১৮ মে ২০২৪, শনিবার



ধানের ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না হাওরের কৃষকেরা

তানভীর আহমেদ: তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) || ০৪ মে, ২০২৩, ১২:০৫ পিএম
ধানের ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না হাওরের কৃষকেরা


সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরে বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় খুশি হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান কাটার পর মাড়াই করে সঙ্গে সঙ্গে রোদে শুকিয়ে নির্বিঘ্নে কৃষকরা গোলায় তুলেছেন সোনালি ধান। তবে কৃষকের অভিযোগ, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ টাকার মধ্যে। যদিও সরকার প্রতি কেজি বোরো ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৩০ টাকা। 

কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমে দফায় দফায় ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে। এছাড়া ছিল শ্রমিক সংকট। আবার  বোরো আবাদের শুরু থেকে চারা রোপণ, জমিতে হালচাষ, সেচ দেওয়া, ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো পর্যন্ত প্রচুর খরচ হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, ধান বিক্রি করে তা উঠে আসছে না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। 

হাওরে খুচরা পর্যায়ে ডিজিটাল স্কেলে (ওজন মাপার যন্ত্র) প্রতিমণ ধান ৪২ কেজিতে ব্রি-ধান ২৮ বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০ টাকায়, ব্রি-ধান ২৯ প্রতিমণ বিক্রি করা হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। ব্রি-ধান ৮৮, ৭৪, ৮৯ ও ৬৭ প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯২০ টাকায়। এছাড়া দেশীয় জাতের বোরো, লাখাইয়া, শাইলবোরো, বাশফুল ও রাতা ধান প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০ থেকে ১ হাজার ১২০ টাকায়। 

তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘শুক্রবার (৫ মে) থেকে কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন শুরু হবে। আবেদন করার পর অনলাইনে লটারি হবে, লটারিতে নির্বাচিত কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে ধান ধান বিক্রি করতে পারবেন। ন্যায্যমূল্যে (৩০ টাকা কেজিতে) চলতি মে মাসের ৭ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হবে। যা চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকবে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে রোপণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৯০ হেক্টর এবং ৪ হাজার ৩০ হেক্টর বিভিন্ন গ্রামের পাশের জমিতে রোপণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিবছরই সুবিধাবাদী মহল সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান কিনে বেশি মূল্যে বাজারে বিক্রি করে। এতে করে দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ ও কৃষকরা পড়েন বিপাকে। এই সিন্ডিকেটকে সমূলে উৎপাটন করে কৃষকদেরসহ সবাইকে রক্ষা করতে হবে। 

উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এবার বোরো ধানে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। ধানের বীজ রোপণ থেকে ধানা কাটা, মাড়াই আর শুকানোসহ সারাবছর এত কষ্ট করেও সঠিক মূল্য আমরা  পাই না। এতে প্রতিবছরই কৃষকরা ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’

বড়দল গ্রামের কৃষক সাইকুল মিয়া বলেন, ‘কৃষিবান্ধব সরকার ধানের সন্তোষজনক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা পর্যায়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়৷ এই দামে ধান বিক্রি করে অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে।’

ভৈরবের আশুগঞ্জ থেকে তাহিরপুরে আসা বোরো ধানের পাইকার (ক্রেতা) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমরা ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে ধান কিনেছি। আড়ৎদাররা ধানের দাম না বাড়ালে আমরা বাড়তি দামে ধান কিনতে পারি না। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে ধানের দাম কিছুটা বাড়বে।’

ধান কিনতে আসা খুচরা  ক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘আড়ৎদাররা ধানের দাম কমাইয়া রাখছে, যার কারণে আমরা কম দামে ধান কিনি । ব্রি-২৮ জাতের ধান ১ হাজার বিশ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা মণ ধরে ক্রয় করছি৷’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বি.এম. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘কৃষকরা আগামীকাল থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করবে, পরে লটারির মাধ্যমে অনলাইনে কৃষক নির্বাচিত করা হবে। নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহ করা হবে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন