২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

বেকারত্ব দূর করতে বিনিয়োগ-প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১২ মে, ২০২৩, ১১:০৫ এএম
বেকারত্ব দূর করতে বিনিয়োগ-প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে


দেশের ক্রমাগত বেকারত্বের হার বৃদ্ধিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। একইসঙ্গে তারা ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সরবরাহ কমে যাওয়াকেও এর জন্য দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বেকারত্বের হার কমাতে হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।   

অর্থনীতিবিদরা জানান, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। এছাড়া, কমেছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির হারও। প্রতিবছর কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।  কিন্তু সে অনুপাতে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।  তাদের মতে, এই বেকার জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। তবে, কারিগরি জ্ঞানের অভাবে সে অনুপাতে দক্ষ শ্রমিক মিলছে না। আবার সেখানে অদক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানও  হচ্ছে না। ফলে বেকারের হার বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে তাদের প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি জ্ঞান দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, উচ্চ বেকারত্ব অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ায়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি করে। বেকারত্ব অনেক কারণে উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কর্মজীবী মানুষ উৎপাদনশীল। যখন তারা কাজ করে না, তখন সমস্ত অর্থনীতি কম কার্যকর হয়। বেকাররা তাদের জমানো টাকায় জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। তাই তারা আরও দরিদ্র হয়। এটি তারল্য সীমিত করে। শ্রমের গতিশীলতাকে সীমাবদ্ধ করে। এতে আত্মসম্মান নষ্ট হয়; যা সামাজিক স্থানচ্যুতি, অস্থিতিশীলতা ও সংঘাতকে প্ররোচিত করে, উসকে দেয়।     

অর্থনীতিবিদরা জানান, বর্তমানে অসংখ্য তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ না নিয়ে অথবা অল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। তারা সংশ্লিষ্ট কাজে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত না হওয়ায় সেখানে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেন না। অনেকেই দেশে চলে আসেন। তাদের স্ব-স্ব কাজে প্রশিক্ষণ দিতে হবে; যা দিয়ে তারা দেশের অভ্যন্তরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি বিদেশে গিয়েও কাজ করতে পারেন। বেশি বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাতে পারেন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ. বি. মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বেকারত্ব দূরীকরণে ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে যে সব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে। বিশেষ করে দুর্নীতি, করব্যবস্থায় জটিলতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পরিবহণ সমস্যাসহ অন্যান্য জটিলতা দূর করতে হবে। এসব সমস্যা দূর না করে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে  না।’

অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ই-কমার্স বিজনেস উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের খরচ কমাতে হবে। উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে প্রণোদনা দিতে হবে। এসব করা গেলে কর্মসংস্থান বাড়বে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সেই সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা একেএম আক্তার হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমাদের টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেকারত্বের জনশুমারি করেছে। জনশুমারিতে তারা বেকারত্বের সংখ্যা ও হার বের করেছে।’  

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন