২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্ট কমলো কেন (ভিডিও)

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৬ আগস্ট, ২০২৩, ০৬:৩৮ এএম
পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্ট কমলো কেন (ভিডিও)


গত পাঁচ বছরে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বলে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও)-এর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমে  গেছে। পাশাপাশি বিও অ্যাকাউন্ট কমে যাওয়ার পেছনে শেয়ারবাজারের নাজুক পরিস্থিতিকেও দায়ী করেছেন তারা।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এক সময় বছরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইপিও-এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতো। এসব কোম্পানির শেয়ার পেতে অনেক বিনিয়োগকারী বিও অ্যাকাউন্ট খুলে আইপিওতে আবেদন করতেন। লটারি পদ্ধতি থাকায় ওই সময় একজন বিনিয়োগকারী নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের নামে একাধিক বিও অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ার পেতে আইপিওতে আবেদন করতেন। লটারির মাধ্যমে যারা শেয়ার পেতেন, তারা অনেক লাভবান হতেন। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে লটারি পদ্ধতি বাতিল হয়েছে। 

এখন আইপিওতে বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আবেদন করা প্রত্যেকে বিনিয়োগকারী আনুপাতিক হারে শেয়ার পান। কিন্তু প্রত্যেকেই শেয়ার পেলেও পরিমাণে অনেক কম পেয়ে থাকে। যা দিয়ে তারা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী লাভবান হয় না। আবার গত কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইপিও আসেনি পুঁজিবাজারে। অর্থাৎ আইপিও’র সংখ্যা কমে গেছে।  এতে আইপিও-নির্ভর বিনিয়োগকারীদের অনেকেই  তাদের বিও অ্যাকাউন্ট  নবায়ন করেননি। ফলে তাদের বিও অ্যাকাউন্ট ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেছে। কারও কারও বন্ধ হয়ে  গেছে।

সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৯টি। পুরুষ বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৯ লাখ ২৭ হাজার ১৭৬টি। নারী বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৮টি। ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট মোট বিও অ্যাকাউন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯২টি। এক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে মোট বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৭টি। অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট পুরুষ বিও অ্যাকাউন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫ হাজার ৮৬৭টি। এই হিসাবে গত পাঁচ বছরে পুরুষ বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে ৬ লাখ ২১ হাজার ৩০৯টি।  ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ। নারী বিও অ্যাকাউন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার ৭২৪টি। এভাবে গত পাঁচ বছরে নারীর বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৩৪টি।  অর্থাৎ ৩৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আইপিও-নির্ভর বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে গেছে। যে কারণে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও কমে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাজারে গুণগত মানের কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’  

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, আগে একজন বিনিয়োগকারী আত্মীয়-স্বজনের নামে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে ব্রোকারেজ হাউজে ক্যাশ টাকা লেনদেন করতে পারতেন। কিন্তু সেই পদ্ধতি বাতিল হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়। এ কারণে অনেকেই এখন আর আত্মীয়-স্বজনের নামে একাধিক বিও অ্যাকাউন্ট খোলায় খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। এ কারণেও বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘শুধু বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ানোর জন্য কোন কর্মসূচি বা ক্যাম্পেইনের প্রয়োজন নেই। বিও অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়াতে হলে বাজারে ভালো সিকিউরিটিজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে ভালো কোম্পানির সংখ্যা। বাজারের গুণগত সম্প্রসারণ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তবেই বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়বে। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কী কারণে বিও অ্যাকাউন্ট কমে  গেছে, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা করা হয়নি। আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই নিয়ে কোনো কাজ করেনি। তবে আমরা মনে করি দীর্ঘদিন ধরে অনেক ইনঅ্যাকটিভ বিও অ্যাকাউন্ট পড়ে ছিল, যেগুলো রিনিউ না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আগামীতে বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে। বাড়বে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/ <>



আরো পড়ুন