২৯ জুন ২০২৪, শনিবার



এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু: চালক-যাত্রী বলছেন ‘মুক্তি’

হাকিম মাহি || ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৩:০৯ পিএম
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু: চালক-যাত্রী বলছেন ‘মুক্তি’


সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চলছে গাড়ি।  রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টায় যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চালক-যাত্রীরা বলছেন, জ্যামি মুক্তির প্রথম ধাপ পেরলো ঢাকা।  

এর আগে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে  এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, প্রথম দফায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এই অংশের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার।


সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুভূতি শেয়ার করছেন যাত্রীরা

এ উড়ালসড়কে কাওলা, কুড়িল, মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও ও ফার্মগেটে রয়েছে টোলপ্লাজা। ইতোমধ্যে টোল প্লাজা ও ওঠা-নামার র‌্যাম্পের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সময় লাগছে ১২ থেকে ১৫ মিনিট।

একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীরা চলাচল করতে পারবেন না। পাশাপাশি এখনই চলতে দেওয়া হচ্ছে না মোটরসাইকেল। এছাড়া গাড়ি নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়ানো ও ছবি তোলা নিষেধ করা হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করতে হলে দিতে হবে টোল। এজন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে যানবাহনকে ৪ শ্রেণিতে ভাগ করে। সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৪ শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে গাড়ি, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম), হালকা ট্রাকের (তিন টনের কম) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা, সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা, মাঝারি ধরনের ট্রাকের (ছয় চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা, আর বড় ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) ক্ষেত্রে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা।

কাওলা - ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ‍উঠছে গাড়ি

উত্তরায় থাকেন সেকান্দার আলী। তিনি ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আজ তিনি অফিসের গাড়িতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে নেমেছেন। তিনি বলেন, ‌‘প্রতিদিন আমার এই রোডে সর্বনিম্ন ২ ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো। এখন আর হবে না। পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবো।’

প্রাইভেটকারের যাত্রী রিফাত বলেন, ‘ঢাকার জ্যামে মাঝেমধ্যে মনে হতো শহর ছেড়ে চলে যাই। আজ আর সেটা মনে হচ্ছে না। একটু হলেও শান্তিতে আসতে পেরেছি। তবে, জ্যাম কিন্তু কমেনি এখনো। জ্যামি মুক্তির প্রথম ধাপ পেরোলাম আমরা। কর্তৃপক্ষের আরও ভাবতে হবে।’

প্রাইভেটকার চালক আকবর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তবে, জ্যাম পুরোপুরি কাটাতে প্রতিটি সিগন্যাল জ্যামমুক্ত করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি সিগন্যালে বাইপাস বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানাতে হবে, যেন সিগন্যালে বসে থাকতে না হয়। বড় ফ্লাইওভারগুলো দূরের যাত্রীদের জন্য নিশ্চিয়ই ভালো। কিন্তু শহরের ভেতরের যাত্রীদের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। সরকারের কাছে এই আবেদন জানাই।’

আরেকজন প্রাইভেটকার চালক আরিফ বলেন, ‘আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। প্রতিদিন জ্যাম ঠেলে আসা অসহনীয় কষ্ট হতো। এখন মুক্তি পাবো। তবে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোটা হলে আমি শতভাগ জ্যাম মুক্ত হবো।’    


ঢাকা বিজনেসের সঙ্গে কথা বলছেন প্রাইভেটকারযাত্রী

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের মধ্যে পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার) কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। একযুগ পর ২০২৩ সালে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত উদ্বোধন করা হলো। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালের জুনে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পের শুরুতে ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও কয়েক দফায় তা বেড়ে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এ প্রকল্পে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিডেট ৫১ শতাংশ, চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ৩৪ শতাংশ এবং সিনো হাইড্রো কোম্পানি লিমিটেড ১৫ শতাংশের অংশীদার। জানা গেছে, এসব কোম্পানি আগামী ২৫ বছর টোল আদায় করবে। পরে পুরোপুরি সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন