১৮ মে ২০২৪, শনিবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার || ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৮:০১ পিএম
সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা


দেশের চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধে টাকার সরবরাহ কমানোর পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়িয়ে নতুন মুদ্রনীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। 

গভর্নর বলেন, ‘আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।’ তিনি   বলেন, ‘নতুন সিদ্ধান্ত মতে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের দিকে হাঁটছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বা এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।

নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সংকটে পড়া ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে কিছুটা ব্যয় কমবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (ডিসেম্বর পর্যন্ত) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আলোচিত সময়ে মূল্যস্ফীতির মতো ঋণ প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি। গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ কম। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৩ শতাংশে নেমেছে। ব্রড মানি বা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘৫২ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে কোনও ব্যাংক বন্ধ হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনও ব্যাংক বন্ধ হবে না।’ ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখার ক্ষেত্রে মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনাস্থা তৈরি হওয়ার মতো কোনও কারণ নেই। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা নেই।’

গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্বল ব্যাংক হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল বর্তমানে তাদের অবস্থা কী, জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘যেসব ব্যাংক দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে সেগুলো আর দুর্বলতার দিকে ফিরে যায়নি। এর আগে, বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রাধান্য দিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।’

বার বার আশ্বাস দিলেও এবারের মুদ্রানীতিতে কিছুই নেই দেশের পুঁজিবাজারের জন্য। আর এর প্রভাব বাজারের জন্য কেমন হবে এই প্রশ্নে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ওপর দায় চাপালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা।

ঢাকা বিজনেস/তারেক/এনই/



আরো পড়ুন