২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের পুনর্মিলনে একদিন

রকিবুল হাসান || ০৪ জুলাই, ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের পুনর্মিলনে একদিন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের পুনর্মিল অনুষ্ঠানে লেখকসহ অন্যরা


উৎসবের এই দিনটার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব অপেক্ষা করেছিলাম। ঈদের তৃতীয় দিন, ১ জুলাই ২০২৩। বাংলা বিভাগের প্রথম পুনর্মিলন। সেই কবে ছেড়ে এসেছি যৌবনের টগবগে স্মৃতিময় ক্যাম্পাস। যাওয়া হয়নি আর কখনোই। না, একবার বোধহয় ক্ষণিক মুহূর্তের জন্য গিয়েছিলাম, পরম স্নেহভাজন ড. মাসুদ রহমানের কাছে। তিনি তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক। এই বিভাগেরই কৃতী ছাত্র ছিলেন। তারপর আর যাওয়া হয়নি, যতটুকু মনে পড়ে। এরপর এই প্রথম যাওয়া হলো উৎসবের রঙে। এরকম উৎসবের রঙটাও এই প্রথম। বৃষ্টি আদর বুনেছে উৎসবের রঙে সারাদিন। তাতে মায়াবী গন্ধ ছিল মুগ্ধতার।

বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের আন্তরিক আতিথিয়তা ছিল হৃদয়স্পর্শী। তাঁর প্রাণবন্ত চেষ্টা ও সহযোগিতায় চমৎকার এ উৎসবের মধ্য দিয়ে তিনি এ বিভাগের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজেই এই ইতিহাসের নায়ক। প্রথম পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত হলো তাঁর সময়কালে, অনুষ্ঠানের মান্যবর সভাপতিও ছিলেন। এ এক পরম প্রাপ্তি তাঁর। আমরা আনন্দিত, গর্বিত। বাংলা বিভাগের শিক্ষক নাজমুল হোসেন অনুষ্ঠানে ছিলেন সব্যসাচী ব্যক্তিত্ব। অনুষ্ঠান পরিচালনা, দিক-নির্দেশনা, গানে, ব্যবস্থাপনা- সর্বক্ষেত্রে আলো ছড়িয়েছেন। মীর মশাররফ হোসেনের উত্তরসূরি অধ্যাপক মীর মাহবুব উস সাদিকের বক্তৃতা মুগ্ধ করেছে। আমি তাঁর অবয়বে মীর মশাররফ হোসেনকে খুঁজেছি, যেন তাঁকেই দেখেছি, উত্তরসূরি মীর মাহবুবের মধ্যে। ঝিনাইদহ সরকারি কলেজের অধ্যাপক আবু তাহেরের আবেগঘন বক্তৃতা মুগ্ধ করেছে। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে আমার শিক্ষক প্রফেসর আব্দুস সাত্তার, গীতিকার আবু জাফর, গবেষক প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন প্রমুখ শিক্ষকদের গভীর শ্রদ্ধায় অনুভব করেছি। 

আমাদের সময়কালের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই হতাশাজনক। আনসার ভাই (আনসার হোসেন, উপাধ্যক্ষ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ), রেজাউল ভাই (অধ্যাপক ড. শেখ রেজাউল করিম (বাংলা বিভাগ, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়) ছাড়া আর কাউকে পাইনি। অথচ সেই সময়ের অনেকেই বর্তমানে জাতীয় পর্য়ায়ে অধ্যাপনা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। তাঁদের উপস্থিতি ঘটলে অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি বাড়তো অনেকখানি। আনসার ভাই ও ড. রেজাউল ভাই আমাকে পরম স্নেহে যেভাবে বুকে টেনে নিয়েছেন, তা পরম শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। আমার সাহিত্যচর্চায় সেই সময়ে আমার প্রেরণা ছিলেন দুজনেই।


আনসার ভাই তাঁর ‘পানসি’ পত্রিকায় আমার কবিতা ‘আমি আর রক্ত চাই না’ প্রকাশ করে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ড. রেজাউল করিম ভাই তাঁর সম্পাদিত ‘ইন্টারন্যাশনাল’ পত্রিকায় আমার অনেক কবিতা ছেপেছেন। লেখালেখিতে তাগিদ দিয়েছেন সবসময়, এখনো তা অব্যাহত। 

অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দৌড়ে কাছে এসে জড়িয়ে নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তরুণ কৃতী গবেষক অনুজতুল্য ইমাম মেহেদী। সঙ্গে সঙ্গে সেলফি। খুব ভালো লেগেছে। মুহূর্ত পরেই পুথি এসে পরম শ্রদ্ধায় অডিটোরিয়ামে নিয়ে গিয়েছেন। সেলফি তুলেছেন আনন্দে তিনিও। তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। তুষার, বাসার, নয়ন, রবিনসহ একঝাঁক মুখ গভীর ভালোবাসা ও আবেগে প্রায় সারাটা সময় আমাকে ঘিরে ছিল। তুষারের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমি আর তুষার কিছুদিন এক সঙ্গে ক্যাফেটারিয়ার পেছনের রুমে ছিলাম। ও তখন ইন্টারমিডিয়েট পড়তো। আমি অনার্স ফাইনাল। অনুষ্ঠানে আমাকে বিশেষ অতিথির যে সম্মান দেওয়া হয়েছে, এ সম্মান সারাটা জীবন আমি মাথায় করে রাখবো। ঔপন্যাসিক-ছোটগল্পকার পিন্টু রহমান তাঁর উপন্যাস ‘পুরাণভূমি’ উপহার দিয়ে কৃতজ্ঞতায় ভালোবাসায় আবদ্ধ করেছেন। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল মনোমুগ্ধকর। বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয় সারথির কথা। গানে নৃত্যে মুগ্ধতায় সবার দৃষ্টি কেড়েছে। মধু মামুনের অভিনয় ছিল অসাধারণ। রবিনও মুগ্ধ করেছে সবাইকে। সব কিছু মিলিয়ে নিজেকে হারানোর দিন ছিল এ দিন আমাদের। 

আরও ভালো লেগেছে, অনুষ্ঠান শেষে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে আমরা কফি খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাই। অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, আমিনুল ইসলাম তুষার, নয়ন, পুথি, সারথি সহ আমরা প্রায় বিশ জন সে আড্ডায় স্মৃতিচারণ আর জীবনের গল্পে মেতে উঠি। তখন আমার স্ত্রী মিলি ও কন্যা কাব্য গাড়ি নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে পান্টির রাজাপুরে। আমি ভেতরে ভেতরে অপেক্ষা করছি, তাঁদের ফেরার। এটি কথার ভেতর দিয়ে কীভাবে বুঝে ফেলেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। তিনি কী গভীর আন্তরিকতায় আমার স্ত্রী-কন্যার জন্য অপেক্ষা করলেন। সঙ্গে ড. রেজাউল করিম, নয়ন, পুথিরা তো ছিলই। ওরা আসার পরে সবাই একসঙ্গে ছবি ওঠেন। এ এক বড় সম্মান আমার জন্য। কৃতজ্ঞতা কীভাবে জানালে যথাযথ কৃতজ্ঞতা জানানো হবে, জানি না। তবে অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

এমন দিন ফিরে আসুক নতুন আনন্দে, নতুন যৌবনে। 



আরো পড়ুন