১৭ জুন ২০২৪, সোমবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

একদিনেই ১০ লাখ টাকা

আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৯:০৯ পিএম
একদিনেই ১০ লাখ টাকা


চলতি আমন মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাটগুলোয় জমে উঠেছে চারা বিক্রি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কেনাবেচা। সদর উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নন্দনপুরে  চারা বিক্রির বৃহৎ হাট বসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের ধানের চারা ক্রয়-বিক্রয় করছেন। তারা আরও জানান, হাটিতে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০ লাখ টাকার ধানের চারা।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাটগুলোতে ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দ মতো চারা দেখে দাম বলছেন। বিক্রেতারাও তাদের চারা প্রকারভেদ অনুযায়ী দাম হাঁকাচ্ছেন।  হাটে আকার ভেদে ছোট চারার আঁটি ৭০ থেকে ১২০ টাকা ও বড় চারার আঁটি প্রকারভেদে ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

হাটে ধানের বিভিন্ন জাতের মধ্যে রয়েছে বিআর-২২, খাসা, নাজির, ও বিনা ধান-৭ অন্যতম। জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকেও  কৃষক ও পাইকাররা এ হাট থেকে চারা কিনতে এসেছেন। দাম নিয়েও সন্তুষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতারা।

অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বিক্রিও ভালো হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে যদি এমনভাবে চারা বিক্রি হয় তাহলে তারা লাভবান হবেন।

সদর উপজেলার সুহিলপুর থেকে চারা কিনতে আসা ক্রেতা মো.রফিক মিয়া ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এই হাট থেকে ধানের চারা কিনে থাকি। বিআর-২২ জাতের ২০ মোটা চারা ১৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। ১ কানি (৩০ শতাংশ ১ কানি) থেকে একটু বেশি জমিতে এই চারাগুলো বপন করব। এই হাটরে চারার মান অনেক ভালো। চারা ভালো হলে ধানের উৎপাদন ও ভালো হয়। তবে গত বছর থেকে এবার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।’

আশুগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা শফিক মিয়া বলেন, ‘আমন মৌসুমে আশপাশের বিক্রেতারা এখানে চারা বিক্রি করে থাকে। ৬ কানি জমির জন্য  চারা কিনবেন। ২৮ মোটা বিআর-২২ জাতের চারা ২৮২০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। দেড় কানির মতো জমিতে এই চারা রোপণ করা যাবে। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নিজের পছন্দ মতো চারা কিনতে পেরে আমি খুশি।’ 

হবিগঞ্জ জেলার তিলিয়াপাড়া থেকে চারা কিনতে আসা হারুন মিয়া বলেন, ‘আমি দেড় কানি জমির জন্য চারা কিনবো। চারা বিক্রেতারা প্রভারভেদ অনুযায়ি চারার দাম হাঁকাচ্ছেন। চারার দাম নাগালেই মধ্যেই। এছাড়া এই চারার হাটে কোনো দালাল নেই। মহাসড়কের পাশে বাজারটি হওয়ায় যানবাহন খুব সহজে পাওয়া যায়।’

হাটে চারা বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার খাড়িয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ২ কানি জমিতে ধানের চারা চাষ করেছি। চারা ভালোই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আটি প্রকার ভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এই হাটে বিআর-২২, খাসা, বিনা ধান-৭সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি হয়ে থাকে। বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে, এমন বিক্রি হলে লাভবান হবো।’

আরেক বিক্রেতা সদর উপজেলার মসজিদপুর গ্রামের আমির বলেন, ‘আমন মৌসুমে এই অস্হায়ী হাটটি বেশ জমজমাট থাকে। এই হাটে যে কেউ চারা বিক্রি করতে পারে। চারার হাটটি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ক্রেতা সহজে চারা কিনে পছন্দ মতো বাহনে নিয়ে যেতে পারেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, নন্দনপুরের চারার হাটটি প্রতিদিন বসে। এই বাজারে মান সম্মত চারা পাওয়া যায়। এই চারার জেলার বাইরেও চাহিদা রয়েছে। উন্নত চারা তৈরির জন্য আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই বাজারে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়ে থাকে। এই বছর প্রায় ২ কোটি টাকার চারা বিক্রি হবে বলে আশা করি।’

সুশান্ত সাহা বলেন, ‘জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে ধানের চারা বীজতলা রূপনের লক্ষ্য মাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৮৩২ হেক্টর। কৃষকেরা নিজের জমির পাশাপাশি বাজারে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত কিছু চারা রোপণ করেন। এবার আমাদের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৫০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ৪২ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যে ৯৯ ভাগ জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। আশা করছি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে আরও বেশি উৎপাদিত হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এমএ/



আরো পড়ুন