১৯ মে ২০২৪, রবিবার



শাপলা-পদ্ম চাষ করে অর্ধ লাখ টাকা আয় রিজনের

মুঈন তাজ ওয়াল, মেহেরপুর || ২২ জুন, ২০২৩, ০৯:০৬ এএম
শাপলা-পদ্ম চাষ করে অর্ধ লাখ টাকা আয় রিজনের


সাইফুজ্জামান রিজন। মেহেরপুরের একজন সৌখিন খামারি। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের বাড়িতে ফুলের চাষ করেছেন। বিভিন্ন রঙের শাপলা আর পদ্ম ফুলের সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন সদর উপজেলার ষোলমারি গ্রামের এই যুবক। বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। 

একসময় দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা মিলতো হরেক রকম শাপলা আর পদ্ম ফুলের। সময়ের ব্যবধানে এখন যেন জাতীয় ফুল শাপলার দেখা মেলাই দায়। তবে রিজন লাল, সাদা, হলুদ, বেগুনি, গোলাপি এমন বিভিন্ন রঙের শাপলা ও পদ্মর সংগ্রহশালা করেছেন।  

মেহেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ষোলমারি গ্রামের স্কুল শিক্ষক আবুল হাশেমের ছেলে সাইফুজ্জামান রিজন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে সবে মাস্টার্স শেষ করেছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুলের চাষ করছেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই  প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন জলজ ফুলের প্রতি টান তার। 

কয়েক বছর আগে সখের বসে বদ্ধ জলাশয় ও খাল বিল থেকে কয়েক জাতের শাপলা ও পদ্ম ফুল নিয়ে বাড়ির ছাদে সংরক্ষণ শুরু করেন। বাড়ির ছাদে এসব ফুল ফুটে উঠলে সৌন্দর্য বাড়ে। তখন থেকেই নেশা ধরে বিলুপ্ত প্রজাতির শাপলা ও পদ্ম ফুলের চারা সংগ্রহের। এ পর্যন্ত ৯০ প্রজাতির শাপলা ও পদ্ম ফুলের টব সাজিয়েছেন। 

টবের পানিতে মশা নিধনের জন্য একইসঙ্গে চাষ করছেন মার্কারি বাহারি প্রজাতির সৌখিন মাছ। শাপলা ও পদ্ম ফুল বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় অর্ধ লাখ টাকা। স্কুলছাত্র রাকিবুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে বদ্ধ জলাশয় ও খাল-বিলে পানি না থাকায় শাপলা ও পদ্মফুল বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। 

তিনি আরও বলেন, রিজনের বাগানে নানা প্রজাতির শাপলা দেখে মুগ্ধ হই। তিনি এত শাপলা আর পদ্ম ফুলের সংগ্রহ না করলে হয়তো জানতেই পারতাম না আমাদের দেশের প্রকৃতিতে এত সুন্দর ও বাহারি রঙের শাপলা ও পদ্মফুল জন্মে। 

ষোলমারি গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, রিজন লেখাপড়ার পাশাপাশি দেখি বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছ-গাছালি নিয়ে আসে। আমরা ভাবি কি জানি কি করে সে! এখন দেখি রিজন ভিন্ন কিছু করেছে। 


তিনি আরও বলেন, সে শুধু তার বাড়ির উঠান আর ঘরের ছাদে সৌন্দর্য বৃদ্ধিই করেনি, বরং আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছে। সেইসঙ্গে আমাদের গ্রামটিকেই মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। 

মেহেরপুর গাংনী ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক এনামুল আজীম বলেন, ‘একসময় দেশের স্থির জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন রকমের শাপলা আর পদ্মের দেখা মিলতো। বর্তমান প্রজন্ম দেখেনি বিভিন্ন রঙের সেসব ফুল। 

ছাদবাগানে এমন জলজ উদ্ভিদের সংগ্রহ আবারও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবে শাপলা আর পদ্ম ফুলকে। রিজনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি। 

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জেলার একটি সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম শোলমারি। তবুও সাইফুৃজ্জামান রিজন তার মেধা আর বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। এই তরুণ উদ্যোক্তার কাছ থেকে আসলে অনেক কিছুই জানার আছে। 

রিজন বলেন, আমার ছাদ বাগানে ৫০ প্রজাতির শাপলা আর ৪০ প্রজাতির পদ্মফুল রয়েছে, তা দেখার মতো। প্রতি মাসে এখান থেকে অর্ধ লাখ টাকার মতো আয়ও করি। কৃষি বিভাগ থেকে আমি পরামর্শ ও সহযোগিতাও পাই। 

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন