২৯ জুন ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি তিতাস, তবে...

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৯ মে, ২০২৩, ০১:০৫ পিএম
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি তিতাস, তবে...


‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বর্তমানে মিটারবিহীন সিংগেল-ডাবল বার্নার উভয় চুলার জন্য প্রতিমাসে গ্যাস ব্যবহারের যে পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে, তার পরিমাণ বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি)-এর কাছে প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস। এই গ্যাসের এই পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। 

বিইআরসি সূত্রে জানায়, ২০২২ সালের জুনে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।  এ সময় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য মাসে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ডাবল বার্নারে ৬০ ঘনমিটার ও সিংগের বার্নারে ৫৫ ঘনমিটার ধরা হয়। এতে ডাবল বার্নারের মাসিক বিল ১ হাজার ৮০ টাকা এবং সিংগেল বার্নারের বিল ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন তিতাস মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য মাসে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ডাবল বার্নারে ৮৮ দশমিক ৪ ঘনমিটার এবং সিংগেল বার্নারের জন্য ৭৬ দশমিক ৭ ঘনমিটার নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।

গ্যাসের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাবকে অযৌক্তি বলছে ক্যাব।  তারা বলছে, তিতাসকে ২০১৫ সালে পাইপলাইনের সব গ্যাস ব্যবহারকারীকে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে বিইআরসি। তিতাস সেই আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। গত বছর গ্যাসের দাম নিয়ে গণশুনানির সময় তিতাসের ৩ লাখ ২০ হাজার ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের গ্যাস বিল বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মিটারবিহীন ডাবল বার্নারের গ্রাহকেরা প্রতিমাসে গড়ে ৪৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। এর পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে ৬০ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল।  

এদিকে, তিতাস বলছে, একই বাসায় একাধিক পরিবারের সাবলেট থেকে বেশি রান্না করে। ফলে গ্যাসের অপব্যবহার বেশি হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিইআরসিকে চিঠি দিয়ে তিতাসের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছি। গ্যাস নিয়ে তিতাস যে দুর্নীতি করে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিইআরসিকে আমরা ৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে তিতাসের চুরি, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও প্রিপেইড মিটার পুরোপুরি স্থাপন না করা পর্যন্ত  তিতাসকে যে সব সুবিধা দিয়ে আসছে বিইআরসি, তা স্থগিত করতে হবে।’

ড. শামসুল আলম আরও বলেন, ‘বিইআরসির আদেশ না মানার কারণে ৪২ ধারার আওতায় জরিমানা হিসেবে অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ডের যে বিধান রয়েছে, তা তিতাসের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে বলেছি।  তিতাসের বোর্ডে যে সব কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের আর্থিক সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধা স্থগিত রাখার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে বিইআরসির কাছে।’

সম্প্রতি গণমাধ্যমে তিতাসের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সংক্রান্ত যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেই প্রতিবেদনের তথ্য ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তিতাসের উপ-ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করিনি। আমরা বিইআরসিকে বলেছি, আগে ডাবল বার্নার ও সিংগেল বার্নারের জন্য গ্যাসের যে পরিমাণ নির্ধারণ করা ছিল, তা  বহাল রাখার জন্য। কারণ বর্তমানে বিইআরসি আগের চেয়ে কমিয়ে ডাবল বার্নারের জন্য ৬০ ঘনমিটার এবং সিংগেল বার্নারের জন্য ৫৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে গ্রাহকরা আরও বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন।’

বিইআরসি’র পরিচালক(গ্যাস) মো. আলী বিশ্বাস ঢাকা বিজনেসকে বলেন,  ‘একই বাসায় একাধিক পরিবারের সাবলেট থেকে বেশি রান্নার ফলে গ্যাসের ব্যবহারের বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে তিতাস। আবার এমনও আছে, বছরের পর বছর পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার করতে পারছেন না অনেক গ্রাহক। তারা গ্যাসের বিলও দিচ্ছেন। আবার আবার গ্যাস না থাকার কারণে সিলিন্ডারও ব্যবহার করছেন। সুতরাং সব বিষয়েই আমাদের দেখতে হচ্ছে।’

মো. আলী বিশ্বাস আরও বলেন, ‘তিতাস যে প্রস্তাব করেছে, সে ব্যাপারে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর একটি বিষয়, তিতাস গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি। তাদের চিঠির কোথাও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা নেই। তারা মূলত মিটারবিহীন গ্যাস ব্যবহারকারীদের গ্যাসের ঘনমিটার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন