বিশ্ব আলঝেইমার মাস সেপ্টেম্বর উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ও আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ডিমনেশিয়া সচেতনতামূলক র্যালি ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আলঝেইমার সচেতনামূলক একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এই র্যালি ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ থেকে ‘হাঁটি ডিমেনশিয়ার জন্য’ প্রতিপাদ্যে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহীদ মিনার সড়ক হয়ে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে ডিমেনশিয়া সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে নিউরোলজি ও নিউরোইলেকট্রো ফিজিওলজি বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক ডিমেনশিয়া একাডেমি ও দক্ষিণ এশিয়ার বোর্ড মেম্বার ডা. বদরুল আলম (সিনা) বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী কয়েক দশকে আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আমাদের বয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ডিমেনশিয়া মানে শুধু ভুলে যাওয়া নয়। অনেক সময় ভুলবশত ডিমেনশিয়ার রোগীকে সিজোফ্রেনিয়ার ঔষধ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের, নারীদের কিংবা যাদের ব্রেইন কম ব্যবহৃত হয় এবং বিশেষ করে গ্রামের নিরক্ষর মানুষদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া ক্রমাগত শব্দ দূষণ ও মাথায় গুরুতর কোনো আঘাতের কারণেও এটা হতে পারে।’
ডা. বদরুল আলম আরও বলেন, ‘৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এজন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের উপর জোর দিতে হবে।’
আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হক বলেন, ‘সমাজের যেকোনো স্তরের মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে অন্তত ১১ লক্ষ ডিমেনশিয়া রোগী আছে। ২০৪১ সালে এ সংখ্যাটা ২৪ লক্ষ হবে। কাজেই এটা মানবিক বিপর্যয় হয়ে দেখা দিবে। তাই প্রচুর পরিমাণ গবেষণা দরকার। এ রোগের যেহেতু কোন প্রতিষেধক নেই, তাই আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সবাই ডিমেনশিয়ার বন্ধু হতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আলঝেইমার দীর্ঘস্থায়ী ও অনিরাময় যোগ্য রোগ। এই রোগ মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে। ধীরে ধীরে কর্মক্ষমহীন করে ফেলে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের ওপর সার্বক্ষণিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তাই ডিমেনশিয়া রোগীদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে। আবার এই রোগীর পরিবার বা দেখাশুনাকারী ব্যক্তির ওপর মানসিক অনেক চাপ পড়ে। সে জন্য তাদের প্রতিও সকলের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিৎ।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সালেকুল ইসলাম। সহযোগী অধ্যাপক সালমা আক্তারের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক মো. নূহু আলম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. শামছুর রহমান প্রমুখ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিজনেস/উজ্জল/এন