২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



মানুষ মানুষের জন্য...

নুরজাহান নুর || ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম
মানুষ মানুষের জন্য... নুরজাহান নুর


পৃথিবীর সবচেয়ে স্বপ্নবাজ মানুষ হয় মা। একজন কন্যাসন্তান শিশুকাল থেকেই অবচেতন মনে মাতৃত্বকে ধারণ করে বেড়ে ওঠে। পুতুলকে ঘুম পাড়ায়, ঘুমপাড়ানি গান শোনায়। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করে সে তার প্রকৃত মাতৃরূপের প্রকাশ করতে চায়। মা হওয়া মানে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম সময়কে অতিক্রম করা।

গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, স্তন্যদানসহ অসহনীয় কিছু কষ্ট সহ্য করতে হয় মাতৃকূলকে। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে যুগে-যুগে নারীরা মধুর এ কষ্ট স্বীকার করে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও তাদের এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। 

গর্ভধারণ ও ১০ মাস ১০ দিন গর্ভের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নিয়েই নারী জাতির সৃষ্টি। কিন্তু নারী বা একজন মা’কে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মা’কে কতটুকু অগ্রাধিকার দেওয়া হতো? বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বাবার নাম ছিল জরুরি। শুধু মায়ের অভিভাবকত্বে একটি শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো অসম্ভব বিষয় ছিল। বাবাই ছিল সর্বেসর্বা। এমনকি, সন্তানের জন্য নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তে মায়ের অভিমত নেওয়ার কথাও কেউ ভাবতো না। 

২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে পারেনি। আর এই কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ওই শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। বাবা চলে যাওয়ার পর যেই মা সন্তানকে আদর-স্নেহে বড় করেছেন, প্রবেশপত্রে তার নাম কেনো যথেষ্ট নয়? ওই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নষ্ট করার জন্য দায়ী আমাদের এই সমাজ, রাষ্ট্র ও আইন।  

সময় বদলেছে।  সম্প্রতি হাইকোর্ট সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মা-কে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পিতৃপরিচয়হীন সন্তানরা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন। হাইকোর্টের এই নির্দেশ নারীদের এগিয়ে যাওয়ার যুগান্তকারী অর্জন ও অনুপ্রেরণা। কোনো সন্তানকে এখন আর পিতৃপরিচয় না থাকার কারণে অপমানিত হতে হবে না, মাথা নিচু করে চলার প্রয়োজন পড়বে না। শুধু মায়ের অভিভাবকত্বেই মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার শক্তি পাবে। অবদান রাখবে দেশ ও দশের কল্যাণে।

লেখক: সংবাদকর্মী



আরো পড়ুন