০২ জুন ২০২৪, রবিবার



আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রীভোগান্তির শেষ কোথায়

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ২০ মে, ২০২৩, ০২:০৫ পিএম
আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রীভোগান্তির শেষ কোথায়


ভৌগলিক কারণেই ব্রাহ্মণাবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রী পারাপার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তবে, এর সঙ্গে মিল রেখে যাত্রীসেবার মান বাড়ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, এই বন্দরে সব সেবার এক জায়গায় মেলে না। একপ্রান্তে কাস্টমস সেবার জন্য যেতে হয় তো, আরে জায়গা যেতে ব্যাগেজ স্ক্যানিংয়ের জন্য। আবার ইমিগ্রেশনের জন্য ছুটতে হয় আরেক জায়গায়। ফলে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া পুরো বন্দর ঘুরেও সুপেয় পানি কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার  মিলছে না।  

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত পার হলেই আগরতলা শহর। আর সেখান থেকে বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশনও খুব কাছে। ফলে পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য ভারতে যাওয়ার জন্য আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করেন। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয় ও যাত্রীসেবা বাড়ালে এই স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়তো।  পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরের ওপর চাপও কমতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। যার অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান। প্রত্যেক যাত্রীকের ভ্রমণ করতে দিতে হয় ৫০০ টাকা। এই বন্দর থেকে সরকার ভ্রমণ কর বাবদ মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উৎসবে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়।


তবে ভারতের আগরতলায় এক ছাদের নিচেই যাত্রীরা ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও ব্যাগে স্ক্যানিং সুবিধা পেলেও আখাউড়া স্থলবন্দরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখানে সোনালী ব্যাংকের বুথে ট্র্যাভেল ট্যাক্স পরিশোধের পর জরাজীর্ণ ভবনের ছোট্ট কক্ষে সম্পন্ন হয় কাস্টমস। এরপর ব্যাগেজ স্ক্যানিংয়ের জন্য যাত্রীদের যেতে হয় বিজিবি চৌকিতে। সেখান থেকে আবার যেতে হয় পরিত্যক্ত ছোট্ট ইমিগ্রেশন ভবনে। বন্দরে এই অব্যবস্থাপনায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ইমিগ্রেশন ভবনে। জরাজীর্ণ ভবনটি প্রায় এক দশক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনের কিছু অংশে পলেস্তরা খসে পড়েছে। তবু ঝুঁকি নিয়ে এখানেই চলে দুই দেশের যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের কাজ। এখানে যাত্রীদের বসার জন্য নেই পর্যাপ্ত জায়গা। নেই সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় গরমে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েই যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়।

ঢাকা থেকে আসা ভারতগামী যাত্রী রাজু আহমেদ বলেন, ‘আগরতলায় এক ছাদের নিচে সব সেবা মিলছে, কিন্তু আখাউড়ায় সেটা হচ্ছে না।’ 

স্বর্ণলতা নামে সিলেটের আরেক যাত্রী বলেন, ‘যাত্রীসেবার স্বার্থে বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা উচিত। যাতে ভারতীয়রা এসে দেখে, আখাউড়ায় যাত্রীসুবিধা তাদের দেশের চেয়েও অনেক ভালো। বিশেষ করে পর্যটক টানতে এটি করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারও করা উচিত।’

 

এ দিকে, যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে একই ছাদের নিচে সকল সেবা দিতে ২০১৬ সালে পুরাতন ইমিগ্রেশন ভবনের পাশে নতুন ছয়তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে স্থাপনা করা যাবে না জানিয়ে কাজে বাধা দেয় বিএসএফ। পরবর্তী সময়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর ভবনের নকশা পরিবর্তন করা হয়। তখন ছয় তলার বদলে দুই তলা ভবন নির্মাণের শর্তে পুনরায় কাজ শুরু হয়। তবে একতলার নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে আবারও বিএসএফের বাধায় বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ।

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ইনচার্জ স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছি না। এটি সত্যি। তবে সাধ্যমতো যাত্রীদের সমস্যাগুলো নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু সমস্যার সমাধানও করেছি। যাত্রীদের এখন যে দুর্ভোগ আছে, সেগুলো নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষে হলে আর থাকবে না।’ 

স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, ‘যাত্রীদের সন্তোষজনক সেবা দিতে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরুর বিষয়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত আছে। আশা করছি শিগগিরই কাজ শুরুর বিষয়ে নির্দেশনা আসবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন