১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফল কী হবে

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৩:৩১ পিএম
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফল কী হবে


শিল্প, বাণিজ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে ভোক্তাপর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই বৈশ্বিক মন্দা অর্থনীতির বেড়াজালে ভুগছে বাংলাদেশ। তারা আরও বলছেন, শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ালেও এর প্রভাব পড়বে মূলত নিত্যপণ্যের ওপর। এতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে। 

গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিল্প ও বাণিজ্যক ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। গৃহস্থালিতে রান্নার গ্যাস ও গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম এই দফায় বাড়ানো হয়নি। সার উৎপাদন ও চা শিল্পকেও বাদ রাখা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগের ৫ টাকা ০২ পয়সা থেকে ১৭৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা থেকে ৮৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। 

বৃহৎ শিল্প খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে প্রতি ইউনিট বর্তমান ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১৫৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বর্তমান ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগে ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা। এখন তা ১৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। 

তবে আগের মতোই চা শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৯৩ পয়সা, সিএনজি স্টেশনের জন্য ৪৩ টাকা, গৃহস্থালির মিটারের জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা, এক মুখের চুলার জন্য মাসিক ৯৯০ টাকা, দুই মুখের চুলার জন্য মাসিক ১০৮০ টাকা রাখা হয়েছে।

গত জুনে নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বর্তমানে গ্যাসের পাইকারি দাম ১১ টাকা ৯১ পয়সা। ফলে নতুন করে পাইকারি মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা না থাকায় নতুন এই মূল্যবৃদ্ধির মুনাফা ছয়টি বিতরণ কোম্পানির কাছে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এক্সক্লুসিভ ক্যান লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। কিছু দিন আগে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গত এপ্রিল থেকে টানা টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারণে পণ্যের কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে। পণ্য কিনতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।’

সৈয়দ নাসির আরও বলেন, ‘এমনিতেই পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে পণ্যের দাম রাখতে পারছি না। এমন অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াবে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে আমরা পণ্য নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে পারবো কি না, সন্দেহ আছে। আমি মনে করি, এতে আমাদের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ক্ষুদ্র শিল্পকে যেন সাপোর্ট দেওয়া হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ নাসির বলেন, ‘আমরা চাই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ। আমাদের এপেক্স বডি বৃহৎ শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য  ২৫ টাকা নির্ধারণ করতে বলেছিল। কিন্তু সরকার ছোট, মাঝারি, বড় সব পর্যায়ের শিল্পকে একই কাতারে ফেলেছে। এটা ন্যায্যতা বলে বিবেচিত হয়নি। ছোট শিল্পের জন্য সরকারের সুযোগ-সুবিধা বেশি দেওয়া উচিত। অন্যথায় আমরা সাসটেইন করতে পারবো না।’ 

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বর্তমান মূল্যস্ফীতিতে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়ানো অমানবিক। প্রান্তিক ভোক্তা পর্যায়ে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এখন বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমনকি পানির দামও বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত হবে না। যদিও ব্যবসায়ী পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, তবু এর প্রভাব আলটিমেটলি ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে। কারণ পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি হবে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বর্তমানে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, প্রান্তিক পর্যায়ের ভোক্তারা অনেক কষ্টে আছেন। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবেন। যারা বেসরকারি চাকরি করেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই প্রতি বছর বেতন বাড়ে না।’ 

গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যানার্জি লেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর  সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-এলাহি চৌধুরী বলেন, ‘গ্যাসের দাম আমরা বাড়াইনি। যারা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, তাদের প্রশ্ন করুন, তারা কেন গ্যাসের দাম বাড়িয়েছেন।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন