১৮ মে ২০২৪, শনিবার



দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে এগোতে হবে নারীকে

নুরজাহান নুর || ২৭ এপ্রিল, ২০২৩, ০২:০৪ পিএম
দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে এগোতে হবে নারীকে


নারীর প্রথম পরিচয় সে মানুষ। সময়ের পরিবর্তনে নারী এখন পৌঁছে গিয়েছে বিমানের ককপিট থেকে পর্বত চূড়ায়। নারী দশভুজা, ঘরে-বাইরে একসঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করেছে মেধায় আর মননে। বিভিন্ন সভায় অনেকেই নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা কতটা বুঝি আমরা। 

নারীর স্বাধীনতা বিঘ্নের একটা কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শৃঙ্খল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো নারীদের কেবল দাসী হিসেবেই জানে। পুরুষের ধারণা, নারীর বাইরে যাওয়া অন্যায়, নারীর স্বাবলম্বী হওয়া অন্যায়, নারীর কর্মক্ষেত্রে যাওয়া অন্যায়। এক কথায়, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো নারীকে তাদের আওতায় রাখতে চায়। তারা চায়, নারী শুধু তাদের আদেশ মানুক। নারী কেন স্বাধীনভাবে চলবে, কেন তারা নিজের ইচ্ছা নিজে পূরণ করবে, কেন তারা পুরুষের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে? 

একুশ শতকে এসেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের স্বাধীনতায় বাধা প্রদানকারী। রাস্তা দিয়ে একজন নারী একা হেঁটে গেলে উত্যক্ত করছে অনেকেই। রাস্তায়, কর্মক্ষেত্রে বা নিজের আপন মানুষের কাছেও নারী নিরাপদ নয়। আর যারা স্বাবলম্বী, কর্মক্ষেত্র থেকে একটু রাত করে বাড়ি ফেরে, তাদের চরিত্রের ওপর আঙ্গুল তুলতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই মনোভাবে নারীর স্বাধীনতা কতটুকু প্রতিফলিত হয়?

আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র, কিন্তু নারীর স্বাধীনতা নেই কোথাও। একটি উন্নয়নশীল দেশে নারীদের স্বাধীনতাই যদি না থাকে, তাহলে উন্নতি কীভাবে হবে? অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোড়ামি আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জন্যই নারীরা এখনো পিছিয়ে। কর্মক্ষেত্রে দিন দিন নারীর অংশগ্রহন বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চায়ন রয়েছে সেই আগের মতোই। এখনো নারীকে শুনতে হয়, তুমি কেন বাইরে কাজ করবে? বিষয়টা এমন যে, নারী শুধু তার স্বামী-সংসারেই একমন একপ্রাণে নিবেদিত থাকবে। নারী কী করবে, না করবে তা ঠিক করে দেবে তার পরিবার।

প্রায়শই একটি কথা শোনা যায় যে, নারীদের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। বিয়ের আগে বাবার আশ্রয় আর বিয়ের পর স্বামীর আশ্রয়। অর্থাৎ, বিয়ের আগে নারী বাবার কথা অনুযায়ী চলবে, আর বিয়ের পর স্বামীর। নিজস্বতা বলে কিছু নেই নারীর। পরিবারে তার স্বাধীনতা নেই। কিন্তু যে ঘর নারীরাই কষ্ট করে সুন্দর রাখে, সেই ঘরের মালিক সে কেন হবে না? কেন নিজের গোছানো ঘরে তাকে পরের মতো থাকতে হবে? এই ধরনের মনোভাব থেকে সমাজ যতদিন বের না হয়ে আসবে, ততদিন নারীর দাসত্ব মোচন হবে না। 

নারীকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্তি নিতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে সব শিকল। নিজের অধিকার আদায়ে নারীর নিজেকেই লড়তে হবে। নারী স্বাধীনতার বিষয়গুলো শুধু বইয়ের পাতায় আবদ্ধ না রেখে তার প্রতিফলনও ঘটাতে হবে।  

প্রতিটি নারীর নিজস্ব পরিচয় থাকা উচিত। স্বাধীন দেশে নিজের মতো করে বাঁচা, স্বাধীন জীবন যাপন করা প্রতিটি নারীর অধিকার। যেদিন নারীরা তার নিজস্ব অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে শিখবে, তাদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্যের বিলোপ সাধিত হবে, অত্যাচার-নির্যাতন থেকে নারী মুক্তি পাবে, আর্থসামাজিক ও উন্নয়ন খাতে নারীর মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে, সেদিন পৃথিবী এক নতুন স্বর্ণযুগে পা দেবে।

লেখক: সংবাদকর্মী



আরো পড়ুন