২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



আসছে কোরবানির ঈদ: চোখে স্বপ্ন খামারিদের

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ২৩ মে, ২০২৪, ১১:০৫ এএম
আসছে কোরবানির  ঈদ: চোখে স্বপ্ন খামারিদের


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবছর কোরবানির ঈদ ঘিরে পশু বেচাকেনার মাধ্যমে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়। এবার  প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার পশু কেনাবেচার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আপাতত খামারগুলোতে চাহিদার পরিমাণ কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে, শেষ মুহূর্তে চাহিদা আরও বেড়ে সংকট তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। পাশাপাশি গো-খাদ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির হাটে পশুর দাম কিছুটা বাড়বে বলেও মনে করছেন খামারিরা।

সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এবারও চোরাইপথে ভারত থেকে গরু আসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় খামারিরা। ভারতীয় গরু ঠেকানো না গেলে দেশীয় খামারিদের বড় অঙ্কের লোকসান গুনে পথে বসতে হবে বলে মনে করেন তারা। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু আসা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪ হাজারের বেশি খামারি কোরবানির পশু হৃষ্ট-পুষ্ট করেছেন। মূলত যার গোয়ালে অন্তত ৫টি গরু-মহিষ আছে, তাকেই খামারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশায় এখন পশুর বাড়তি যত্ন নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত খাবার। সবক’টি খামারেই কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

জেলার বাণিজ্যিক খামার ও সাধারণ কৃষকদের কাছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ হাজার ১৭৪ গরু, ১২ হাজার ২৩৪ মহিষ, প্রায় ১৫ হাজার ছাগল এবং সাড়ে ৬ হাজার ভেড়া। যা আপাতত কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  খামারগুলোতে দেশীয় ষাঁড়, শাহী ওয়াল ও ফিজ্রিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশি ষাঁড়ের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এবার হাটে পশুর দাম কিছুটা বাড়বে। একেকটি পশুর আকার ভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে।

মূলত পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় পশুপালনে খরচ বেড়েছে খামারিদের। বিগত বছরের তুলনায় ভূষি ও ভুট্টাসহ অন্যান্য পশুখাদ্যে বস্তাপ্রতি কয়েকশ টাকা বেড়েছে। এছাড়া পশুর পরিচর্যায় নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরিও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি গরুর বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে চিকিৎসা খাতেও অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের রূপচান বিবি ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক রফিক মিয়া বলেন, ‘এবার খামার থেকে কোরবানিযোগ্য ১২০ গরু ও মহিষ হাটে তোলা হবে। সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু ও মহিষ রয়েছে খামারে। খাবার ও চিকিৎসা খতে খরচ বাড়ায় গরু-মহিষ পালনে খরচ বেড়েছে। তাই বাড়তি দামেই হাটে পশু বিক্রি করতে হবে। তবে চোরাইপথে ভারত থেকে গরু এলে দেশি খামারিদের পথে বসতে হবে।’

জেলা শহরের খাজা ডেইরি ফার্মের স্বত্বধিকারী মো. জুয়েল বলেন, ‘পশুখাদ্যের সঙ্গে শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। তাই পশুর দাম না বাড়ালে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। কোরবানির জন্য সবসময় দেশীয় ষাঁড়ের চাহিদা থাকে বেশি। এছাড়া প্রত্যেক খামারেই পর্যাপ্ত গরু-মহিষ রয়েছে। তাই বিদেশ থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন হবে না।’

জেলা ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সাইফুদ্দিন খান শুভ্র বলেন, ‘পশু পালনে খরচের ওপর নির্ভর করে পশুর দাম। গেল কয়েক বছর ধরেই বেড়েছে পশুখাদ্যের দাম। যা এখনো ঊর্ধ্বগামী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এবার পশুর দাম বাড়বে। আর পশুর দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে গেলে খাদ্যের দাম কমিয়ে পশুর উৎপাদন বাড়াতে হবে। যখন পশু পালনে খরচ কমে আসবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক কম দামে পশু পাওয়া যাবে।’

সাইফুদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের খামারিদের কাছে যে পরিমাণ পশু আছে, তাতে করে কোরবানির জন্য পশুর কোনো সংকট হবে না। সবমিলিয়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হতে পারে। এ খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিদেশ থেকে আর পশু আমদানি করতে হবে না। এতে করে সরকারের অনেক ডলারও বেঁচে যাবে। পাশাপাশি নতু নতুন খামার তৈরির মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, ‘পশু পালনে খরচ কমাতে আমরা সবময়ই প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজারকরণে খামারিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে এবার চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পশু পালনে খামারিদের খরচ বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পশুর দাম কিছুটা বাড়বে। তবে জেলায় এবার পশুর সংকট হবে না বলে আশা করছি।’

কামাল চৌধুরী আরও বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে চাহিদা বাড়লেও যেহেতু আশপাশের জেলা থেকেও হাটগুলোতে পশু আসে, সেক্ষেত্রে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে। এছাড়া চোরাইপথে গরু আসা বন্ধে সীমান্তে আইনশৃঙ্খখলা বাহিনী বাড়তি কঠোর নজরদারি রাখবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন