১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ: খুলবে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৭:৪২ পিএম
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ: খুলবে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত রেলপথ তৈরির কাজ অর্ধেকেরও বেশি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প চালু হলে রেলপথেও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের দুয়ার খুলবে বলে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোরও রেল যোগাযোগ চালু হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলপথের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।   ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের  এই রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশ বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেড় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। তবে, কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় মেয়াদ ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু প্রথম দফার বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি কাজ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ে প্রকল্পের। তাতেও কাজ শেষ হয়নি। সবশেষে চতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই বর্ধিত মেয়াদেই কাজ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুন মাসে।  

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে রেলপথের জন্য আনা পাথর, স্লিপার ও রেললাইন রাখা হয়েছে। চলছে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবন তৈরি কাজ। যা এখনো প্রায় অর্ধেক বাকি। প্রকল্পের ১৬টি কালভার্টের কাজ প্রায় শেষ। তবে আখাউড়ার মনিয়ন্দ থেকে শিবনগর পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ চলছে। 

টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কান্ট্রি হেড (বাংলাদেশ) শরৎ শর্মা বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। প্রকল্পের কাজের মালামালও ভারত থেকে আনা যায়নি।  করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মালামাল আনার অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে। তবে এখন এই প্রকল্পের সব অনিশ্চিয়তা কেটে গেছে। আমাদের এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। এখন শুধু মাটির কাজ, বিল্ডিং ও কালভার্টগুলোর ফিনিশিং কাজ চলছে। আশা করছি, বর্ধিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আখাউড়া-আগরতলা রেলথটি চালু চলে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের দুয়ার যেমন খুলবে, তেমনি আগরতলার সঙ্গে কমবে কলকাতার দূরত্ব। বর্তমানে রেলপথে আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। যা পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩৮ ঘণ্টার মতো। তবে আখাউড়া হয়ে কোলকাতা যেতে আগরতলাবাসীকে পাড়ি দিতে হবে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে। এছাড়া, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আজিজুল হক বলেন, ‘পণ্যের দাম অনেকটাই পরিবহন খরচের ওপর নির্ভর করে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের দামও বাড়ে। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ চালু হলে ট্রেনে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কম হবে। এর ফলে আমদানি পণ্য দেশের বাজারে কম দামে সরবরাহ করা যাবে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬৫ ভাগ হয়েছে। আশা করি, আগামী জুনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এই রেলপথ দিয়ে আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। পাশাপাশি রেলপথটি দিয়ে পণ্য পরিবহন হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন