২৯ জুন ২০২৪, শনিবার



উদয় হাকিমের কলাম
প্রিন্ট

ফরেস্ট ফিল্ড ও কাঠবিড়ালী

উদয় হাকিম, নটিংহ্যাম (ইংল্যান্ড) থেকে || ০২ জুন, ২০২৩, ০১:০৬ পিএম
ফরেস্ট ফিল্ড ও কাঠবিড়ালী


নটিংহ্যামে উঠেছি হাইসন গ্রিনে। এটি ফরেস্ট ফিন্ড এলাকায়। সিটি সেন্টারকে বলা হয় নটিংহ্যাম শহরের কেন্দ্র। এটি সিটি সেন্টার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে। বলা চলে শহরের মাঝখানেই এর অবস্থান। 

বিকেল বেলা সিটি সেন্টারে যাবো। মন চাইলো হেঁটে যাই। প্রায় দুই কিলো রাস্তা। গাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। বাসা থেকে বের হতেই বিশাল এক খোলা জায়গা। এর নামই ফরেস্ট ফিল্ড। সঙ্গেই ট্রাম স্টেশন, বাস স্টপ। 

পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা্ বিশাল মাঠ। এই এলাকাটি ২০০ বছর আগে জঙ্গলে ঢাকা ছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে বানানো হয় রেসকোর্স। ঘোড়া দৌড়ানোর মাঠ। কাছেই রবিনহুড ক্যাসেল। রবিনহুডও থাকতেন পাশের জঙ্গলে। যেটি সিটি সেন্টারের সঙ্গেই পশ্চিম পাশে।

ফরেস্ট ফিল্ড এখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমেই চোখে পড়লো বিশাল কার পার্কিং এরিয়া। এত বিশাল কার পার্কিং এলাকা আগে কখনো দেখিনি। ঢাকা শেরে বাংলা নগরে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠের মতো। জানতে পারলাম-এটি ফ্রি পার্কিং এলাকা। যারা বাইরে থেকে শহরে আসেন, তারা এখানে বিনে পয়সায় গাড়ি রেখে নিজেদের কাজে যেতে পারেন। যে কারণে শত শত গাড়ি থাকে ওখানে সবসময়। কেউ চাইলে ওখানে গাড়ি রেখে বাসায়ও চলে যেতে পারেন। একটা গাড়িও কেউ ছোঁয় না, চোর তো বহু দূরের কথা। মাত্র ৫০০ পাউন্ডে গাড়ি কেনা যায়, তাই চুরি করে কেউ বিপদে পড়তে চায় না। 


মনে পড়লো, বাংলাদেশের কথা। পুলিশ প্রায়ই রাস্তার গাড়ি ধরে ধরে মামলা দেয়। কারণ অবৈধ পার্কিং। তাহলে বৈধ পার্কিং কোথায়? এটা বললে কোনো উত্তর নেই। বৈধ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করেই মামলা মামলা খেলা। 

পার্কিং এরিয়ার পূর্ব পাশে বিশাল প্লে গ্রাউন্ড। আমাদের দেশের মতো বালুর মাঠ না। নিকেতন পার্কের মতো কাঁচ দিয়ে ঘেরাও করে অস্বাস্থ্যকর করা হয়নি। কেউ চাইলেও দখলও করতে পারবে না। কোনো সরকারি আদেশে গাছ কেটে স্থাপনা বা রেষ্টুরেন্ট করা হয় না। মাঠের পুরোটাই সবুজ ঘাসে ছাওয়া। যে কেউ সেখানে গিয়ে খেলতে পারে। কিছু কিশোর-তরুণকে ক্রিকেট খেলতে দেখলাম। আহা, এরকম একটা খোলা খেলার মাঠ বাংলাদেশে একটাও নেই। অথচ যুক্তরাজ্যের প্রতিটি মহল্লায় খেলার মাঠ, হাঁটার জায়গা, পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, শিশুপার্ক, শরীরচর্চা-কেন্দ্র, কালচারাল সেন্টার রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে উন্নয়নের ঠেলায়, নেই এসবের বালাই। 

খোলা মাঠের পরেই বেশ কয়েকটি প্লে গ্রাউন্ড। বাস্কেটবল খেলছিল কিছু তরুণ। পাশেই কয়েকটি ফুটবল খেলার মাঠ। এর পূর্ব পাশে স্টেডিয়ামের মতো খুব সাজানো গোছানো তিনটা ফুটবল গ্রাউন্ড। সেখানে হয়তো করপোরেট বা ক্লাবের খেলাগুলো হয়। 


মাঠের দক্ষিণ পাশে বিশাল গ্রেভ ইয়ার্ড-করবস্থান। মন চাইলো কিছুক্ষণ কবস্থানে গিয়ে বসে থাকি। মনটা ভালো হয়ে যাবে। হাজার হাজার কবর রয়েছে সেখানে। নানা রকমের পাথরে খোদাই করা মৃতের নাম। একেকটা কবর একেক রকম করে বাঁধানো। কোনো কবরে শুধু একটা করে পাতার মতো পাথর বসানো। কোনোটাতে শুধু মাটিতে ক্রস পোতা। কবরস্থানে গেটে একটা গাড়ি দাঁড়ানো। তার ভেতরে একলোক বসে। সে-ই এখানকার কেয়ারটেকার। সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র ৫ মিনিট বাকি ছিল। তাই বেশিক্ষণ সেখানে থাকা হলো না। 

একটা কথা বলে রাখি, ক’দিন ধরে লক্ষ করছিলাম বিষয়টা। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড-এসব জায়গায় সূর্য ওঠে ভোর ৪টার দিকে। ওদিকে বেলা ডুবে ১১ টার দিকে। কাজেই ছয়টা মানে কিন্তু তখনো বেলা ছিল অনেক। চারদিকে দুপুরের কড়া রোদ। 


ফরেস্ট ফিল্ডের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে হাঁটা শুরু করলাম। অনেক প্রশস্ত রাস্তা। শুধু হাঁটা যাবে সেখানে। সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা। শহরের রাস্তাগুলোতেও দেখিছিলাম, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন। পুরো গ্রাইন্ডের দক্ষিণ পাশটায় বিশাল গ্রিন এরিয়া। বড় বড় পুরনো গাছ। তার ভেতর দিয়ে বাঁধানো রাস্তা। বসার বেঞ্চ রয়েছে। মাঝখানের সবজ ঘাস সাইজ করে কাটা। অনেক লোক বৈকালিক ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কুকুর, কারও সঙ্গে বিড়াল। এশিয়ানরা অবশ্য পেট সঙ্গে রাখে না। কেউ দৌড়াচ্ছিলেন। সারা দুনিয়াতেই মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। 

ফরেস্ট ফিল্ড পার হয়ে আরও দক্ষিণে নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি এরিয়াতে ঢুকলাম। সেখানেও খুব সুন্দর সাজানো একটি বাগান। বনছাওয়া পথ। দুপাশে ফুলের গাছ। দক্ষিণে অগভীর ছোট কৃত্রিম পুকুর। সেখানে কিছু হাঁস খেলা করছিল। এর পূর্ব দিকে পাখিদের থাকার জায়গা। ছিল অসংখ্য কাঠবিড়ালী, সুখের পায়রা-কবুতর। 

বাঁধানো বনপথ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম-একটা কাঠবিড়ালী আমাকে ফলো করছিল। মনে হলো ওর খিদে লেগেছে। এক টুকরো আলু ভাজা দিলাম। লাঠির মতো ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের টুকরো নিয়ে খেতে শুরু করলো। আরও কাছে এসে সখ্য গড়তে চাইলো। 

হায় কাঠবিড়ালী! তোমার এখানে অভয়ারণ্য। তোমার সুখের অভাব নেই। তাই দুনিয়ার মানুষ এখানে আসে সুখের সন্ধানে। সুখ আর নিশ্চিত নিরাপদ জীবনের জন্য সবাই ব্যাকুল। 

 



আরো পড়ুন