০২ জুন ২০২৪, রবিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয়

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৩ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাল সংগ্রহের  লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে  সংশয়


প্রতি বোরো ও আমন মৌসুমে মিল-মালিকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। চলতি আমন মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৭ হাজার ১৭৬ টন চাল সংগ্রাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও মিল-মালিকরা ১৫ হাজার ৬০৬ টন চাল সরবরাহের চুক্তি করেছেন। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, দেড় হাজার টনেরও বেশি চালের ঘাটতি থাকবে। এর ফলে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য বিভাগে সরবরাহের জন্য মিল-মালিকরা সাধারণত বিআর-১১ বা মোটা ধান সংগ্রহ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকাম থেকে। চাহিদা মেটাতে দেশের অন্যান্য মোকাম থেকেও ধান আনতে হয় তাদের। তবে, এবার কোনো মোকামেই বিআর-১১ জাতের ধান মিলছে না।

এবারের আমন মৌসুমে ৪২ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করছে খাদ্য বিভাগ। এই দরে চাল দিতে গিয়ে কেজিতে ৩-৪ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি চালকল মালিকদের। মূলত আশুগঞ্জ মোকামে বিআর-১১ জাতের ধানের আমদানি নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বিআর-২২ ও বিআর-৩৯ জাতের ধান থেকে চাল তৈরি করে, তা সরবরাহ করছেন মিল-মালিকরা। তবে চাহিদা বিবেচনায় দেশের অন্য মোকাম থেকেও ধান আনতে হচ্ছে। এতে চাল তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি।

বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকামে বিআর-২২ জাতের ধান প্রতিমণ বেচাকেনা হচ্ছে ৯২০-৯৩০ টাকা এবং বিআর-৩৯ জাতের প্রতিমণ ধানের বাজার দর ১১৫০-১১৮০ টাকা। এসব ধান চলতি আমন মৌসুমের। যার বেশিরভাগই ভেজা। ফলে এসব ভেজা ধান থেকে পুরনো ধানের তুলনায় চালও কম পাওয়া যায়।

আশুগঞ্জ মোকামে ধান নিয়ে আসা বেপারিরা জানান, গত জুন মাসে অকাল বন্যায় হাওরাঞ্চলে বিআর-১১ জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আমন মৌসুমে মোটা ধানের চাষ হয়েছে কম। এতে কৃষকের গোলায় বিআর-১১ বা মোটা ধান নেই। এছাড়া পুরনো ধানের সংকট থাকায় দামও কিছুটা বেশি।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার ধান বেপারি রহিম মিয়া জানান, তারা কৃষকদের কাছ থেকে চাহিদা মতো ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে মোকামে ধানের জোগান কম। আর চালকল মালিকদের চাহিদা বিআর-১১ বা মোটা ধান। কিন্তু হাওরাঞ্চলে এই ধানের ফলন ভালো হয়নি। এজন্য মোকামে আমদানিও নেই।

চাল সংগ্রহে চালকল মালিকদের সঙ্গে চুক্তির জন্য খাদ্য বিভাগের ৩ দফায় বাড়ানো চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে বিদায়ী বছরের ১৫ ডিসেম্বর। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় চালকল মালিকদের তেমন সাড়া মিলেনি। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ৯১টি চালকল চুক্তি করে। যদিও জেলায় প্রায় দুই শ চালকল রয়েছে। তবে চালকল মালিকরা চুক্তির সমপরিমাণ চাল সরবরাহ করলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঘাটতি থাকবে ১ হাজার ৫৭০ টন।

চালকল মালিকরা জানিয়েছেন, খাদ্য বিভাগে সরবরাহের জন্য বিআর-১১ জাতের ধান না পেয়ে বিআর-২২ এবং বিআর-৩৯ জাতের ধান থেকে চাল তৈরি করতে হচ্ছে। প্রতিকেজি চাল তৈরিতে খরচ পড়ছে ৪৫ টাকারও বেশি। কিন্তু সরকার ৪২ টাকা নির্ধারণ করায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার যদি চালকল মালিকদের প্রণোদনা না দেয়, তাহলে চুক্তির সমপরিমাণ চাল সরবরাহ করা যাবে না। চুক্তির অর্ধেক চাল সরবরাহ করেই খাদ্য বিভাগে দেওয়া জামানত ফেরত চান তারা। 

আশুগঞ্জ রজনীগন্ধা এগ্রোফুডের স্বত্বাধিকারী হাসান ইমরান জানান, মিলের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত অথবা কালোতালিকাভুক্ত হওয়ার ভয়ে লোকসানেই চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছেন তারা। এজন্য বাধ্য হয়েই তুলনামূলক বেশি দামের ধান থেকে চাল তৈরি করতে হচ্ছে। এছাড়া মোকামে বিআর-২২ জাতের ধানের দরও স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ১০০ টাকা বেশি বলে জানান তিনি।

আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল সিকদার বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা লোকসানেও চাল দেওয়ার চুক্তি করেছি। তবে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, আমাদের যেন প্রণোদনা দেওয়া হয়। আর যদি প্রণোদনা না দেয়, তাহলে  চুক্তির ৩০-৪০ শতাংশ চাল সরবরাহের পর যেন জামানত ফেরত দেয়।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মুস্তফা বলেন,‘মিল মালিকদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী পুরো চালই  সংগ্রহ করত পারবো। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাকি দেড় হাজার টন চালও চুক্তি করা মিলগুলো থেকেই সংগ্রহ করা যাবে বলে আশা করছি। ফলে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন