১৯ মে ২০২৪, রবিবার



নারিকেলের ছোবড়া যাচ্ছে বিদেশে, মিলছে চাকরিও

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ০৯ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
নারিকেলের ছোবড়া যাচ্ছে বিদেশে, মিলছে চাকরিও


নারিকেলের ছোবড়া মানে অপ্রয়োজনীয় বস্তু। আগে গ্রামাঞ্চলে নারিকেল থেকে ছোবড়া ছাড়িয়ে তা ফেলে দেওয়া হতো। এখন সেই ছোবড়া থেকেই তৈরি হচ্ছে তোশকের ভেতরের অংশ। যা কয়ার ফেল্ট নামে পরিচিত।  পাশাপাশি ছোবড়ার গুঁড়োও মূল্যবান হয়ে উঠেছে। বাগেরহাটে এই গুঁড়োকে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। শুরুতেই এসব পণ্যের বাজার পাওয়া গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। আর এসব ছোবড়ার গুঁড়ো রপ্তানি করবে বাগেরহাটের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরীতে অবস্থিত ‘ন্যাচারাল ফাইবার’। 

প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সাল থেকে ‘কয়ার ফেল্ট’ (ম্যাট্রেস তৈরির কাঁচামাল) তৈরি করে আসছে। সোয়ান, আখতার, পারটেক্স, টাইগারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ম্যাট্রেস উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে এগুলো। এটি মূলত নারকেলের ফেলে দেওয়া ছোবড়ার আঁশ দিয়ে তৈরি হয়। মানভেদে প্রতি ঘনফুট কয়ার ফেল্টের দাম ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

নারকেলের ছোবড়া থেকে আঁশ ছাড়াতে গেলে প্রচুর পরিমাণে গুঁড়া বের হয়। সেই গুঁড়া রোদে শুকিয়ে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চাপ দিয়ে ব্লকের মতো প্রস্তুত করা হয়। সেই ব্লক ‘কয়ার পিট’ নামে পরিচিত। দেশের বাজারে কয়ার ফেল্টের চাহিদা মেটানোর পর এখন নতুন পণ্য ‘কয়ার পিট’ প্লাস্টিকে মুড়ে রপ্তানি করা হবে বিদেশে। বিভিন্ন দেশে গবাদি পশুপালন ফার্মে ও কৃষিকাজে মাটির বিকল্প হিসেবে কয়ার পিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবারের  স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজ আহমেদ জানান, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে পণ্য তৈরিতে ভারত বরাবরই সিদ্ধহস্ত। তাই ভারতের হরিয়ানা, দিল্লি, কেরালা, তামিলনাড়ু ও ওডিশা চষে বেড়ান তিনি। সেখানকার কারখানায় ছোবড়া দিয়ে কয়ার ফেল্ট তৈরির কৌশল দেখলেন। পরে কয়েকজন শ্রমিককে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের কাজ শিখিয়ে আনেন বাগেরহাটের এই উদ্যোক্তা। 

২০০২ সালে দেশে ফিরে নিজের চেষ্টায়  স্থানীয় উপকরণ ও মিস্ত্রি দিয়ে কয়ার ফেল্টের যন্ত্রপাতি তৈরি করে ফেলেন মোস্তাফিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘উৎপাদন শুরু করতে আমাদের প্রায় তিন বছর লেগে যায়। তবে এর আগেই কয়েকটি ম্যাট্রেসের কারখানা আমাদের ক্রয় আদেশ দিয়ে দেয়। পরে সেটি বাড়তেই থাকে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে আমাদের উৎপাদনক্ষমতা অনেক কম। তাই ক্রয় আদেশ ফিরিয়ে দিতে হয়।’ 

দেশে বর্তমানে কয়ার ফেল্টের চাহিদা মাসে প্রায় ৩০ হাজার ঘনফুটের মধ্যে ৫ থেকে ৬ হাজার ঘনফুট উৎপাদন হয় বাগেরহাটের ন্যাচারাল ফাইবার ফ্যাক্টরিতে।

ছোবড়ার পর ছোবড়ার গুঁড়া ন্যাচারাল ফাইবার প্রতিষ্ঠানটিকে নারকেলের ছোবড়ার আঁশ সরবরাহ দিতে আশপাশে ছোট ছোট কিছু কারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু পণ্যটির চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় এই ছোট কারখানাগুলোর সরবরাহে চাহিদা মিটছিল না। এ কারণে গত বছর বাগেরহাটের সদর উপজেলার কররী গ্রামে ছোবড়া থেকে আঁশ তৈরির কারখানা স্থাপন করে ন্যাচারাল ফাইবার। এই কারখানা করতে গিয়ে নতুন পরিকল্পনা পেয়ে বসে মোস্তাফিজ আহমেদকে। এক হাজার নারকেলের ছোবড়ায় ৮০ কেজি আঁশ পাওয়া যায়। একই সঙ্গে ফেলনা উপজাত হিসেবে বের হয় ১৬০ কেজির মতো গুঁড়ো।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউএসএআইডির এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইন (এভিসি) প্রজেক্টের আওতায় জার্মানের ফ্রাংকফুর্ট ফেয়ারে অংশ নেন মোস্তাফিজ।  তিনি গিয়েছিলাম মূলত কয়ার ফেল্টের ক্রেতা খুঁজতে। সেখানেই প্রথম বিশ্ববাজারে কয়ার পিটের চাহিদার বিষয়ে জানতে পারেন তিনি।

মোস্তাফিজ আহমেদ বললেন, ‘ছোবড়ার গুঁড়ো দিয়ে আমরা কয়ার পিট তৈরির চিন্তাভাবনা করলাম। কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই কয়ার পিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করে উৎপাদন শুরু করি। প্রথমেই দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০ হাজার ডলারের কয়ার পিট রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে অনেক অর্ডার হাতে রয়েছে।  

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন