১৯ মে ২০২৪, রবিবার



তরুণ ভোটার হারিয়ে শঙ্কায় বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || ০৫ মে, ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম
তরুণ ভোটার হারিয়ে শঙ্কায় বাইডেন


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন উত্তাল। বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। এর জেরে ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতেও বিন্দুমাত্র পিছপা হননি তারা। এমনকি ইহুদিদ্বেষের ধুয়ো তুলে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ, গ্রেপ্তার করেছে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে।

তবে এতকিছু করেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পুলিশ প্রশাসন। উল্টো তা দিনকে দিন ইসরায়েলের প্রধান মিত্র দেশটির আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি মার্কিন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আমেরিকা, ইউরোপ ছাড়িয়ে এখন বৈশ্বিক রূপ ধারণ করেছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল তখনই দেশটিতে নির্বাচনী আমেজ বয়ে চলছে। আগামী নভেম্বরে ভোট হলেও এখন থেকেই জোরেসোরে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে মার্কিন প্রধান দুই দল—ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি। ভোটার টানতে দুদলই দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।

তবে গাজা যুদ্ধ নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার সরকারের ইসরায়েল নীতিকে ভালো চোখে দেখছে না মার্কিনিরা।  গাজায় সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরও ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সহায়তার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের জেরে তরুণ ভোটার হারাতে পারেন বাইডেন। এমনকি আবারও নির্বাচিত হয়ে তিনি আর হোয়াইট হাউসে না-ও ফিরতে পারেন। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের বরাতে এক সংবাদ বিশ্লেষণে এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে এমন কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সম্পর্ক ছেদ করে সে দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে ব্যাপক হারে সহায়তা দিয়ে আসছে বাইডেন প্রশাসন। ফলে মার্কিন তরুণ ভোটারদের সমালোচনার অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বাইডেন। জনমত জরিপ বলছে, ২০২০ সাল থেকে তরুণ আমেরিকানদের মাঝে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমছে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে আছেন বাইডেন।  তার ওপর তরুণ ভোট ব্যাংক হারালে সে ক্ষতি পোষাতে পারবেন না তিনি।

পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক জোনাথন জিমারম্যান বলেছেন, বাইডেনের আসল হুমকি হলো তরুণ ভোটাররা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষিত ভোটাররা নির্বাচনে তাকে ভোট দেবেন না। আমি মনে করি না যে আজকে ক্যাম্পাসে যারা আন্দোলকর করছেন তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবে। আমার মনে হয় তাদের কেউই তা করবেন না।  বিপদটা এখানে না। বিপদটা অনেক সহজ : তারা ভোটই দেবে না।

ট্রাম্প যে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছেন তাতে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের মূল চাবিকাঠি ভোটদানের হার।  ২০২০ সালের নির্বাচনে উইসকনসিন রাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ২১ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন। তবে এবার এই রাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি নির্বাচনে ৪৭ হাজারের বেশি ভোটার তাকে ভোট দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।  এর আগে মিশিগানের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে এক লাখের বেশি ভোটার আনকমিটেড বেলটে ভোট দিয়েছেন। এই রাজ্যে গত নির্বাচনে মাত্র দেড় লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাইডেন।

পেনসিলভানিয়ায় খুবই অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন বাইডেন। তবে এখন জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। তার ওপর পেনসিলভানিয়া ও পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বাইডেনের নির্বাচনী দলের দু:চিন্তা আরও বাড়লো।

জিমারম্যান বলছেন, পেনসিলভানিয়ার মতো রাজ্যে ভোটের ব্যবধান তেমন হয় না। অন্তত কয়েক হাজার ভোটার যদি ভোট না দেয় কিংবা তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে ভোট দেয় তাহলে নির্বাচনী ফল যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে।

গত এপ্রিলের হার্ভার্ডের একটি জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র আট পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। যদিও ২০২০ সালে একই জরিপে তিনি ২৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ৫১ শতাংশ তরুণ আমেরিকান গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দিয়েছেন। আর মাত্র ১০ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন।



আরো পড়ুন