২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৬ আগস্ট, ২০২৩, ১০:০৮ পিএম
টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি ব্রাহ্মণবাড়িয়া


টানা বৃষ্টিতে  পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণাবাড়িয়া। রোববার (৬ আগস্ট) ভোর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত হওয়া টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন মহল্লার রাস্তা-ঘাট। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি রাস্তা উপচে দোকান-পাটে ঢুকে পড়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে শহরবাসী।

রোববার দুপুরে সরজমিনে দেখা গেছে,  শহরের হালদারপাড়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, লোকনাথ উদ্যানের (ট্যাংকির পাড়) সামনের রাস্তা, পাইকপাড়া রামকানাই হাই একাডেমীর সামনের রাস্তা, মেড্ডা সিও অফিসের মোড়, মেড্ডা পোদ্দার বাড়ির সামনের রাস্তা, মেড্ডা আরামবাগ, নোয়াপাড়া, কাউতলী থেকে মৌড়াইল জেলা পরিষদের সামনের রাস্তা, কালাইশ্রীপাড়ার রাস্তা, কালীবাড়ি মোড় থেকে পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড, কুমারশীল মোড়, ফুলবাড়িয়ার রাস্তাসহ একাধিক এলাকায় রাস্তা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও হাটু পানি, আবার কোথাও কোথাও গোড়ালি পর্যন্ত পানি। এর ফলে ওই সব এলাকার শিক্ষার্থীসহ বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়ে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২৫ বছর আগেও শহরের শিমরাইলকান্দি গ্রামের পালপাড়া থেকে শহরের কালীবাড়ি মোড় পর্যন্ত বিশাল আকৃতির একটি খাল ছিল, শহরের কুমারশীল মোড়ের আমিন কমপ্লেক্সের সামনে থেকে লোকনাথ উদ্যানের কোনা পর্যন্ত একটি খাল, শহরের ফুলবাড়িয়া মহল্লার নির্ঝর কিন্ডার গার্টেনের সামনে থেকে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত, শহরের মেড্ডা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে বিরাসারমোড় পর্যন্ত বিশাল আকৃতির খাল ছিল। এই খালগুলো এখন আর নেই। প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করে ওইসব স্থানে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করেছেন। যার জন্য বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশন হয়না। এছাড়াও শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। শহরবাসীর অভিযোগ, পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, মানুষের সচেতনতার অভাবে শহরে বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন থাকার পরও শহরের বিভিন্ন মহল্লার কেউ কেউ তাদের বাসা-বাড়ির বর্জ্য ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনে ফেলে দেওয়ায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে শহরে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডে গড়ে ১০০/১১০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্য থাকে ৫-১০ টন।  শহরের লোকনাথ উদ্যান সংলগ্ন ভাগাড়সহ বিভিন্ন এলাকার মোড়ে বসানো ডাস্টবিন থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায়  ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে ফেলেন। কিন্তু শহরের কিছু কিছু মহল্লায় মানুষ রাতের বেলা তাদের বাসা-বাড়ির বর্জ্য ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনের মধ্যে ফেলে দেন। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন রাস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী কিশোর বলে, ‘সকালে এসেছি হাঁটু পানি পেরিয়ে, বাসায় যাবোও  হাটু পানি পেরিয়ে। বৃষ্টি হলেই আমাদের এই অবস্থায় পড়তে হয়।’
সাবেরা সোবহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া বলেন,  ‘রাস্তায় পানি থাকার কারণে স্কুলে আসার সময় কাপড়-চোপড় ভিজে গেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের রামকানাই হাই একাডেমি রোডের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই সেই পানি রাস্তা প্লাবিত হয়ে দোকানে ঢুকে। বৃষ্টি যেন আমাদের জন্য অভিশাপ।’

এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ‘নিয়মিত শহরের ড্রেনগুলো পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের অধিকাংশ রাস্তা প্লাবিত হয়। তিনি বলেন, অবৈধ দখলবাজরদের উচ্ছেদ করে শহরের খালগুলোকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিলে শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।’  

এ ব্যাপারে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া এলাকায় একটি ক্যানেল তৈরি করেছিলাম। সেটি দিয়ে  টাউন খালে পানি নেমে যেতো। ফোরলেন কাজে সম্পৃক্তরা সেই ক্যানালটি বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে লোক পাঠিয়েছি ক্যানেলটি আবার চালুর ব্যবস্থা করতে।’ তিনি বলেন, ‘জলবদ্ধতা নিরসনে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে লোক পাঠানো হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছেন। দ্রুতই পানি নেমে যাবে।’
ঢাকা বিজনেস/এমএ/



আরো পড়ুন