১৮ মে ২০২৪, শনিবার



চাষির মুখে হাসি ফোটালো বাঙ্গি

এইচ মাহমুদ,নরসিংদী || ০৬ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:০৪ পিএম
চাষির মুখে হাসি ফোটালো বাঙ্গি


নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকের মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল বাঙ্গি। অল্প শ্রম ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই বাঙ্গি চাষ বাড়ছে।  এছাড়া বাঙ্গি বিক্রি করতেও কৃষককে তেমন বেগ পোহাতে হয় না। জমিতেই থেকে পাইকাররা এসে বাঙ্গির নিয়ে যান। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।  

রায়পুরা উপজেলা কৃষি অফিস  সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৪ ইউনিয়নের মধ্যে চরাঞ্চলেই ৮ ইউনিয়ন।  এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গি চাষা হয়, পাড়াতলী, চানপুর, বাঁশগাড়ি, শ্রীনগর, নিলক্ষা, চরমধুয়া ও মির্জাচর ইউনিয়নে। ওই এলাকাগুলোর বেলে-দোআঁশ মাটি অনেক উর্বর। এতে ফলনও অনেক ভালো হয়।  চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে বাঙ্গি চাষ  হয়েছে মোট ৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নেই ২০ হেক্টর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনার তীরঘেঁষে বাঁশগাড়ী ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল চর। বিস্তৃর্ণ এ চরের ধান, আলু, বাদামের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির ওপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গির সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। এ  ফল নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে বাঙ্গিগুলো বাজারজাতকরণের জন্য প্রতিদিনই কৃষকদের কাছে নরসিংদী জেলাসহ পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছেন। 


বাঁশগাড়ী এলাকার চাষীরা জানান, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন একটা বেশি খরচ ও পরিশ্রম নেই।  প্রথমে জমিতে বীজ বপন করতে হয়। পরে যখন চারা গজায়, তখন সার দিয়ে একটা নিড়ানি দিতে হয়। চারা যখন একটু বড় হয়ে ওঠে, তখন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপরই বাঙ্গির লতা আস্তে আস্তে মাটির মধ্যে ছড়াতে থাকে। একবিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করতে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। কৃষকদের আশা, যদি শিলাবৃষ্টি না হয়, একবিঘা জমির থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন ।

চাষি ইসমাইল মিয়া বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাঙ্গি চাষে আয় বেশি। তাই অধিকাংশ চাষিই বাঙ্গি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার বাঙ্গির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি দরে বাঙ্গিগুলো প্রতি ১০০ পিস  ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতি পিস পাইকারি মূল্যে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পড়ে। 

চাষি ইদ্রিস আলী জানান, তিনি টানা ৪ বছর ধরে বাঙ্গির চাষ করছেন। এবার এককানি (৪০ শতাংশ) জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। কোনো ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়-ক্ষতি না হলে এবং বর্তমান বাজার মূল্যে তার জমির বাঙ্গি বিক্রি করতে পারলে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মতো তার লাভ হতে পারে। 


নিলক্ষা ইউনিয়নের বাঙ্গি চাষি মায়েন উদ্দিন বলেন, ‘এক সময় আমাদের নিলক্ষার বাঙ্গির সুনাম ছিল। তাই এখানকার বাঙ্গি সারাদেশেই যেতো। এখন মানুষ আর আগের মতো বাঙ্গি চাষ করে না। আমি এ বছর দেড় কানি (৬০ শতাংশ) জমিতে বাঙ্গি চাষ করছি। আমার খরচ পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। এখন বাঙ্গির কদর বেশি, তাই বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি। সব খরচ বাদে আমি প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবো।’

বাঙ্গির পাইকারি ক্রেতা নবীনগর উপজেলার মাসুম বলেন, ‘আমরা এ চরের চাষিদের কাছ থেকে পাইকারি বাঙ্গি কিনেছি। বাঙ্গি বিক্রি হয় শতক হিসেবে। আকার ভেদে প্রতি শতক বাঙ্গি ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় কিনি। এ অঞ্চলে বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর। আর খেতেও সুস্বাদু। তাই ক্রেতাদের অনেক পছন্দ। তবে গেলো বছরের তুলনায় এ বছর বাঙ্গির প্রতি পিছ ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি ধরে কিনতে হচ্ছে।’

রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে  এ উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষা হয়েছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। আবার রমজান মাস চলমান থাকায় চাষিরা দামও পাচ্ছেন ভালো।’ 

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন