১৮ মে ২০২৪, শনিবার



ছলাৎ ছলাৎ শব্দে বেজে উঠলো তিতাসে সুন্দইরা মাঝির বৈঠা

আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:০৯ পিএম
ছলাৎ ছলাৎ শব্দে বেজে উঠলো তিতাসে সুন্দইরা মাঝির বৈঠা


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হলো ভাটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বছর ঘুরে আবারও ছলাৎ ছলাৎ শব্দে বেজে উঠলো তিতাস নদীতে সুন্দইরা মাঝির বৈঠা। উৎসবে মাতোয়ারা তিতাস তীর। পুরোটা বছর জুরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা। চমৎকার এই ক্ষণে সামিল হতে সকাল থেকেই তিতাস নদীর পাড়ে ভিড় করতে শুরু করেন দর্শক। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) তিতাস নদীর বুকে পড়ন্ত বিকেলে এই নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। চমৎকার এই নৌকাবাইচ দেখে দারুণ খুশি দর্শকরা।

শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর অপসংস্কৃতির আড়ালে দিন দিন হারাতে বসেছে বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব আর সংস্কৃতি। তবুও যেটুকু টিকে আছে, তাতেই খুশি সহজ সরল এই মানুষগুলো। পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার এই নৌকা বাইচ তাদের নিয়ে গেছে এক রকম ঘোরের রাজ্যে। নৌকা বাইচ উপলক্ষ্যে শহরজুড়ে  উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভাদ্রের তপ্ত দুপুর গড়ানোর আগেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট বড় নৌকা নিয়ে উৎসাহী দর্শকরা নদীর দুই পাড়ে হাজির হতে থাকেন। 


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লি., দারাজ বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহযোগিতায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। 

তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাসে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডার শিশু পরিবার এলাকায় তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। 

এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের ৪টি, বিজয়নগর উপজেলার ৫টি, নবীনগর উপজেলার ২টি, আশুগঞ্জ উপজেলার ২টি ও নাসিরনগর উপজেলার ১টিসহ মোট ১৫টি প্রতিযোগী দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে-রঙের বাহারি পোশাক পরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এসময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাত ছলাত আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়। 

বিকেল ৩টার দিকে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকায় নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। 


নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলার নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলার নৌকা ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা। পরে প্রধান অতিথি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকা ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার দেন। 

এছাড়াও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী প্রতিটি দলকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া। এদিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশেপাশের এলাকা থেকে হাজার-হাজার মানুষ তিতাসের দু’পাড়ে, বিভিন্ন ভবনের ছাদের উপর ভিড় জমায়। অনেকেই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরিদল, মেডিকেল টিম নিয়োজিত ছিল। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।

ঢাকা বিজনেস/এন



আরো পড়ুন