১৯ মে ২০২৪, রবিবার



হেসে খেলেই বাংলাদেশকে হারালো নিউজিল্যান্ড

স্পোর্টস ডেস্ক || ১৩ অক্টোবর, ২০২৩, ১০:১০ পিএম
হেসে খেলেই বাংলাদেশকে হারালো নিউজিল্যান্ড


ইন্ডিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বড় ব্যবধানেই হারলো বাংলাদেশ। অনেকটা হেসে খেলেই জিতে গেল নিউজিল্যান্ড। ব্যাট, বল, ফিল্ডিং- সব বিভাগেই দাপট দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে সব বিভাগেই বাংলাদেশ ছিল নিষ্প্রভ। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এতো অল্প পুঁজি নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে জেতার সাহস কিছুটা দুঃসাহসই বলা চলে। দিন শেষে বাংলাদেশ হারলো ৮ উইকেটে। তখনো হাতে ছিল ৪৩ বল।

চেন্নাই এর চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ইনিংসের প্রথম বলেই লিটনের উইকেট হারিয়ে অশনি সংকেত দিয়েছিল টাইগার ব্যাটাররা। হলোও তাই। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছেন তারা। প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশ করেছিল ৯ উইকেটে ২৪৫ রান। ২৪৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে কাঙ্খিত জয়ের বন্দরে পৌঁছে যান তারা।

নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ভালোই ছিল। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলেই উইকেট পায় বাংলাদেশ। ১৩ বলে ৯ রান করে আউট হন রাবিন্দ্র। প্রথম আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। কিন্তু সতর্ক ব্যাটিং করে যান কনওয়ে এবং কেন উইলিয়ামসন। তারা কোনো তাড়াহুড়ো করেননি। রানের গতি বাড়ানোর চেয়ে তাদের মনোযোগ ছিল উইকেট ধরে রাখার দিকে, যেটা বাংলাদেশ পারেনি। ৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ৩০। নিউজিল্যান্ডের ১ উইকেটে ১৫। দশ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ৪৬, ২ উইকেটে। সেখানে নিউজিল্যান্ডের ছিল ৩৭, ১ উইকেটে। ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল চার উইকেটে ৭৩, নিউজিল্যান্ডের ১ উইকেটে ৬৮। ২০ ওভারে বাংলাদেশের ছিল ৪ উইকেটে ৯৩। নিউজিল্যান্ড সেখানে ৯২ এক উইকেটে। তবে ২১ তম ওভারের প্রথম বলে সাকিব এলবিডিব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন কনওয়েকে। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পেলেন না তিনি।

এরপর ক্রিজে আসেন মিচেল। এসেই প্রথম বলেই ছক্কা। তবে উইলিয়ামসন বরাবরাই ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে গেছেন। তিনি জানতেন উইকেটে টিকে থাকলেই রান আসবে। ২১ ওভারে ১০০ রান আসে নিউজিল্যান্ডের, বাংলাদেশেরও ঠিক তাই। তবে দুই উইকেটে পিছিয়ে বাংলাদেশ। দলীয় ১০০ হওয়ার আগেই মূল ড্যামেজ হয়ে গেছে বাংলাদেশ ইনিংসে। ২৫ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ১২৩/২। অন্যদিকে ২৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের ছিল ১১৮/৪। এখান থেকেই ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ওদিকে নিউজিল্যান্ড যথারীতি ধীর স্থির ব্যাট করতে থাকে। ৩০ ওভার শেষে বাংলাদেশের ছিল ১৫২. ৫ উইকেটে। আর নিউজিল্যান্ড তখন ২ উইকেটে ১৪৬। তার মানে ৩ উইকেটের ব্যাবধান। যদিও ৬ রানে এগিয়ে তখনো বাংলাদেশ। ১২০ বলে নিউজিল্যান্ডের তখন ১০০ রান দরকার।

অবাক ব্যাপার হলো বাংলাদেশের স্পিনাররা বলে কোনো টার্ন পাননি। অথচ নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের বল খেলতেই পারছিল না টাইগার ব্যাটাররা। বিশেষ করে মিরাজের বল ছিল একেবারেই সাদামাটা। তবে সাকিব বা মিরাজরা যখন খাবি খাচ্ছিল, তখনো মাহমুদুল্লাহর হাতে বল দেয়া হয়নি। উচিত ছিল এমন পরস্থিতিতে রিস্ক নেয়া।

৪০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ২২১। সেসময় বাংলাদেশের রান ছিল ৭ উইকেটে ১৮৯। এখানেই দুই দলের পার্থক্য স্পষ্ট। নিউজিল্যান্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ওই পিচে ব্যাট করা কত সহজ। ইনিংসের মাত্র দুটো উইকেট হারিয়েছে তারা। আর বাংলাদেশের ব্যাটিং দিশেহারা।

টাইগার বোলারদের মধ্যে একমাত্র সাকিবকেই করতে হয়েছে ১০ ওভার। অধিনায়ক ১ উইকেট নিয়েছেন ৫৪ রান খরচায়। আরেক উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ; ৮ ওভঅরে তিনি দিয়েছেন ৩৬ রান। মিরাজ ৯ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে পাননি কিছুই। তাসকিনও ৮ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে ছিলেন মাঠ ছেড়েছেন শূন্য হাতে। শরিফুল ৭.৫ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান, তার অর্জন বলতে ১ টা মেডেন।

আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হলো উল্টো। ইনিংসের প্রথম বলেই লিটন আউট। টেন্ট বোল্টের বলে স্যুইপ খেলেছিলেন লিটন। বলে চলে গিয়েছিল ডিপ ফাইন লেগে। সেখানে হেনরি তালুবন্দি করেন ক্যাচ। কোনো রান না করেই দলকে শূন্যতে রেখে বিদায় নিলেন টাইগার ওপেনার লিটন কুমার দাশ।

ওয়ানডাউনে নামেন মিরাজ। তানজিদ ১৭ বলে করেন ১৬ রান। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ এই ওপেনার। তামিম ইকবালে বিকল্প হিসেবে জানজিদের দলভূক্তি ভক্তরা মেনে নিতে পারেন ন। উচিত ছিল তার ব্যাটে কিছু প্রমাণ করার। হচ্ছে না।

এরপর মিরাজ করেন ৩০ রান (৪৬ বলে)। শান্ত আউট হন ৮ বলে ৭ রান করে। সাকিব অবশ্য যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। ৫১ বল খেলে করেছেন ৪০ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৬ করেছেন মুশফিক, খেলেছেন ৭৫ বল। হৃদয় করেছেন ২৫ বলে ১৩ রান। মাহমুদুল্লাহ ৪৯ বলে ৪১ করে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়া তাসকিন করেছেন ১৯ বলে ১৭ রান, ১০ বলে ৪ রান করেছেন মোস্তাফিজ। শরিফুল অপরাজিত ছিলেন ৩ বলে ২ রান করে।

৪০ রানে আউট হন তানজিদ হাসান। তৃতীয় উইকেট পড়ে ৫৬ রানে। আউট হন মিরাজ। ওই রানেই আউট হন শান্ত। পঞ্চম উইকেট পড়ে ১৫২ রানে। ৪০ রান করে তখন প্যাভিলিয়নে ফিরেন অধিনায়ক সাকিব। আশাজাগানিয়া ১০৮ বলে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সাকিব এবং মুশফিক। মুশফিক আউট হন ১৭৫ রানে। ৭ম উইকেট পড়ে ১৮০ রানে, সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন তৌহিদ হৃদয়। ২১৪ রানে তাসকিন আউট হন। দলীয় রান ২২৫ এ আউট হন মোস্তাফিজ। এরপর শেষ উইকেট জুটিতে ২০ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ এবং শরিফুল।

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৩ উইকেট নেন লকি ফারগুসন, ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৪৯। প্লেয়ার অব দি ম্যাচও হয়েছেন তিনি। ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট, ৫৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন ম্যাট হেনরি। স্যান্টনার ১০ ওভারে ৩১ রানে নেন ১ উইকেট। ফিলিপ ২ ওভারে ১৩ রান দিয়ে পান ১ উইকেট। বারিন্দ্র ৭ ওভারে ৩৭ রান দিলেও এদিন কোনো উইকেট পাননি। ড্যারেল মিচেল ১ ওভারে দিয়েছেন ১১ রান।  

বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ভারতের সাথে। ১৯ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় ওই ম্যাচ হবে পুনেতে।

ঢাকা বিজনেস/ইউএইচ



আরো পড়ুন