চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এই ঘটনার পর ইলিয়াস কাঞ্চন ওই বছরের ১ ডিসেম্বর নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামে একটি অরাজনৈতিক সংস্থা গড়ে তোলেন। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সরকারের ওপর মহলকেও বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার এই প্রচেষ্টা দল-মত নির্বিশেষে সবার স্বীকৃতি ও প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে, এখনো নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে। কারণ, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য যেসব কাজ সম্পাদন করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা, প্রশিক্ষিত চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, চালকদের ডোপটেস্ট করা, সড়কে ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়ানো। প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না দেওয়া, ডোপটেস্ট ছাড়া কাউকে গাড়ি চালাতে না দেওয়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া, বেপরোয়া গাড়ি চালালে শাস্তির আওয়তায় আনার মতো অতি জরুরি কাজগুলো সংশ্লিষ্টরা কখনোই করতে রাজি হন না। কারণ এসব কাজ যদি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, অসৎ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাসোহারা বন্ধ হয়ে যাবে। বখরা পাবেন না নীতিহীন-প্রভাবশালীরা। সমাজে যতক্ষণ অসদুপায় থাকবে, ততক্ষণ অসৎ পুলিশ-প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীরা মাসোহারা পাবেন। অসদুপায় যেদিন বন্ধ হয়ে যাবে, সেদিন এসব ব্যক্তির উপরি পাওনার পথও রুদ্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং তারা কখনোই চাইবেন না, সড়ক নিরাপদ হোক। তবু মানবতাবাদীরা আশায় বুক বাঁধেন।
এই নাতিদীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার একটিই উদ্দেশ্য। এই সর্ব-নেতিবাদের যুগে একটি প্রস্তাব করতে চাই। দেশের সড়কগুলো শতভাগ নিরাপদ করার পাশাপাশি সড়কের উভয় পাশে ‘নিরাপদ সাইকেল লেন’ করাও হোক। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে যান্ত্রিক বাহনও। কিন্তু তার সঙ্গে সমান হারে বাড়ছে না সড়ক-মহাসড়ক। বরং কোনো কোনো মহাসড়কের ওপর স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাটের পাশাপাশি গাড়ি পার্কিং চলছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কগুলো কোথাও কোথাও সরু হতে হতে প্রায় কানাগলিতে পর্যবসিত হওয়ার উপক্রম। ফলে যে পথ যান্ত্রিক বাহনে ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টায় পার হওয়ার কথা, যানজটের কবলে পড়ে সেই পথেই কেটে যায় তিন থেকে চার ঘণ্টা। এতে কর্মজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, কমে যায় উৎপাদন। কিন্তু এই পথটুকু যদি যানজটমুক্ত থাকতো, কিংবা বিশালাকৃতির গাড়ির পরিবর্তে দুই চাকার অযান্ত্রিক বাহনে যাওয়া যেতো, তাহলে মাত্র ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টায় কর্মস্থলে পৌঁছানো কোনো ব্যাপার ছিল না। বাস্তবেও তাই ঘটছে। প্রাইভেটকার কিংবা মোটরসাইকেলে যে পথে সময় নষ্ট হচ্ছে তিন থেকে চার ঘণ্টা, ওই পথই দুই চাকার অযান্ত্রিক বাইসাইকেলে পার হতে প্রয়োজন হচ্ছে মাত্র পঞ্চাশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। অথচ চার লেনের প্রশস্ত সড়ক বলি আর দুই লেনের সড়ক বলি, কোথাও বাইসাইকেলের জন্য কোনো লেন নেই। বাইসাইকেলে চালকরা রাস্তার একেবারে বামপাশ ঘেঁষে কখনো কখনো ফুটপাত দিয়ে পার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন সাইকেলচালকরা। রাস্তার বামপাশ ঘেঁষে চলতে গেলে উল্টোমুখী ও পার্কিং করা যানবাহনকে পাশ কেটে যাওয়ার সময় বাইসাইকেলচালককে কিছুটা মাঝ রাস্তার দিকে যেতে হয়। ঠিক ওই সময় দ্রুতগামী যান্ত্রিক বাহন এসে বাইসাইকেল চাপা কিংবা ধাক্কা দিতে পারে, দেয়ও। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া ফুটপাত দিয়ে চলতে গেলে পথচারী ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ‘নীতিকথা’সহ কটূক্তির শিকার হতে হয় সাইক্লিস্টদের। এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলার স্বার্থে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে সড়ক-মহাসড়কে ‘বাইসাইকেল লেন’ জরুরি। কারণগুলো মোটামুটি এমন।
সড়ক-মহাসড়কে যান্ত্রিক বাহন মাত্রই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলে। সেই দুর্ঘটনায় সারাজীবনের পঙ্গুত্ববরণসহ প্রাণহানির আশঙ্কাও সিংহভাগ থাকে। ঘটেও তাই। যানজট এড়িয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছাড়াই স্বল্পদূরত্বের পথে বাইসাইকেল হলো আদর্শ বাহন। সড়ক-মহাসড়কে এই অযান্ত্রিক বাহনটির জন্য খুব বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। বাইসাইকেলে চলার জন্য মাত্র তিন ফুট জায়গায়ই যথেষ্ট। আর প্রয়োজন কেবল ডিভাইডার দিয়ে বিভাজিত একটি লেনের। যে লেনে বাইসাইকেল ছাড়া কোনো যান্ত্রিক বাহন চলতে পারবে না। আর একটি কথা, বাইসাইকেলকে কোনো যান্ত্রিক বাহন ধাক্কা কিংবা চাপ না দিলে এই বাহনটিতে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ। সুতরাং একটি নিরাপদ লেন হলে এই বাহনের আরোহী দ্রুত ও দুর্ঘটনামুক্ত অবস্থায় তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে নামমাত্র সাইকেল লেন আছে। ওই লেনে সাইকেল চালানোর কোনো ফুসরত নেই। সেই লেন সারাক্ষণ মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটো ও মোটলসাইকেলের দখলে থাকে। ফলে বাইসাইকেল চালককে নিরুপায় হয়ে রাস্তার মাঝ বরাবর চলতে হয়। আর তখনই শুনতে হয় প্রাইভেটকারচালক, রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোচালকের কটুকথা। তবে, বাইসাইকেলের জন্য নিরাপদ লেন চালু আছে ঢাকা ক্যানটনমেন্টের ভেতরে। ওই লেনে কোনো যান্ত্রিক বাহন চলার সাহসই পায় না। দেশের সেনাবাহিনী যেমন সুশৃঙ্খল,তেমনি তাদের পরিচালিত সাধারণ লেন, বাইসাইকেল লেনেও সেই শৃঙ্খলার স্বাক্ষর রয়েছে। ক্যানটনমেন্ট এলাকায় যদি বাইসাইকেল লেন থাকতে পারে, সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে থাকতে সমস্যা কোথায়?
এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠছে—তাহলে যেখানে সড়কই নিরাপদ করে তোলা সম্ভব হয়নি, সেখানে নিরাপদ বাইসাইকেল লেন কী করে সম্ভব?
বাইসাইকেলের জন্য প্রধান আতঙ্ক হলো, উল্টোদিক ও পেছন থেকে আসা অন্যান্য বাহন। বাইসাইকেল রাস্তার বাম পাশে চলুক বা একেবারে কিনার ঘেঁষেই চলুক, রিকশা, সিএনজিচালিত অটো ও প্রাইভেটকার-চালকরা পেছন থেকে অকারণেও অনবরত বেল-হর্ন দেবেনই। কেবল বেল-হর্ন দেওয়ার মধ্যে তাদের কর্ম সীমাবদ্ধ থাকে না। তারা বাইসাইকেলঘেঁষে নিজেদের যান্ত্রিক বাহনটি চালান। পরন্তু তীক্ষ্ণস্বরে চিৎকার করে বাইসাইকেল-চালককে উপদেশসমেত দিক-নির্দেশনা দেন। তাদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে সেকেন্ড মাত্র দেরি হলে অশ্রাব্যভাষা ব্যবহারেও তার কুণ্ঠিত হন না। অনেক সময় তারা এমন আচরণ করেন, যেন খোদ ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট। যেন তাদের কথামতো না চললে এখনই মোটরযান আইনে মামলা ঠুকে দেবেন।
এই শ্রেণির চালকদের আক্রমণ থেকে বাইসাইকেল আরোহীকে নিরাপদ রাখার জন্য দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমত, উল্টোদিক থেকে যানবাহন চলা নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পেছন থেকে আসা বাহনটিকে বাইসাইকেল থেকে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলতে হবে। বাইসাইকেল লেনবিহীন উন্মুক্ত রাস্তাকে বাইসাইকেল চালকদের জন্য নিরাপদ করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার আলাদা লেন তৈরি করা। এই লেনে বাইসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। কোনো যান্ত্রিক বাহন এই লেনে চললে কিংবা ওই লেনে উল্টোদিক থেকে কোনো বাহন এলে জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করতে হবে। সাইকেল লেনে অন্য কোনো বাহন চললে তার চালক ও মালিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শাস্তি হিসেবে মালিক দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং চালককে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান যুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়া এই অপরাধে কেউ গ্রেফতার হলে মালিককে ছয়মাসের মধ্যে জামিন না দেওয়া ও চালককে তিন মাসের মধ্যে জামিন না দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। প্রস্তাবটি আপাতত নিষ্ঠুরতার সামিল মনে হলেও জাতিকে সভ্য করে তোলার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র আর হতে পারে না। এই আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হলে সড়কে অন্যান্য দুর্ঘটনাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে আসবে। ধীরে ধীরে সড়কে মৃত্যুর হার শূন্যেও নেমে আসতে পারে।
সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় সারাদিনই লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এই দীর্ঘ যানজটের ক্লান্তিকর যাত্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্বল্পদূরত্বে বাইসাইকেলই আদর্শ বাহন। যান্ত্রিক বাহন বাস, অটো, টেম্পু, লেগুনায় দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকার চেয়ে রাস্তার কিনারঘেঁষে আলাদা লেনে বাইসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছানো অনেক সহজ। নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পেশাজীবীদের কর্মস্থলে দ্রুত নিরাপদে পৌঁছানোর সাশ্রয়ী, স্বাস্থ্যকর একমাত্র বাহন হলো বাইসাইকেল। ফলে এসব শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীরা সময়মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছে স্ব-স্ব পারিবারিক-সাংগঠনিক-পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
উল্লিখিত কারণগুলো বিবেচনা করে সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ বাইসাইকেল লেন তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে- যতই যুক্তি দেওয়া হোক না কেন, সরকার কি আদৌ বাইসাইকেলের জন্য কোনো লেন তৈরি করবে? এর উত্তরে বলা যায়- এ দেশে এমনি এমনি কেউ কারো জন্য কিছু করে না। দীর্ঘদিনের দাবি-আন্দোলন চালিয়েও অনেক সময় ন্যায্য পাওনা আদায় করা সম্ভব হয় না। সেখানে সাইকেল লেনের মতো দরিদ্রদের চাওয়া কোনো দাবি সহজে পূরণ হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। তাহলে উপায়? উপায় অবশ্যই আছে। ‘নিরাপদ বাইসাইকেল লেন’ চালু করতে আগ্রহীদের কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। সেগুলো হলো:
এই নিবন্ধের শুরুতে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের কথা বলেছিলাম। এবার সেই প্রসঙ্গে আসি। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলন শুরু করেছিলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আজ সেই আন্দোলন জাতীয় আন্দোলন ও কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সড়ক আজও নিরাপদ হয়নি। কেন হয়নি, তার কারণও সবার জানা। যথাযথ আইন ও আইনের প্রয়োগের অভাবে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি। বলা যায়, সমাজের প্রভাবশালীরাই সড়ককে নিরাপদ করে তুলতে চান না। তারাই চান, সড়কে দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই তারা অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত চালকের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামান। চালকদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন না। মানবিক কোনো পাঠ দেন না তাদের। করেন না কোনো ডোপটেস্টও। তাই চালকরা নির্ঘুম থাকার জন্য করেন নেশা। সেই নেশার ঘোরে গাড়ি চালান বেপরোয়া গতিতে। দুর্ঘটনা তো ঘটবেই। ঘটেও তাই। এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠছে—তাহলে যেখানে সড়কই নিরাপদ করে তোলা সম্ভব হয়নি, সেখানে নিরাপদ বাইসাইকেল লেন কী করে সম্ভব?
সম্ভব। আগেই বলেছি, এদেশে এমনি এমনি কিছু পাওয়া যায় না। দাবি যত যৌক্তিক-বাস্তবনিষ্ঠই হোক, কিছু লোক উপহাস করবেই। কিছু লোক দাবির বিপক্ষে খোঁড়া যুক্তি তুলে ধরবে। এই শ্রেণী মূলত নিষ্ঠুর-মানবতাবিরোধী। এই শ্রেণীকে উপেক্ষা করে ‘নিরাপদ বাইসাইকেল লেন’-এর দাবিতে প্রথমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষত যারা সাইক্লিস্ট, তাদের প্রথম কাজ হবে- গণমানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছানো যে, আলাদা ও নিরাপদ বাইসাইকেল লেন হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না। একজন মানুষ, একটি বাহন। একজন মানুষ রাস্তায় যেটুকু জায়গা দখল করবে, একটি বাইসাইকেলও তার বেশি নেবে না। সুতরাং বাইসাইকেলের জন্য রাস্তা প্রশস্তও করতে হবে না। কেবল বিদ্যমান সড়ক-মহাসড়কের ডিভাইডার দিয়ে লেনকে আলাদা করে দিতে হবে।
সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘নিরাপদ বাইসাইকেল লেন’-এর দাবিতে লিফলেট-হ্যান্ডবিল প্রকাশ করে সেগুলো সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। এসব লিফলেট-হ্যান্ডবিলে নিরাপদ বাইসাইকেল লেনের জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন, তার বিবরণসহ যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হবে। এছাড়া সময়-সুযোগ মতো সভা-সমাবেশ-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। সেখানে সাইক্লিস্ট, সড়ক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিমন্ত্রণ জানাতে হবে। তাদের উপিস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে আয়োজকদের। এরপর সেখানে বাইসাইকেল লেনের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে ব্যাখ্যা করতে হবে। এতেও সহজে কাজ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে মাঝেমাঝে স্মারকলিপি দেওয়া যেতে পারে। সেই স্মারকলিপিতে নিরাপদ বাইসাইকেল লেনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা যেতে পারে।
কেবল সভা-সমাবেশ-সেমিনার-স্মারকলিপিতে এই দাবি সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পত্র-পত্রিকা-নিউজ পোর্টালে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কলাম লিখিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। টিভি-টকশোতেও বিষয়টির অবতারণা করতে হবে। বিশেষজ্ঞ আলোচক দিয়ে সেখানে যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করাতে হবে।
এতসবের পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যদি কর্ণপাত না করে, শেষপর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। অতীতেও দেখা গেছে কিছু কিছু দাবি সরকার বা কর্তৃপক্ষ সহজে পূরণ করতে চায় না। তখন ভুক্তভোগীরা নিরুপায় হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত নির্দেশ দিলে ধীরে সরকারের ওপর মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়। একসময় দাবির পক্ষের বাস্তবতা তারাও উপলব্ধি করতে বাধ্য হন। সাইক্লিস্টরা আসুন, এখন থেকেই ‘নিরাপদ সাইকেল লেন’-এর দাবিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। পরিবেশবান্ধব বাহন চলাচল নিশ্চিতে কর্মবীর হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করি।