোন কোন বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে পারে, তাই বলে যে রিলায়েন্স পাওয়ার চলে যাবে এমনটি ভাবার কোন কারন নেই। এরকম কোন সম্ভাবনা বর্তমানে নেই। আর ভবিষ্যতে কোম্পানিটি যাবে কি-না তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহৎ শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে রিলায়েন্সের ৭১৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির ৪৯ শতাংশ শেয়ার জাপানের জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতের জায়ান্ট ‘জাপান এনার্জি ফর নিউ এরা’র (জেরা) কাছে বিক্রি করে রিলায়েন্স পাওয়ার। বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড’-এর অধীনে। এটি  রিলায়েন্স পাওয়ার ও জেরা’র যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ভারতে রিলায়েন্স গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসায় সূচক ব্যাপক হারে নিম্নমুখী হতে শুরু করলে একপর্যায়ে বিপুল পরিমাণ ঋণে জড়িয়ে পড়েন গ্রুপটির কর্ণধার অনিল আম্বানি। সেই সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থার ঋণ পরিশোধের চাপে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি। বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চলমান অবস্থায় জেরা’র কাছে ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে রিলায়েন্স পাওয়ার।  এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার বিক্রি করে বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করে রিলায়েন্স এডিএ গ্রুপের কর্ণধার অনিল আম্বানি। মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইপিসি ঠিকাদারের দায়িত্ব পাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশনের কাছে মডিউলটি ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপিতে বিক্রি করে রিলায়েন্স পাওয়ার। এর মাধ্যমে ইউএস এক্সিম ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি রুপির ঋণ পরিশোধ করে রিলায়েন্স পাওয়ার। রিলায়েন্সের মেঘনাঘাট ৭১৮ মেগাওয়াট সিসিপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড’র ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি), মিজোহো ব্যাংক, সুমিতমো মিতসুই ব্যাংকিং করপোরেশন, এমইউএফজি ব্যাংক ও সোসাইতে জেনারেলে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আসবে ৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন্স্যুরেন্সে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বেসরকারি খাতের ঋণ ও জেরার অংশীদারত্বের নিরাপত্তা দেবে।

এ বিষয়ে   রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড’র প্রধান নির্বাহী (সিইও) রঞ্জন লোহারের সঙ্গে তার গুলশান অফিসে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি  রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড ও জেরার এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তানজিয়া শারমিনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।  এই কর্মকর্তা  ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘‘বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে রিলায়েন্স পাওয়ারের ৭১৮ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। গ্যাসের সরবরাহ ঠিক থাকলে চলতি বছরের জুনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসতে পারে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৯ শতাংশ শেয়ার জাপানের ‘জেরা’র কাছে বিক্রি করেছে রিলায়েন্স পাওয়ার। অবশিষ্ট ৫১ শতাংশ শেয়ার জেরা’র কাছে রিলায়েন্স পাওয়ার বিক্রি করবে কি না, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।  রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে ভবিষ্যতে চলে যাবে কি না, সে ব্যাপারেও আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রাইভেট জেনারেশন (আইপিপি/পিপিপি) সেলের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম জিয়াউল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বাংলাদেশে রিলায়েন্স পাওয়ারের নির্মাণাধীন ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ পর্যায়ে। আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে গ্যাসের লাইন প্রকল্পটির সিস্টেমে সংযুক্ত হচ্ছে। তিতাস তাদের গ্যাস দেবে। এখন তিতাস কতটুকু গ্যাস দেবে, সে অনুযায়ী প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। এই কাজ শেষ হলে তারা কনক্লুশন রিপোর্ট দেবে আমাদের কাছে। প্রকল্পটির ফাইনাল রিপোর্ট না দেখে বলতে পারবো না, কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।’

জিয়াউল হক আরও বলেন, ‘প্রকল্পটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরের চিন্তা, রিলায়েন্স বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে চলে যাবে কি না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে রিলায়েন্স ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার খবর আমাদের কাছে নেই। কোম্পানিটি এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো আবেদন করেনি। আর আমাদের না জানিয়ে শেয়ার ট্রান্সফার করতেও পারবে না। আর তারা যদি এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রি করতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদের চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিক্রি করার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। রিলায়েন্স ও জেরা ইচ্ছা করলেই নিজেরা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। তবে আমরা চাই রিলায়েন্স বাংলাদেশে ব্যবসা করুক। বিদ্যুৎ আমাদের দিক। গণমাধ্যমে রিলায়েন্স পাওয়ার ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ গুজব।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন