১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বেড়েছে লবণ উৎপাদন, তবুও চিন্তায় চাষিরা

তাফহীমুল আনাম,কক্সবাজার || ২৯ এপ্রিল, ২০২৩, ০৩:০৪ পিএম
বেড়েছে লবণ উৎপাদন, তবুও চিন্তায় চাষিরা


দেশব্যাপী চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে বেড়েছে লবণের চাষ। কক্সাবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, টেকনাফ, সদরের ভারুয়াখালী, খুরুস্কুল, চৌফলদণ্ডী ও ঈদগাঁওতে মাঠে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।  ৪৫ হাজারের বেশি প্রান্তিক লবণচাষির মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।  তবে কেউ কেউ হতাশার কথাও শুনিয়েছেন।  

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য বলছে, কক্সবাজারের ৬০ হাজার একরের বেশি মাঠে এখন প্রতিদিন ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। আগামী এক মাস এই অবস্থা চলমান থাকলে ৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ (প্রতিদিন ৩৫ হাজার টন ) উৎপাদন সম্ভব হবে। চলতি মৌসুমে আগের চার মাসে উৎপাদন হয়েছে আরও ১৬ লাখ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে দেশের ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণের বার্ষিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। অবশ্য এর মধ্যে কালবৈশাখীর তাণ্ডব কিংবা ঝড়-বৃষ্টি হলে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। 

এক দিন বৃষ্টি হলে প্রায় এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। তখন ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে যাবে। 


বিসিক-সূত্র বলছে, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৫ মাস) কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।

সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালী, সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, পিএমখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন চলছে পুরোদমে । চাষিরা মাঠের ওপর কালো ত্রিপল বিছিয়ে সমুদ্রের লোনাপানি জমিয়ে রাখছেন। তপ্ত রোদে শুকিয়ে সেই লোনাপানি লবণে পরিণত হচ্ছে। কিছু চাষি মাঠে উৎপাদিত লবণ গর্তে ঢুকিয়ে (মজুত) রাখছেন। কেউ কেউ বস্তায় ভরে লবণ বাড়ির আঙিনায় স্তূপ করে রাখছেন। কেউ গুদামে মজুত করছেন। তবে এতো কষ্টের পরও চাষিরা লবণের সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সিন্ডিকেট কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে চাষিদের কষ্টের টাকা। 

সদরের ভারুয়াখালীর লবণ চাষি তানভীর উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণের হাওয়া ও তীব্র দাবদাহে লবণের উৎপাদন বেড়েছে। এই তাপমাত্রায় আমরা প্রতিদিন লবণ তুলছে পারছি। তবে অনেক কষ্ট হয় রোদে।’

মহেশখালীর লবণচাষী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘এখন প্রখর রোদ। এই একদিন আমাদের অন্যান্য ১০ দিনের সমান। গরমে অনেক কষ্ট হয় লবণ উৎপাদন করতে। এত কষ্টের পরেও আমরা শ্রমের মূল্য পাই না। লবণের উৎপাদন খরচের সঙ্গে আয়ের হিসাব মিলছে না। লবণের দর ওঠা-নামার কারণে প্রতিবছরই ভুক্তভোগী হয় আমাদের মতো নিরীহ চাষিরা। এক শ্রেণির সিন্ডিকেট আমাদের রক্ত চুষে খাচ্ছে।’

লবণ চাষি রুহুল আমিন বলেন , ‘২ এপ্রিলের ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিতে টানা সাত দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। ১০ এপ্রিল থেকে পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এর আগে ২০ মার্চের ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিতে সাত দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি চলতি মাসে নাকি ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তেমন হলে লবণ উৎপাদনে আবারও পিছিয়ে পড়তে হবে।’ 


বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে লবণের দাম একেক সময় একেক রকম নির্ধারণ করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে চাষিরা প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেন ২৫০-৩০০ টাকায়, মার্চে ৩২০-৩৭০ টাকায়, আর এখন ৪১০-৪২০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘চাষিদের দাবি ছিল, মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণের দাম ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা।’ 

লবণ শিল্পের উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মন্জুর আলম জানান, ‘গত মৌসুমে এ সময়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। এবার তীব্র দাবদাহের ফলে টানা তিন দিন ধরে প্রতিদিন ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। যা মৌসুমের সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিনের তথ্য অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪২০ টাকায়। গড়ে ৪০০ টাকা ধরলে দৈনিক উৎপাদিত ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণের দাম আসে ৩৫ কোটি টাকা।’

 আগামী ১৫ মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের মৌসুম উল্লেখ করে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘প্রতিবছর এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কালবৈশাখী, বৃষ্টি দেখা দেয়। এতে সাত-আট দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। এবারও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

 ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন