১৯ মে ২০২৪, রবিবার



ইটভাটার পতিত জমিতে কোটি টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা

মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা || ১৬ জুলাই, ২০২৩, ০৮:০৭ এএম
ইটভাটার পতিত জমিতে কোটি টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা


‌‘দেশে এক ইঞ্চি জমিও পতিত থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় চুয়াডাঙ্গার ইটভাটার পতিত প্রায় ৩৭৫ বিঘা জমিতে চলতি আউশ মৌসুমে ধান চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু ইটভাটায় এ বছর সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইটভাটার এসব পতিত জমি থেকে এবার ৩০০ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদনের আশা করছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদিত এসব ধান ও সবজির বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় ২ হাজার বিঘার বেশি জমি রয়েছে। বৈশাখ মাস থেকেই ভাটার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রায় ৬ মাস এসব জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে। ভাটার এসব পতিত জমি উপযোগী করে চাষ করা সম্ভব।

২০২০ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৩০৪ বিঘা ইটভাটার পতিত জমিতে ধান চাষের কার্যক্রম শুরু হয়। জেলার দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের উদ্যোগে দামুড়হুদায় ২১৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ শুরু হয়। ওই বছরে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৫৫ বিঘা, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৭ বিঘা, জীবননগর উপজেলায় ১৫ বিঘা ধান চাষ হয়। এরপর ২০২১ সালে ৩২৭ বিঘা, ২০২২ সালে ৩৫৫ বিঘা ইটভাটার জমিতে ধান চাষ হয়। চলতি বছরে এ জেলার চার উপজেলায় সর্বমোট ৩৭৫ বিঘা ইটভাটার পতিত জমিতে ধান ও সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামুড়হুদা উপজেলায় ২৫০ বিঘা, চুয়াডাঙ্গা সদরে ৭৫ বিঘা, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩০ বিঘা ও জীবননগর ‍উপজেলায় ২০ বিঘা ইটভাটার পতিত জমিতে চাষ করা হয়েছে।

ইটভাটায় ধান উৎপাদন লাভজনক হওয়ার কারণে দিন দিন চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলার সব ভাটা চাষের আওতায় চলে আসলে এ থেকে আরও অতিরিক্ত আউশ ধান উৎপাদন সম্ভব হবে। খাদ্যের উদ্বৃত্তের তালিকায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সেইসঙ্গে ভাটাগুলো আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।


উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘দেশে এক ইঞ্চি জমিও পতিত থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় আমরা পতিত জমির খোঁজ করি। সে অনুযায়ী আমরা দেখি বর্ষাকালীন সময়ে ইটভাটার জমিগুলো প্রায় ৬ মাস পতিত থেকে যায়। ভাটার মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে এ সম্পর্কে বলি এবং চাষ সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করি ও বিভিন্ন প্রনোদনার আওতায় সহায়তা প্রদান করি। শুরুর দিকে আমরা দামুড়হুদা উপজেলায় ৩২টি ইটভাটায় চাষের মাধ্যমে শুরু করি। পরবর্তীতে বর্ষাকালীন বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেছি। চাষের পর তারা আবার ইটভাটার যে কার্যক্রম সেটা সেভাবেই কাজে লাগাতে পারছে। এতে ভাটার কার্যক্রমের কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। ফলে এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।’

ইটভাটার একজন মালিক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ভাটা বন্ধের সময় পতিত জমিতে এখন ধান ও সবজি চাষ করছি। এ সব চাষ ইটভাটার শ্রমিকরাই করছে। এতে করে অন্য সময় তাদের ছয় মাস বেকার বসে থাকতে হতো। এখন চাষ করার কারণে তাদের আর বেকার বসে থাকতে হচ্ছে না। আমরা যেমন ধান উৎপাদন করে লাভবান হতে পারছি, তেমনি শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে জমি পতিত ফেলে না রেখে ধানের আবাদ করা লাভজনক। প্রত্যেক ভাটা মালিকের উচিত জমি পতিত না রেখে চাষ করা।’

ইটভাটা শ্রমিক আশরাফ আলী বলেন, ‘আমরা এই বর্ষার মৌসুমে ইটভাটার পতিত জমিতে ধান চাষ ও সবজি চাষ করছি। ফলে আমাদের বেকার বসে থাকতে হচ্ছে না।’

ইটভাটা শ্রমিক মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আগে প্রায় ছয় মাস বেকার বসে থাকতাম। এখন ইটভাটার এসব পতিত জমিতে চাষের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। আবার চাষ থেকে ধান-চাল ও সবজি উৎপাদন করে সেগেুলো দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছি।’

ইটভাটা ম্যানেজার জাহিদুল হক বলেন, ‘প্রতি বছর বৈশাখ মাস থেকে প্রায় ৬ মাস ভাটায় ইট উৎপাদন বন্ধ থাকে। এরপর ইটভাটায় অনেক জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। ভাটার শ্রমিকরাও বেকার বসে থাকতেন। এসব জমিতে আমরা ধান ও সবজি চাষ করছি। ধানের চেয়ে লাউ চাষে লাভ বেশি হওয়ার কারণে এবছর আমরা প্রায় ২০ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করছি।’


চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলায় যেসব অকৃষি পতিত জমি আছে, সেগুলো যাতে উপযোগী করে চাষ করা যায়, তার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ২০২০ সাল থেকে ইটভাটার পতিত জমিগুলো কাজে লাগিয়ে চাষ শুরু করেছি। এ বছরও আমরা এ জেলার ইটভাটার ৩৭৫ বিঘা পতিত জমিতে ধান, সবজি ও ঘাস চাষ করার ব্যবস্থা করেছি। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে ধান ও সবজি উৎপাদনে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। এতে করে ইটভাটা মালিক ও শ্রমিক উভয়ই লাভবান হতে পারছে। আমরা ভাটা মালিকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে চলেছি, যার কারণে চাষের পরিমাণ প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইটভাটার পতিত জমিতে চাষ চুয়াডাঙ্গায় প্রথম শুরু হলেও এর সুবিধা প্রচার হওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ সারাদেশেই এটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে ইট ভাটার বেকার শ্রমিকরা কৃষি কাজ করে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন