০২ জুন ২০২৪, রবিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

মুড়িকাটা পেঁয়াজের দামে হতাশ চাষিরা

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা || ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৪:৪২ এএম
মুড়িকাটা পেঁয়াজের দামে হতাশ চাষিরা


আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নিয়ে হতাশায় ভুগছেন পাবনার চাষিরা। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে তারা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে গত কয়েক বছরে ভালো লাভ পেলেও এবার দাম কম। এ অঞ্চলে এটি ‌‘মূলকাটা’ পেঁয়াজ হিসেবে পরিচিত। চলতি বছর প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দরে। গত বছর এর দাম ছিল ১২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। চাষিদের দাবি, এ বছর বীজ, সার ও কীটনাশক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। কম দামে কিনলে তেমন লোকসান হতো না। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকরা লাভবান হবেন।

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, ৪০ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় মুড়িকাটা পেঁয়াজে আবাদ খরচ হয়েছে। উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়। ফলে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৪২ হাজার টাকার। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বেশি দামে বীজ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে হচ্ছে।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আব্দুর রহিম বলেন, ‘প্রতিবছর ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। এর বড় অংশ মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে চাষ করে প্রায় দেড় হাজার মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ পেয়েছি বিঘাপ্রতি ৭০ মণ। এখন এর আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে ৪২ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।’ এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের স্বার্থে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানান তিনি।

সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক সোলেমান হোসেন বলেন, ‘গত বছর এই সময় এক মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। এবার এর দাম ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা।’

চাষিরা বলছেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেও এখনো পাবনার বাজারে পুরনো পেঁয়াজ রয়ে গেছে। নতুন পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নিয়ে যখন হতাশ পাবনার চাষিরা, তখন চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

পেঁয়াজ চাষি আব্দুল মোমেন খান বলেন, ‘গত বছর ঘরে বীজ ছিল। এ বছর বীজ কিনতে হয়েছে। গত বছর এক কেজি বীজ ৫ হাজার টাকার মধ্যে কেনা গেলেও এ বছর স্থানীয় জাতের বীজ কিনতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড পেঁয়াজের বীজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকার বেশি। এত টাকা দিয়ে বীজ কিনে পেঁয়াজ চাষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। বীজের চড়া দামের পাশাপাশি সেচ, সার, কীটনাশকের দামও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজ চাষের খরচ বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি হচ্ছে। তাই অতিরিক্ত খরচ করে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যপূরণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চাষিরা।’

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘এ বছর পাবনায় ৮ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ দশমিক শূন্য ৭ লাখ টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়েছে। চলবে জানুয়ারি পর্যন্ত। কৃষকের ঘরে প্রায় ১৫ শতাংশ পুরনো পেঁয়াজ থাকায় বাজারে পুরনো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।’ মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঘরে তোলার পাশাপাশি কৃষকরা চারা পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এ বছর পাবনায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৬ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন চারা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপ-পরিচালক ড. সাইফুল আলম বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজের আশানুরূপ দাম না পাওয়া কিংবা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যপূরণ নিয়ে কোনো সংশয় তৈরি হতে পারে না, এমন দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে দেশে পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। এ বছরও তাই হবে। পেঁয়াজ আবাদ করে কৃষক লাভবান হবেন।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন