২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

প্রসঙ্গ: প্রেম-ভালোবাসা

কবীর আলমগীর || ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:৪২ পিএম
প্রসঙ্গ: প্রেম-ভালোবাসা


ভালোবাসি মিথ্যুক, ভালোবাসি স্বার্থপর, ভালোবাসি ধুরন্ধর, ভালোবাসি চালাক কিছু। ভালোবাসি বিশ্বাসঘাতককে। ভালোবাসি ভুল মানুষকে। কবিতার ভাষায় :

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার।
(ফেরীঅলা, হেলাল হাফিজ)

প্রত্যেকটা ভালোবাসার সম্পর্ক এক সময় হিসাব-নিকাশে এসে পরিণতি লাভ করে। না হয় হিসাব-নিকাশে গড়মিল হলে বিচ্ছেদ ঘটে। এক্ষেত্রে ভালোবাসা একটা স্বার্থপরতার সম্পর্কও বটে। তবে মানুষ বিচিত্র এই কারণে যে, মানুষ কারও প্রেমে পড়া কিংবা ভালোবাসার আগে কোনো হিসাব-নিকাশ করে না। হিসাব-নিকাশটা শুরু হয় প্রেম প্রকাশের পর থেকেই। তবু প্রেম হয় খুব সিরিয়াস,

 আমি কাউকে ভালোবাসলে বেশ সিরিয়াস হয়ে পড়ি
সে একটা মানুষ হোক, একটা প্রজাপতি হোক
কিংবা হোক এক দূর্বাঘাস।
[সিরিয়াস প্রেম, কবীর আলমগীর]

কী না করতে পারি ভালোবাসার জন্য, প্রেমের জন্য, কিছুটা আনন্দের জন্য। কবিতার ভাষায় :

দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টি নীলপদ্ম!
তবুও কথা রাখেনি বরুনা,
এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনও সে যে-কোনো নারী
[কেউ কথা রাখেনি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়]

কে যেন আহ্বান করেছিল, যদি আমার মাঝে কোনো সুখ খুঁজে পাও, তবে এসো। যদি সুখের সন্ধান করো, তবে কড়া নেড়ো দরজায়। কে যেন একবার প্রতারণা করে চোখে চোখ রেখে বলতে বলেছিল, ভালোবাসি কি না? কারও চোখের দিকে তাকিয়ে এই চরম সত্যটা লুকিয়ে রাখব সে দুঃসাহস কোথায়? আমি তো বিশ্বাস করেছিলাম, তার চোখ লোনা জলের ভাষায় কথা হয়। তাই তো কবির উচ্চারণ:

সে ভোলে ভুলুক কোটি মন্বন্তরে আমি ভুলিব না আমি কভু ভুলিব না।
[শাশ্বতী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]

মানুষ ছলনাও জানে। প্রেমের নামে, অনুভবের নামে, মুগ্ধতার নামে। তবুও সান্ত্বনা কবিতার ভাষায় : আঁকড়ে থেকো না কিছু।

যে যাবার তাকে যেতে দাও,
যে ফেরার সে তো ফিরবেই!

ভালোবাসার বিষয়ে একটা প্রতিজ্ঞা তো করা যায়, কবিতার ভাষায় :

কথা বলো, কথা বলো অমিতাভ।
শানিত শোণিতে জ্বেলে প্রতিবাদী আগুনের লাভা
একবার বলে ওঠো: দুঃশাসন আমি মানি না তোমাকে,
একবার বলে ওঠো : ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই।
[রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]

ভালোবাসা কী, কত রঙ
ভালোবাসা কী? অনেকেই বলেন ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। সাধারণত ভালোবাসা হলো আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ এমন একটা অনুভুতি, যা ভালোবাসার মানুষটির কাছে সহজে প্রকাশ করা যায় না। ভালবাসা হতে পারে প্রেমিকার সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, কিংবা স্রষ্টার সঙ্গে। ভালোবাসা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা। ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট। ভালোবাসা মানে হলো, একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা।

ভালোবাসা মানে হলো, কখনো প্রিয় মানুষটির প্রতি অশুভ আচরণ না করা, তার ক্ষতি না চাওয়া। সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকা। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসা মনের একটি অনুভূতি। এ অনুভূতিটাও কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। এ ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষে নয়। সব জীব ও জড়ের প্রতিও হতে পারে। ভালোবাসা হবে নিখুঁত, যেখানে থাকবে সম্মানবোধ।

প্লেটোর ডায়ালগ Symposium-এ সক্রেটিসের বক্তব্য আমাদের প্রেমের দুইটি ধরনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। একটি হলো 'ভালগার এরোস' (Vulgur Eros) তথা জাগতিক বা ভোগবাদী প্রেম, যেখানে শরীর সৌষ্ঠব, যৌনতা আর  পণ্যাশ্রয়ী আকাঙ্ক্ষা ভালোবাসার উৎস হয়ে কাজ করে। আর অন্যটির নাম 'ডিভাইন এরোস' (Divine Eros) বা স্বর্গীয় প্রেম, যা ভোগের উর্ধ্বে এক আধ্যাত্মিক আকর্ষণ দিয়ে ব্যক্তির অন্তরকে পূর্ণ করে, আলোকিত করে। তবে সক্রেটিসের মতে, ভালগার এরোস থেকেই ধীরে ধীরে ডিভাইন এরোসের দিকে যাত্রা শুরু হয়। যার অপর নাম হতে পারে প্রজ্ঞাপ্রেম।

এদিকে ফ্রয়েড প্রেমকে যৌনতার সাথে আদর-সোহাগের মিথষ্ক্রিয়া হিসেবে দেখেছেন। শিশুর স্তন্যপান, আঙুল লেহন- এসবের মাধ্যমে যৌনতার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছেন তিনি এবং প্রেমের প্রাথমিক প্রকাশ হিসেবেও একেই বুঝিয়েছেন। এছাড়াও প্রেমের প্রকরণ বর্ণনায় ফ্রয়েড আরও তিন ধরনের অভিধা ব্যবহার করেছেন যেগুলো হলো 'লিবিডিন্যাল এনার্জি', 'এরোস', এবং 'এরোস প্লাস'।

Eros Love: এটি খুব উচ্চমানের রোমান্টিক প্রেম, যা প্রচণ্ড আবেগ, দৈহিক আকর্ষণ, এবং গভীর ঘনিষ্ঠতায় টইটুম্বুর। Ludas Love: এটি হলো প্রেম-প্রেম খেলা, কিন্তু খুব সিরিয়াস ঘনিষ্ঠতা বা তীব্রতা এতে অনুপস্থিত। ইংরেজিতে একে গেইম প্লেইং লাভ বলা হয়। Storge Love: প্রগাঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা প্রেম। পারস্পরিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা আছে, এবং দুজনের বোঝাপড়া যথেষ্ঠ মাত্রায় বিদ্যমান, তবে শরীর-ঘনিষ্ঠতা খুব কম। Pragma Love: এটি হলো storge এবং ludus love এর মিলিত রূপ। এটি এক ধরণের বাস্তবধর্মী ও যুক্তিনির্ভর প্রেম, যেখানে প্রেমিক/প্রেমিকার অন্তত একজনের এরকম হয় যে, সে মনে করে  'আমি এই রকম একটা ছেলেকে বা মেয়েকেই খুঁজছিলাম।’

Mania Love: Eros এবং ludus love এর মাখামাখিতে তৈরি হয় এই প্রেম। একে সমস্যাক্রান্ত প্রেমও বলা হয়। এতে তীব্রতা এবং ঘনিষ্ঠতা এতো বেশি হয় যে এই প্রেমে ঈর্ষা ও অতি নির্ভরশীলতা খুব স্পষ্টভাবে বিদ্যমান থাকে। 'ও সব সময় আমার সাথেই থাকবে, অন্য কাজের চেয়ে আমি সবসময় গুরুত্ব পাবো, এমনকি অন্য ছেলের (বা মেয়ের) দিকে ফিরেও তাকাবে না'। এরকম একটা মানসিকতা ক্রিয়াশীল থাকে প্রেমিক/ প্রেমিকার মনে। সবসময় একটা ভীতি কাজ করে, 'এই বুঝি অন্য কেউ ওর প্রেমে পড়ে গেলো'। এসব নিয়ে দুজনের মাঝে মান-অভিমান, ঝগড়া-ঝাঁটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

Agape Love:  eros আর storge-এই দুয়ে মিলে এই প্রেম তৈরি হয়। কোনোকিছুর আশা না করেই শুধু দেবার মাঝে আনন্দ পায় প্রেমিক/প্রেমিকা। একে অন্যের জন্য ত্যাগ করতে সদা প্রস্তুত থাকে। মানে ত্যাগে ত্যাগান্বিত অবস্থা। নেওয়ার চেয়ে দেওয়াতে তৃপ্তি বেশি। অনেকেই এই প্রেমকে খাঁটি প্রেম বলে থাকেন। বলে তো থাকেন, কিন্তু কয়জন করে থাকেন—এটা দেখার বিষয় বটে।

Infatuated love (আবেগ সর্বস্ব প্রেম) –intimacy এবং decision/commitment তেমন নেই কিন্তু প্রচণ্ড আবেগিক (passionate) স্ফূরণ লক্ষণীয়। প্রায়ই রোমান্টিক প্রেমের সূচনা হয় এ ধরণের প্রেম দিয়ে। তবে ঘনিষ্ঠতা ও দায়িত্ববোধের অনুপস্থিতে এ ধরনের ভালোবাসা হুট করে নাই হয়ে যেতে পারে।

Empty love(শূন্য প্রেম) – শুধু commitment আছে কিন্তু intimacy বা  passion অনুপস্থিত এই প্রেমে। গভীর কোনো প্রেম যদি হ্রাস পেতে থাকে তবে এক পর্যায়ে তা শূণ্য প্রেমে পরিণত হয়। সাধারণত এ্যরেঞ্জ্‌ড ম্যারিজ-এর ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর প্রেম শুরু হয় শূণ্য প্রেম দিয়ে এবং পরবর্তীতে ভিন্ন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

Romantic love(রোমান্টিক প্রেম)–উচ্চমাত্রার ঘনিষ্ঠতা এবং আবেগের সমন্বয়ে রোমান্টিক প্রেম সৃষ্টি হয় আর এর ফলে পাত্র-পাত্রী শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও পরস্পরের প্রতি ভীষণ অনুরক্ত হয়। তবে এই প্রেমে স্থায়ী/দীর্ঘমেয়াদী কমিটম্যান্ট খুব একটা থাকে না।

Companionate love(গভীর বন্ধুপ্রেম)–এ ধরনের প্রেমে ঘনিষ্ঠতা এবং দীর্ঘমেয়াদী কমিটম্যান্ট যথেষ্ঠ থাকে, যদিও আবেগের উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে। বৈবাহিক সম্পর্ক অনেক বছর ধরে চলতে থাকলে অনেকেরই এরকম হয়ে থাকে।

Fatuous love (নির্বোধ প্রেম)–এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে হুট করেই প্রেমে পড়ে যায়, বা প্রেমে পড়েই বিয়ে করে ফেলে। এ ধরণের ভালোবাসায় আবেগের মাত্রার উপর ভিত্তি করে কিছুটা দায়িত্ববোধ বা কমিটম্যান্ট থাকে বটে, তবে ঘনিষ্ঠতার উপস্থিতি সুস্থির থাকেনা। মূলত এটি  Infatuated love –এর মতোই একটি অতি আবেগতাড়িত ভালোবাসা।

Consummate love(নিখুঁত প্রেম) – পরিপূর্ণ, আদর্শ প্রেম। Intimacy, passion আর Commitment/Decision-এই তিনের সমানুপাতিক/সমসত্ব মিশ্রণ হলো consummate love। মানুষ মূলত এটিই কামনা করে। আদর্শ দম্পতির মাঝে এ ধরনের প্রেম বিদ্যমান থাকে। স্টের্নবার্গের মতে, যে যুগল ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে একত্রে বাস করছেন ও প্রাণবন্ত যৌনতা উপভোগ করে চলছেন, এবং পরস্পর ভিন্ন অন্য কারও সাথে বেশি সুখী হতে পারতেন বা পারবেন-এরকমটি কখনও মনে করেননি তারা এই ‘নিখুঁত’ প্রেমের প্রেমিক যুগল। পারিবারিক, ব্যক্তিক কোনো সমস্যা হলে তারা দুজনে মিলে সমাধান করে নিতে পারেন। মতের ভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করেন এবং ভিন্নমতকে সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে দেন না। তবে স্টের্নবার্গ যে বিষয়ে সতর্ক করেছেন তা হলো, এই ক্যাটাগরির প্রেম অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা বেশি কঠিন। অর্থাৎ এই দুজনের মধ্যে consummate love  আছে মানে চিরকাল থাকবে— তা নয়। যদি প্যাশন তথা আবেগ কমতে থাকে তাহলে companionate love ক্রমান্বয়ে companionate love-এ রূপ নিতে পারে।

ভালোবাসা ও বিজ্ঞান
প্রেমেপড়া মস্তিষ্কের জৈব রসায়নে বিশাল; কিন্তু পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞান প্রেমের তিনটি মৌলিক অংশ চিহ্নিত করেছে। প্রতিটি মস্তিষ্কের রাসায়নিকের একটি অনন্য মিশ্রণ দ্বারা চালিত। প্রেমে পড়া পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আকর্ষণ অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিন দ্বারা চালিত হয়। এই রাসায়নিকগুলো মস্তিষ্কে উত্তেজনাপূর্ণ ও অভিনব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রকাশিত হয়।

দীর্ঘমেয়াদি সংযুক্তি হরমোন এবং মস্তিষ্কের রাসায়নিকের একটি ভিন্ন সেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মস্তিষ্কের অক্সিটোসিন এবং ভাসোপ্রেসিন বন্ধনকে উৎসাহিত করে।

প্রেমে পড়ার প্রক্রিয়াটি কিছু ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চোখ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি ছোট পরিসরের গবেষণায় দেখা যায়, যারা ৩০ মিনিটের জন্য একজন নিখুঁত অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে গভীরভাবে কথা বলেছিল এবং তারপর চার মিনিটের জন্য একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়েছিল, তারা গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী সংযুক্তি অনুভব করেছিল। এমনকি এক জুটি বিয়ে পর্যন্ত করতে গিয়েছিল!

প্রেমের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবে মস্তিষ্ককেও এখন থেকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা, আপনার পছন্দের রাইট পারসনটি জীবনের শেষ পর্যন্ত আপনার সঙ্গে পথ চলবে কি না, তা শুধু মস্তিষ্কের হরমোনই বলতে পারবে। আর এই হরমোনের প্রভাবেই আপনার হৃদয় প্রতিনিয়ত জানান দেবে তার অস্তিত্ব।

ভালোবাসার রঙ
কেউ কেউ বলেন বেদনার রঙ নীল, তবে ভালোবাসার একক কোনো রঙ নেই। ভালোবাসা এক মায়ার ক্যানভাস। সে ক্যানভাসে যে শিল্পী যে রঙে-রূপে চিত্র অঙ্কন করেন, ‘ভালোবাসা’ সে রঙে-রূপেই উজ্জ্বল হয়ে আভা ছড়ায়। অনুভূতি জাগায়। আর এ অনুভূতি জাগায় বলেই ‘ভালোবাসা’ ধরা দেয় একেকজনের কাছে একেক রঙে। ভালোবাসাকে যে রঙে আঁকবেন ‘ভালোবাসা’ সে রঙেই ধরা দেয়। কারোরই কিছু করার থাকে না এ ভালোবাসায়।

তাহলে ভালোবাসার কি কোনো রঙ নেই? ‘ভালোবাসা’ বায়বীয় শব্দ আর রঙহীন অনুভূতি? ভালোবাসায় জয় হয় আবার ভালোবাসারই ক্ষয় হয়। ভালোবাসাকে ভালোবাসার রঙ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে ভালোবাসা বেঁচে থাকে চিরদিন, আবার ভালোবাসাকে ভালোবাসাহীন রঙ দিলে সে নষ্টরঙ হয় আপনাতেই। ভালোবাসার কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই সে রঙিন হয়। তাকে রাঙিয়ে তুলতে হয়। আর মানুষই ভালোবাসাকে রাঙিয়ে তোলে।তবে আপনার ভালোবাসা যাতে নষ্ট না হয়ে যায়,তার জন্য চাই একটু যত্ন। তাহলে জেনে নিন কিভাবে আপনার ভালোকবাসাকে আরো একটু রঙিন রঙে রাঙিয়ে তুলবেন।

একেকজনের একেকরকম দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে ভালোবাসার রঙ। যেহেতু ‘ভালোবাসা’র নিজস্ব রঙ নেই, তাই চিত্রকরের মতো নানান রঙের উপাদান মিশিয়ে একটি রঙ তাকে দিতে হয়।

তোমার ঘরে বাস করে কজনা?
তোমার ঘরে বাস করে কজনা, মন জানো না। এ তো চিরকালের এক জিজ্ঞাসা। একেও ভালো লাগে, ওকের ভালো লাগে। এমন যদি হয়েই যায়, একসঙ্গে যদি দুজনকে ভালো লেগেই যায়, তাহলে দ্বিতীয়জনকে বেছে নেওয়া ঠিক। কারণ প্রথমজনকে ভালোবাসলে, দ্বিতীয়জনের প্রতি ভালোবাসা আসত না।

মনের এমন গোলমেলে অবস্থায় মনোবিজ্ঞান কী বলে? মনোবিজ্ঞান বলছে একসঙ্গে দুজনকে ভালোবাসার ক্ষমতা জন্মগত। তা ছাড়া প্রতিটি মানুষই পৃথক বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ভালো লাগার কোনো গুণ বা স্বভাব থেকে প্রেম বা ভালোবাসার অনুভূতি দুজনের প্রতিই জন্মাতে পারে। পিটুইটারি গ্রন্থি ও ফিল গুড হরমোনই এ জন্য দায়ী। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু যখনই সম্পর্ক বা দাম্পত্যের কথা আসে, তখনই বাধে বিপত্তি। জটিলতা এড়াতে সমাজ কিছু নিয়ম চালু করে এবং সম্পর্কে জুড়ে দেয় যৌনতা। তবে মনে রাখা দরকার, সম্পর্ক মানেই কিন্তু শরীরসর্বস্ব নয়। শরীরে একজনের হয়ে মনে মনে দুজনের হয়ে থাকাও যা, মন ও শরীর দুইভাবেই দুজনের হয়ে থাকায় তেমন কোনো ফারাক নেই।’ কেউ দুজনকেই ভালোবাসি বললে, তাঁকে ‘মিথ্যা’ বলে ধরে নেওয়ার প্রবণতাটিও ঠিক নয়। এখানে অবশ্যই সঙ্গের মানুষটির অভিমান বা কষ্টের বিষয়টি আলাদা প্রসঙ্গ। কিন্তু কেউ দুজনকে ভালোবাসার দাবি করলে তা মিথ্যা নয় এবং প্রকৃতিবিরুদ্ধও নয়। তবে সম্পর্কে সততা একটি বড় বিষয়।



আরো পড়ুন