১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

যে কারণে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৫ জুন, ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম
যে কারণে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে


দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সোমবার  (৫ জুন) থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির খবরে এখনো রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। তবে, রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অর্থাৎ রাজধানীর বৃহত্তম এই কাঁচা বাজারে আড়ৎদার থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীরা গত কালের চেয়ে আজকে তুলনামূলক কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। যা কিছুটা স্বস্তিদায়ক বলে জানিয়েছেন এই বাজারে আসা ক্রেতা সাধারণ।

রাজধানীর কাওরান বাজারে বাজার করতে এসেছেন চন্দ্রনা সরমা। ঢাকা বিজনেসকে তিনি বলেন, ‘আমি গৃহিণী। যে টাকা নিয়ে আসি তা দিয়ে বাজার করা কষ্টকর হয়ে যায়। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তুলনামূলক কম পেঁয়াজ খাই। আমরা যদি মুসলমানদের মতো পেঁয়াজ খেতাম তাহলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তো বলে আমার মনে হয়। আমাদের দেশি পেঁয়াজ যে পরিমাণ মজুদ আছে, তাতে করে নাগালের মধ্যে দাম রাখা সম্ভব। পাশাপাশি চাহিদাও মেটানো সম্ভব। আমদানি করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। পেঁয়াজের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে।’

রাজধানীর কাওরানবাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে জানা গেছে, সরকার আজ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিলেও অধিকাংশ বাজারে এর প্রভাব পরেনি। আগের দামেই অথবা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গুলশান-১ নাম্বার কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা প্রতিকেজি ফরিদপুরের হাইব্রিড পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১১০ টাকায়। অথচ গতকালকেও তারা এই পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা দরে। যেখানে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমার কথা, কিন্তু উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে। 

এদিকে, মহাখালী কাঁচাবাজারে পাবনা অঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়। গত তিন দিন এই বাজারের বিক্রেতারা একই দামে অর্থাৎ ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকায় প্রতিকেজি পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।

সাধারণ ক্রেতারা জানান, কোথাও দাম বেশি আবার কোথাও কিছুটা দাম কমেছে পেঁয়াজের। তবে দাম যে পরিমাণ কমেছে, তাতে কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে। কিন্তু পুরোপুরি নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে আনতে হলে পেঁয়াজের দাম আরও অনেক কমাতে হবে। কারণ শুধু পেঁয়াজ নয়, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে। বাজার করতে এসে টাকা উদ্বৃত্ত থাকে না; উপরন্তু ঘাটতিতে পড়তে হয়।

মহাখালী কাঁচাবাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা লুৎফর রহমান ঢাকা বিজনেসেকে বলেন, ‘আমরা আগের কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এখনো নতুন দামের পেঁয়াজ আমরা পাইনি। তবে আগামীকাল (০৬ জুন) নতুন দামের (কম দাম) পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করছি। তখন হয়তো বা কম দামে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু এখন আগের পেঁয়াজ নতুন দামে বিক্রি করলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কাওরান বাজারে প্রতি কেজি ফরিদপুরের হাইব্রিড পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অথচ গতকালকেও এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। গতকালকে পাবনার পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। পেঁয়াজ আমদানির খবরে ১০ টাকা কমে এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই পেঁয়াজ। 

এদিকে এই বাজারে রাজশাহীর পেঁয়াজেরো দাম কমেছে। প্রতি কেজি রাজশাহী অঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গতকালকে যা বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়।

কাওরান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আফজাল হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সবাই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে আমি তো বেশি দামে বিক্রি করতে পারি না। আমি বেশি দামে বিক্রি করলে ক্রেতা পাবো না। আমার আগের ২ মনের মতো পেঁয়াজ রয়েছে। এগুলো লসে বিক্রি করতে হবে। তবে নতুন দামের পেঁয়াজ (আমদানি ও দেশি পেঁয়াজ) যখন বাজারে ঢুকবে, তখন কম দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারবো। তখন আবার লাভ হবে আমাদের। আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে আমদানি পেঁয়াজ বাজারে ঢুকবে। তখন সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।’

পেঁয়াজের আড়তদার মো. বাবুল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা কমিশনে পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকি। ব্যাপারিরা আমাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেয়। আমরা তাদের নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেই। বিনিময়ে আমরা একটা কমিশন নিয়ে থাকি তাদের কাছ থেকে। ব্যাপারিরা দাম বাড়িয়ে থাকে। তবে এখন আমদানির খবরে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগামীতে আরও দাম কমবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবু জুবায়ের হোসেন বাবলু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কৃষকদের স্বার্থে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। কিন্তু এই সুযোগে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়াতে থাকে। এতে করে ভোক্তা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। তাই পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। আশা করছি, আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলেই দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/




আরো পড়ুন