১৮ মে ২০২৪, শনিবার



নির্বাচিত ১০ দর্শনীয় স্থান

নুরজাহান নুর || ২১ নভেম্বর, ২০২২, ০২:৪২ এএম
নির্বাচিত ১০ দর্শনীয় স্থান


ভ্রমণ মানুষের জ্ঞান ভাণ্ডার বিকশিত করে। পৃথিবীতে এমন অনেক পর্যটনকেন্দ্র আছে যার সৌন্দর্য, মোহনীয় দৃশ্য দেখে অবাক হতেই হবে। ভ্রমণ মনের সব বিষাদ, দুশ্চিন্তা, খারাপ লাগা দূর করে।  ভুলিয়ে দেয় আমাদের প্রতিদিনের জগৎ। বিশ্বের সেরা ১০ জায়গার সৌন্দর্যের বিবরণ নিয়ে আমাদের আজকের প্রতিবেদন। 


১.হিমছড়ি, বাংলাদেশ

হিমছড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি পর্যটনস্থল। কক্সবাজার থেকে এটি ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিমছড়ির একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি। হিমছড়িতে একটি জলপ্রপাত রয়েছে, যা এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিবছর দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক হিমছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।


২. হা লং বে, ভিয়েতনামভিয়েতনামের নয়নাভিরাম সুন্দর জায়গা হা লং উপসাগর বা হা লং বে। ভিয়েতনামের কুয়াংনি প্রদেশে উপসাগরটি অবস্থিত। এই উপসাগরের বিশেষত্ব হলো স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের পানি ও ছোট ছোট দ্বীপ। ১৯৯৪ সালে হা লং উপসাগরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং ২০০৭ সালে হা লং বে পৃথিবীর নতুন প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

ভিয়েতনামের হা লং শহরের নামে এই উপসাগরের নাম রাখা হয়েছে হা লং বে। ভিয়েতনামি শব্দ ‘হা লং’ অর্থ ‘ভূমিতে নেমে আসা ড্রাগন’। হা লং উপসাগরের আয়তন ১ হাজার ৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এর সম্পূর্ণ এলাকাজুড়ে প্রায় দুই হাজার পাথরের দ্বীপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি বড়। ‘তুয়ান চাউ’ হা লং উপসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এসব দ্বীপের মূল উপাদান হলো চুনাপাথর। ধারণা করা হয়, প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে চুনাপাথরগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। উপসাগরে কিছু দূর পরপর গোলকধাঁধার মতো চুনাপাথরের পাহাড়ি দ্বীপগুলো ছড়িয়ে রয়েছে। আর ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি অন্যতম পছন্দের জায়গা এই উপসাগর। 


৩.গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম দিকে নেভাদা রাজ্যের সীমানাঘেঁষে কলোরাডো নদীর দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর অন্যতম গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। এটি প্রায় ৪৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও প্রায় ২৯ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই গিরিখাতের গভীরতা গড়ে এক মাইল (১.৮ কিলোমিটার) এর কাছাকাছি। ভূতাত্ত্বিকদের মতে লক্ষ কোটি বছর ধরে কলোরাডো নদীর প্রবাহের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই গিরিখাত। গিরিখাতের অবস্থানের জন্য অ্যারিজোনাকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন স্টেট নামে ডাকা হয়।আকার, আয়তনের হিসেবে এই গিরিখাতটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম হলেও প্রতিবছর প্রায় ৬২ লাখ পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত গিরিখাত।

৪.গিজার পিরামিড, মিশর
নীলনদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত মিশরীয় শহর গিজা। এখানে রয়েছে অমীমাংসিত রহস্যে ঘেরা পিরামিড যাকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে আলোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণের অন্ত নেই। মধ্য যুগের সপ্তমাশ্চর্য এই পিরামিড দেখতে ও তার নানা রহস্য জানতে দূরদুরান্ত থেকে মিশরের এই পিরামিডের রাজ্যে ভিড় করেন পর্যটকরা। গিজার নির্জন মরুভূমিতে দেখা মিলবে পিরামিড, মমি ও প্রাচীন সভ্যতার নানা নিদর্শন। পর্যটকদের জন্য এখানের সবচেয়ে বড় পিরামিড কিং খুফুর সমাধি, দা গ্রেট ফিনিক্স ও সোলার বোট মিউজিয়াম গিজার বিশেষ আকর্ষণ।   

৫.প্যাংগং লেক, লাদাখ
ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ ও চীনের রুতোগ প্রদেশের সীমান্তে ৪ হাজার ৩৫০ মি উচ্চতায় প্যাঙ্গং হ্রদ অবস্থিত। এই হ্রদ ১৩৪ কিমি লম্বা যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ তিব্বতে অবস্থিত। এই হ্রদের পূর্ব দিকটি তিব্বতের অন্তর্গত এবং পশ্চিম প্রান্তটি ভারতের অন্তর্গত। পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছর অনেকেই এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।  

৬.বারোস আইল্যান্ড, মালদ্বীপ
বিশ্বের অসম্ভব কয়েকটি সুন্দর ভ্রমণ স্থানের তালিকায় বহুল আলোচিত এবং পরিচিত একটি নাম হলো মালদ্বীপের বারোস আইল্যান্ড। সত্যিই অসম্ভব সুন্দর বারোস আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্য। ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছোট্ট একটি দেশ মালদ্বীপ। মালদ্বীপের প্রায় সব দ্বীপই অপার সৌন্দর্য নিয়ে সমুদ্রের বুকে স্থান করে নিয়েছে। সবগুলো দ্বীপের সৌন্দর্য-ই দেখার মতো।

পর্যটকদের জন্য একেক দ্বীপে একেক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে মালদ্বীপের এই দ্বীপগুলোতে। তাই তো পর্যটকদের কাছেও মালদ্বীপ একটি অন্যরকম আকর্ষণ। মালদ্বীপের হাজারও দ্বীপের মধ্যে বারোস দ্বীপ অন্যতম সুন্দর একটি দ্বীপ। পর্যটকদের সমুদ্রবিলাসের জন্য এবং নিরালায় সময় কাটানোর জন্য এখানে সমস্ত আয়োজনই রয়েছে। তাই প্রায় সারা বছর ধরে মালদ্বীপে পর্যটকদের আাসা যাওয়া চলতেই থাকে।

৭.নর্দার্ন লাইটস বা অরোরা, আইসল্যান্ড
রাতের বেলা পৃথিবীর আকাশ কালো হয়ে যাবে, একরাশ জ্বলজ্বলে তারা ও নক্ষত্রদের সেখানে জ্বলতে দেখা যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। হঠাৎ যদি সেই রাতের আকাশটা লাল, নীল, সবুজ, গোলাপি ও বেগুনি রঙে ভরে যায়, তাহলে কি ব্যাপারটা অদ্ভুত হবে না? অদ্ভুত হলেও সত্য যে, পৃথিবীর কিছু সংখ্যক দেশে রাতের বেলা এভাবেই কয়েকটি রঙে আকাশ ছেয়ে যায়। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের মানুষদের কাছে এটা অতিসাধারণ একট‍া বিষয়।

মূলত হাই ল্যাটিচিউড বা উঁচু অক্ষাংশের দেশগুলোতে প্রায়ই রাতের বেলা আকাশের কিছু অংশে সবুজ রঙ ছড়িয়ে থাকে। সবুজের সঙ্গে মাঝে মাঝে লাল, নীল, গোলাপি রঙেরও দেখা মিলে। আকাশে এই রঙের ছড়াছড়িকেই বলা হয় নর্দান লাইটস । তবে এর ম‍ূল নাম হচ্ছে অরোরা (Aurora), বাংলায় ‘সুমেরুজ্যোতি’। আর রাতের আকাশে এই আলোর মেলায় পাওয়া যায় মন ভালো করার উৎকৃষ্ট ওষুধ। তাই আপনিও ঘুরে আসতে পারেন আইসল্যান্ডের রঙের মেলায়। 

৮.উইস্টেরিয়া টানেল, জাপান

উইস্টেরিয়া এক ধরনের ফুলের নাম। এই ফুলের গাছ দিয়েই তৈরি উইস্টেরিয়া টানেল। জাপানের কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে ব্যক্তি মালিকানাধীন তৈরি করা হয়েছে এই টানেল। এপ্রিল মে মাসে যখন উইস্টেরিয়া ফুলের মৌসুম তখন এই টানেল সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর অসাধারণ এই টানেল দেখার জন্য ভিড় জমান পর্যটকরা। 

৯.ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড
ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ হলো থাইল্যান্ডের বৃহৎ দ্বীপ ফুকেট এবং থাইল্যান্ডের মালাক্কা উপকূলের মধ্যবর্তী একটি দ্বীপপুঞ্জ। দ্বীপগুলো প্রশাসনিকভাবে ক্রাবি প্রদেশের অংশ। কো ফি ফি ডন হলো এই গোষ্ঠীর বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জনবহুল দ্বীপ। যদিও দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপের সৈকত, কো ফি ফি লে-তেও অনেক লোক দেখতে যায়। ভ্রমণের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা এটি। 

১০. তাজমহল, ভারত 
তাজমহল ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধ নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় ও ইসলামি স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজ আকৃতি রাজকীয় সমাধিটিই বেশি সমাদৃত। তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটিকে ১৯৮৩ সালে  বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই স্থাপত্য। ভ্রমণের জন্যও সবচেয়ে আনন্দদায়ক এই তাজমহল। 



আরো পড়ুন