২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



কন্যা সন্তানের প্রাপ্য অধিকার দিন

ইসরাত জাহান দিপা || ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:০৯ পিএম
কন্যা সন্তানের প্রাপ্য অধিকার দিন ইসরাত জাহান দিপা


কন্যাশিশু হলো একটি পরিবারের আলোকবর্তিকা। মায়ের কোলজুড়ে কোনো কন্যা সন্তানের জন্ম হলো, যেন ধরার বুকে ফুল ফুটে উঠলো। যদিও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট আলাদা। কন্যা সন্তানকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা না করে বোঝা মনে করে। পুত্র সন্তানকে সংসারের ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর কন্যাকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে,পিতা সংসারের বোঝা  বা ভার মুক্ত হতে চান।

প্রতিবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। বাংলাদেশে ২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের ১১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস।

বরাবরের মতো এ বছরও দেশব্যাপী ৩০ সেপ্টে‌ম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ২০২৩ পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরাধীন জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলো স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এনজিও এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে নানা রকম কর্মসূচি পালন করছে।  এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে:  ‘বিনিয়োগে অগ্রাধিকার/ কন্যা শিশুর অধিকার’। 

কন্যা শিশু আমাদের সম্পদ। তাই বেড়ে ওঠার সময় খাদ্য,শিক্ষা,চিকিৎসা,বিনোদন ইত্যাদি মৌলিক অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। আমরা প্রায়শই দেখতে পাই,পরিবারে কন্যা সন্তানকে সবসময় অবহেলার মাঝে বড় করা হয়। খাদ্য থেকে শুরু করে শিক্ষা,সর্বক্ষেত্রেই যেন পুত্র সন্তানদের তুলনায় তারা বঞ্চিত। পুত্র সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ব্যারিস্টার হবে, বাবা-মায়ের দুঃখ ঘোচাবে। আর কন্যাকে তো এই কিছুদিন পরে বিয়েই দিয়ে দেবে,কন্যার জন্য খরচ করে লাভ কী? 

সব অধিকারের মাঝে আমরা যেন কন্যাশিশুদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করি। তাদের প্রতি বিনিয়োগে সচেষ্ট হই।


পুত্রকে নামকরা স্কুলে,বড় বড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে, আর কন্যা কোনে রকম প্রাইমারি পাস  হলেই যথেষ্ট। এই ধারণায় আচ্ছন্ন এখনো আমাদের সাধারণ জনগণ। অথচ একজন কন্যা শিশু ও কিন্তু বড় হয়ে ধরতে পারে সংসারের হাল।বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। বয়ে আনে দেশের জন্য সম্মান। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক বিনিয়োগ। বাড়ন্ত বয়সে পুষ্টিকর খাবার,পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, চিকিৎসার সুযোগ,পড়াশোনার জন্য স্কুলে পাঠানো, স্কুলজীবন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, সব ধাপেই রয়েছে অর্থের প্রয়োজন। আমরা যেন কন্যাশিশু ভেবে কার্পণ্য  না করি। আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে যেন কন্যার জন্য বিনিয়োগ করি। এটা তার অধিকার। তবেই সে পরিবার বা জাতির জন্য বোঝা হবে না। বরং তার মেধা ও মননের বিকাশের মাধ্যমে সে হবে জাতির সম্পদ।

দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ১৫ শতাংশ কন্যাশিশু। সুতরাং আমাদের দেশকে এগিয়ে  নিতে হলে কন্যাশিশুদের প্রতি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তা না হলে দেশ থাকবে অন্ধকারাচ্ছন্ন, হবে না পূর্ণআলোকিত।

নানা প্রতিকূলতার মাঝেও কন্যাশিশুদের  অদম্য মনোবল থাকে। তারা লেখাপড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক বিকাশে দারুণ প্রতিভার পরিচয় দিচ্ছে। অথচ বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম নামক সামাজিক ব্যাধি কন্যাশিশুদের বিকাশকে ব্যাহত করছে। এ দেশে প্রায় ৫১.৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে বয়স আঠারো হওয়ার আগে।  ১৫.৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে পনেরো বছরের আগে। এছাড়া  প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এ দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বাড়তি উপার্জনের জন্য শিশুসন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ নানা কাজে নিয়োজিত করে তারা। ছোটখাটো কল-কারখানা, পাথর ভাঙা, ফেরি করা, বাসা-বাড়িতে কাজ করা, গার্মেন্টস, দোকনপাটে ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিশুকন্যাদের চাহিদা থাকায় অঙ্কুরেই বিনষ্ট ফুলকলিদের প্রাণ। 

কন্যাশিশুদের জন্য বিনিয়োগ সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বাড়াতে হবে। অপুষ্টিজনিত কারণে বিকালঙ্গ, অন্ধ, বধির হয়ে পড়ে অনেক শিশু। আর সে যদি হয় কন্যাশিশু, তবে আমাদের সমাজে তার জন্য মায়ার জায়গাটা বড়ই নির্মম। 

জন্মের পর থেকে কৈশোর পর্যন্ত শিশুখাদ্যের দাম এবং মান নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুখাদ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট-ট্যাক্স বন্ধ করে জনগণের জন্য সহজলভ্য করলেই সেটাকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বড় বিনিয়োগ ধরা হবে। তবেই পাবো আমরা সুস্থ সন্তান,সুস্থ জাতি। সব অধিকারের মাঝে আমরা যেন কন্যাশিশুদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করি। তাদের প্রতি বিনিয়োগে সচেষ্ট হই।

লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা



আরো পড়ুন