ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের কারণে দেশে দাম বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফানার উদ্দেশ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে ঢাকার কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজেবাজারগুলো সয়লাব। কাওরানবাজারের অনেক পাইকারি দোকানে পেঁয়াজের স্তুপ পড়ে আছে। পেঁয়াজ পচে গন্ধ বের হচ্ছে। বাজারগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম রাখছেন কেজিতে ৭০-৭৫ টাকা। বাংলাদেশি ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা ও পাবনারটার দাম কেজিতে ৯০ টাকা।
বিক্রেতারা বলেছিলেন, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নতুন ৪০ শতাংশ শুল্কায়নের পর বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। হঠাৎ করেই ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে। আর দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম, তাই দাম একটু বেশি। আর এখন তো পেঁয়াজের মৌসুম না, তাই দাম বেশি। ক্রেতাদের অভিযোগ, আড়তে পেঁয়াজ পচলেও দাম কমে না। বাজারে পেঁয়াজের অভাব নেই। তাইলে দাম কেন কমে না? ভোক্তা অধিকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিএনপি বাজারের ক্রেতা মাসুম মিয়া বলেন, ‘ আমরা সাধারণ রিকশাওয়ালা। ৯০ টাকা পেঁয়াজ হলে কেমনে পরিবার নিয়ে চলবো। পচা পেঁয়াজও ৬৫ টাকা। এখন মনে হয় বাজারে লুট শুরু হইছে।’
কৃষি মার্কেটে পেঁয়াজ কিনতে আসছেন রফিক মৃধা। অনেক্ষণ যাবত ঘুরছেন বাজারের এপাশ-ওপাশ। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কোথাও কম নেই। পুরো বাজার ঘুরে দেখলাম। বাজারে এত পেঁয়াজ, তবু দাম কমছে না। কারা এগুলো করছে, কেউ দেখছে না।’
কাওরানবাজারে পাইকারি পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি টাউনহল বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমি আজ ৬ বস্তা পিঁয়াজ নিলাম। ভারতে পেঁয়াজে শুল্ক বাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে ২০-২৫ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। এখন বেশি দামে কিনে নিয়ে কম দামে বিক্রি করবো কীভাবে। ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি কিনে নিলাম ৫৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ফরিদপুরেরটা ৭০ টাকা ও পাবনার পেঁয়াজের দাম ৭৫টাকা করে কিনেছি।’
কাওরানবাজারে পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আলী মিয়া বলেন, ‘ভারতে নতুন শুল্কায়নে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় পেঁয়াজ আসছে কম। তাই আমাদেরও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়। কী করবো বলেন।’
এই বাজারের আরও একজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রশিদ বলেন, ‘নতুন শুল্কায়নের কথা শুনে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় পেঁয়াজ কম আসছে। যা আসে, দাম কমাতে চায় না ব্যবসায়ীরা। আমরা কেজিতে ২-৩টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছি।’
এদিকে, কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘যেদিন খবর আসলো ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নতুন শুল্কায়ন হয়েছে, সেদিন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলো। কেন বাড়লো? ওইদিনই তো ভোক্তা অধিকারের উচিৎ ছিল অভিযান চালানো বা পদক্ষেপ নেওয়া। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যা করছেন, সেটা স্রেফ লুট, ডাকাতি। এরা ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের মতো। সব সুযোগে সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা অধিকারের উচিৎ এদের ধরে আইনের আওতায় আনা।’
এদিকে, দিনাজপুরের হিলিবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নতুন শুল্কায়নের পর পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। আমদানিকাকরা জানান, ভারত সরকারের ৪০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করার পর সোমবার (২১ আগস্ট) থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। প্রথমদিনে ৫৯ ভারতীয় ট্রাকে ১ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে।
ক্রেতারা বলছেন, নতুন এলসির পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে প্রকার ভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। আর আজ বিক্রি করছি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত করতে সে দেশের সরকার গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কায়ন আরোপ করে। সেই মোতাবেক রোববার থেকে নতুন শুল্কায়নে এলসি খোলা হয়। এর একদিন পর গতকাল সোমবার (২১ আগস্ট) থেকে নতুন শুল্কায়নের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে।’
পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিডেটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নতুন করে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর সোমবার প্রথমদিনে ৫৯টি ভারতীয় ট্রাকে ১ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। মঙ্গলবার ২৭টি ট্রাকে ৭৯১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে, এখন আমদানির সঙ্গে ২-৩টা কেজিতে দামও কমছে।’
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘আজ থেকে সারাদেশে একযোগে এই অভিযান শুরু হয়েছে। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।’
মঞ্জুর মো. শাহরিয়ার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সারাদেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে আমাদের ডিজি মিটিং করছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ থেকে দেশের বাজারগুলোতে বিশেষ অভিযান চলবে। যারা বাজার অস্থিতিশীল করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।’
ঢাকা বিজনেস/এমএ/