১৯ মে ২০২৪, রবিবার



হিলিতে বৃদ্ধ দম্পতির অসহায় জীবন

আনোয়ার হোসেন বুলু, হিলি (দিনাজপুর) || ২২ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম
হিলিতে বৃদ্ধ দম্পতির অসহায় জীবন


দিনাজপুরের হিলিতে অসহায় জীবনযাপন করছে এক দম্পতি। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছু নেই। মধ্যবাসুদেবপুর গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে টিনের চালা দিয়ে ঘর তুলে বসবাস করছেন তারা। সরকারিভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পে ৪ শতক জমিসহ একটি ঘর পেলেও যাওয়া-আসার সমস্যার কারণে তারা থাকেন না প্রকল্পের সেই ঘরে। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে চলে তাদের সংসার।  

ঢাকা বিজনেসের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাদের অসহায় জীবনের কথা ব্যক্ত করেন মজিরন বেগম ও স্বামী মো. ছইমুদ্দিন। 

মজিরন বেগম বলেন, ‘আমার ৪ ছেলে ২ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা সংসার করে আলাদা হয়েছে। বড় ছেলে মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিলেও অন্য ছেলেরা কোনো খবর নেয় না। সারাদিন মানুষের কাছে হাত পেতে চালের টাকাটা সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ভোরে হিলি বাজারে (আগের দিন রাতে) সবজি বিক্রেতারা যেসব নষ্ট সবজি ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, সেখান থেকে অর্ধপচা আলু, বেগুনসহ অন্যান্য সবজি কুড়িয়ে এনে তরকারি রান্না করি। এভাবে চলে আমাদের সংসার।’ 

প্রতিবেশি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘এই বয়স্ক দম্পতিটি খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাদের ছেলেরা তেমন খোঁজ-খবর নেয় না। একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে টিনের ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন।’ এই দম্পতির প্রতি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। 

মজিরন বেগমের স্বামী মো. ছইমুদ্দিন (৭৫) বলেন, ‘আমি বয়সের ভারে চলতে পারি না। আগে ফেরি করে বাচ্চাদের খেলা না বিক্রি করতাম। এখনতো চলাফেরা করতে পারি না। বসতভিটা বলতে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের সরঞ্জাগাড়ি গ্রামে ৪ শতক জায়গা ছিল। কয়েক বছর আগে ছোট ছেলেটি ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়। জমি বিক্রি করে তার চিকিৎসা করি। ছেলেটি বেঁচে আছে। তবে দুটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’ 

তিন বলেন, ‘বর্তমান হাকিমপুর পৌরসভার ৪নং ওয়র্ডের মধ্যবাসুদেবপুর এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে টিনের চালা তুলে স্ত্রীসহ থাকি। আমি ও আমার স্ত্রীর বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। ৩ মাস অন্তর অন্তর ৩ হাজার টাকা করে পাই। যা ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। আমার স্ত্রী মজিরন বেগম হাত পেতে চালের ব্যবস্থা করে। আর বাজার থেকে কুড়িয়ে সবজি এনে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করছি।’  

ছইমুদ্দিন আরও বলেন, ‘সরকার থেকে আলীহাট ইউনিয়নের পালিবটতলী পল্লী এলাকায় আশ্রায়ন প্রকল্পে ৪ শতক জমিসহ একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আমাদের। কিন্তু উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে আশ্রায়ন প্রকল্পটি। তাই সেখানে থাকি না। উপজেলা সদরে থাকলে চেয়েচিন্তে দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু ওই আশ্রায়ন প্রকল্পে থাকলে সেটা সম্ভব হবে না।’ প্রতিবেশিরা তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেন বলে জানান তিনি। 

বোয়ালদাড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওই বয়স্ক দম্পতি আমার এলাকার ভোটার। তাদের বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আর কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে তাদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ 

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নুর-এ-আলম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ওই দম্পতিকে বয়স্ক ভাতার কার্ড, আশ্রায়ন প্রকল্পে ঘর দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সরকারিভাবে আর কোনো সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে শীতের কারণে তাদের দুটি শীতবস্ত্র দেওয়া হবে।’ 

ঢাকা বিজেনেস/এইচ



আরো পড়ুন