২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



দেশের প্রথম সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল আজ

বিনোদন ডেস্ক || ০৩ আগস্ট, ২০২৩, ০৬:০৮ পিএম
দেশের প্রথম সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল আজ


আজ ৩ আগস্ট। সিনেমার জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশের প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। এটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৬ সালের আজকের এই দিনে। রূপমহল সিনেমা হলে ছবিটির উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আবদুল জব্বার খান। এ সিনেমা দিয়েই যাত্রা, এরপর পাকিস্তান শাসনামল পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটে চলচ্চিত্রের বিকাশ।

শুধু বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র বলেই নয়, নানা কারণেই এই সিনেমার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। 

নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণের অসাধারণ গল্পটি। যার শুরু ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে। ড. সাদেক একটি সভা আহ্বান করেছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়েই ছিল সেই সভা। তখন পর্যন্ত এখানে চলত ভারতীয় বাংলা, হিন্দি, পশ্চিম পাকিস্তান ও হলিউডের ছবি। বাংলাদেশে তখন ছবি নির্মাণ করা হতো না। সেই সভায় গুলিস্তান সিনেমা হলের মালিক অবাঙালি খানবাহাদুর ফজল আহমেদ বলে দিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আর্দ্র আবহাওয়ায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ কথার প্রতিবাদ করলেন আবদুল জব্বার খান। তিনি বললেন, 'এখানে তো ভারতীয় ছবির শুটিং হয়েছে। তবে কেন পূর্ণাঙ্গ একটি ছবি করা যাবে না? চ্যালেঞ্জ দিলেন তিনি ছবি করে দেখাবেন।'

১৯৫৩ সালে নিজের লেখা ‘ডাকাত’ নাটক নিয়েই তৈরি করলেন চিত্রনাট্য। কলকাতা থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে আনালেন পুরোনো মরচে ধরা এক ‘আইমো’ ক্যামেরা। শব্দ ধারণের জন্য ছিল একটি সাধারণ ফিলিপস টেপরেকর্ডার।

নারী অভিনয়শিল্পী তো পাওয়া যায় না। তাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শিল্পী খোঁজা হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী জহরত আরা ও ইডেন কলেজের আইএর ছাত্রী পিয়ারী বেগম যোগাযোগ করলেন। কলকাতার শিল্পী পূর্ণিমা সেনগুপ্ত এগিয়ে এলেন। তিনিই হলেন নায়িকা (কুলসুম)। পিয়ারী নাম নিলেন নাজমা, অভিনয় করলেন নায়ক আফজালের বোন রাশিদার চরিত্রে। আফজাল হলেন পরিচালক স্বয়ং। ডাকাত সর্দারের ভূমিকায় ছিলেন অট্টহাসির জন্য বিখ্যাত ইনাম আহমেদ।

শুটিং হয় বুড়িগঙ্গার ওপারে কালীগঞ্জ, লালমাটিয়ার ধানক্ষেত তেজগাঁওয়ের জঙ্গল, জিঞ্জিরা ও টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে। ১৯৫৫ সালের ৩০ অক্টোবর ছবির শুটিং শেষ হয়। ছবির মুদ্রণ, পরিস্ফুটন ও সম্পাদনার কাজ হয় লাহোরের শাহনুর স্টুডিওতে।

ছবি তৈরি হয়ে গেলো। এবার সেটা দর্শকের সামনে তুলে ধরার পালা। কিন্তু ঢাকার পরিবেশকরা ছবিটি মুক্তি দিতে রাজি হননি। তখন ‘পাকিস্তান ফিল্ম ট্রাস্ট’ ও ‘পাকিস্তান ফিল্ম সার্ভিস’ ছবিটি পরিবেশনার দায়িত্ব নেয়। ঢাকার রূপমহলে হয় উদ্বোধনী প্রদর্শনী। ৪টি প্রিন্টের বাকি ৩টি দেখানো হয় চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড ও খুলনার উল্লাসিনী সিনেমা হলে। দর্শক খুবই ইতিবাচকভাবে ছবিটি গ্রহণ করেন। বাকিটা ইতিহাস।

এই ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন সমর দাস। এতে গান করেন মাহবুবা হাসনাত ও আবদুল আলীম। নৃত্য পরিচালনা করেন গওহর জামিল।

সিনেমাটি সে রকম ব্যবসা করতে না পারলেও পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করে। ৬০ হাজার রুপি ব্যয়ে নির্মিত এ সিনেমা ৪৮ হাজার রুপি আয় করে প্রথম দফাতেই। অবশ্য মূল্যের বিচারে আজ ‘মুখ ও মুখোশ’ অমূল্য এক সম্পদ। 

ঢাকা বিজনেস/এন/



আরো পড়ুন