১৯ মে ২০২৪, রবিবার



রাজধানীর পশুবর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ১৯ হাজার কর্মী

স্টাফ রিপোর্টার || ২৭ জুন, ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
রাজধানীর পশুবর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ১৯ হাজার কর্মী


কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এজন্য প্রায় ১৯ হাজার ২৪৪ পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত ও নির্ধারিত সময়েই বর্জ্য অপসারণে হটলাইন খোলা থাকবে এবং বর্জ্য অপসারণের প্রায় ১১ লাখ প্লাস্টিক ও পলিব্যাগ সরবরাহ করবে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ। 

সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন দুই মেয়র। আসন্ন কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৫ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশু থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‌‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকায় কোরবানির পশুর হাট এবং কোরবানির পশুর সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সরেজমিনে তদারকির লক্ষ্যে ডিএসসিসির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবহন বিভাগ ও যান্ত্রিক বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কোরবানির বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ৩৫৭টি বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি (পে-লোডার- ১০টি, বেকহো-লোডার- ৪টি, স্কিড লোডার-১টি, টায়ার ডোজার-৭টি, চেইন ডোজার- ৩টি, ড্রাম্প ট্রাক-৯৬ টি, কম্পেক্টর- ৫৩টি পানিবাহী গাড়ি-৯টি ইত্যাদি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত হাতগাড়ি, বেলচা, কাটা ও টুকরিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা (রাজউক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর) থেকে সৌজন্যমূলক ২৪টি ভারী যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে।’

দক্ষিণ সিটির এই কর্মকর্তা জানান, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী, ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়োজিত প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার কর্মী এবং পশুর হাটের জন্য ৬৩০ জন বাহিরের শ্রমিকসহ সর্বমোট প্রায় ৮ হাজার ৯৩০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবেন। পশুর হাটের বর্জ্য, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং রাস্তা ধৌতকরণ পরবর্তী পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক (স্যাভলন) ও ৩২ হাজার ৫০০ কেজি বা ১ হাজার ৩০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।’ 

সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানীর বর্জ্য অপসারনের লক্ষ্যে কোরবানি দাতাদের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহের লক্ষ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার চটের ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। পশুর হাটে পশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে অসুস্থ পশু নির্বাচন এবং চিকিৎসা প্রদানে প্রতিটি পশুর হাটের জন্য একটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম শুরু হবে।

ইতোমধ্যে ১১০ গ্যালন (৫ লিটার) স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন শিমুল বলেন, ‘কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য ২ লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পরে ও জুমা’র খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটির নিজস্ব ২ লাখ ১১৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়সহ সর্বমোট ১০ হাজার ৩১৪ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে অঞ্চল ভিত্তিক বর্তমান জনবলের সংখ্যা- ২, হাজার ১১৭, ৩৬টি ওয়ার্ডে পিডব্লিউসিএসপির কর্মী ৪ হাজার ৫০০ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়- ২ হাজার ৬৬৩ জন, স্পেশাল ক্লিনার ৪২২ জন এবং ওয়ার্ড ভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ কাজে ভাড়ায় নিয়োজিত পিকআপের কর্মী ৬১২ জন।

তিনি জানান, জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটসমুহ দ্রুত পরিস্কারের লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক/খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৬১৫টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে। 

ল্যান্ডফিলে ঈদুল-আজহার বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৬টি এস্কেভেটর, ৪টি চেইন ডোজার, ২টি ট্যায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার নিয়োজিত রাখা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হবে।

শিমুল জানান, বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ সম্মানিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে জনগনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- পলিব্যাগ ৯ লাখ পিস, বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ ১ লাখ পিস, ব্লিচিং পাউডার ২ হাজার ৪০০ বস্তা (৬৭ টন), স্যাভলন ৯০০ ক্যান (প্রতি ক্যান ৫ লিটার), টুকরি ৭ হাজারটি, ফিনাইল ১ হাজার ৬০০ লিটার (প্রতি ক্যান ১ লিটার)।  

তিনি জানান, কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবন নীচ তলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর: +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।

কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের তদারকি করার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান করার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন