১৭ জুন ২০২৪, সোমবার



টাঙ্গাইলে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, নতুন আক্রান্ত ১৬

টাঙ্গাইল করেসপন্ডেন্ট || ২৩ জুলাই, ২০২৩, ০২:০৭ পিএম
টাঙ্গাইলে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, নতুন আক্রান্ত ১৬


টাঙ্গাইলে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় রোববার (২৩ জুলাই) সকাল পর্যন্ত জেলায় নতুন করে ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৪২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে, আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সাধারণত ঢাকা বা বড় শহর থেকে আগতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে। আক্রান্তরা জেলা শহরের হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের অন্তত ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এখনই পদক্ষেপ না নিলে আক্রান্তের হার আরও বাড়তে পারে।  

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪২ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১০৭ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৫ জন রোগী। জেলা শহরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে সবার্ধিক ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে নাগরপুর উপজেলায়। টাঙ্গাইল জেনালের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬৫ জন ও সুস্থ হন ৪৭ জন। নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৬ জন ও সুস্থ হন ৩৮ জন, দেলদুয়ারে ভর্তি হয়েছিলেন ২ জন। সখীপুরে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ জন, সুস্থ হন ১ জন। মধুপুরে ভর্তি হয় ২৪ জন এবং সুস্থ হন ২১ জন রোগী। গোপালপুর উপজেলায় ২ জন ভর্তি হন। বেশির ভাগ রোগী জুন ও চলতি জুলাই মাসে আক্রান্ত হন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের তথ্য নিতে সরেজমিনে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  অনেকেই স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। 

এসময় কথা হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের মালঞ্চ গ্রামের আব্দুল করিমের সঙ্গে। তিনি পেশায় কৃষক, জেলার বাইরে যাওয়া হয়নি তার। কীভাবে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন, বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘ঈদের সপ্তাহ খানেক পর হঠাৎ করেই জ্বর আসে। স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ খেলেও জ্বর সারছিল না। তারওপর প্রায় এক সপ্তাহ ঘুম আসছিল না। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এখন অনেকটাই সুস্থ। বাড়িতে আরও ৫ জন থাকলেও তাদের কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি।’

এসময় কথা হয় চিকিৎসাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমাইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে নিজের বাড়িতে চলে আসি। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকা ফিরে যাই। সেখানে যাওয়ার পরের জ্বর হয়। বন্ধুদের সহায়তায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাই। ডেঙ্গু ধরা পড়ে।চিকিৎসার জন্য পরিবারের কাছে ফিরে আসি। টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। এক সপ্তাহের চিকিৎসা শেষে এখন কিছুটা সুস্থ।’

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। আগে রোগীর হিস্টোরি নিলে দেখা যেত ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এখানে আসছে। এখন চিত্র পালটে গেছে। স্থানীয়ভাবে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন শুধু শহর না, গ্রাম থেকেও ডেঙ্গু রোগী আসছে। সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’ 

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদেকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মানুষের ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন এবং জমানো পানি পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে করে ডেঙ্গু বিস্তার করতে না পারে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর মূল লক্ষণগুলো হলো- তীব্র জ্বর, মাথা, শরীর এবং হাড়ে ব্যথা থাকবে।’ এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুতই হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেন তিনি। 

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা রকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতলে ডেঙ্গু শনাক্তে কিট নিশ্চিত করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

নোমান/এম



আরো পড়ুন