চুয়াডাঙ্গা জেলার মাটি পলিমিশ্রিত এঁটেল, এঁটেল-দোঁয়াশ হওয়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। ভালো ফলন, ভালো দাম এবং খরচের তুলনায় অধিক মুনাফা হওয়ার কারণে এই জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে ভুট্টা চাষ। কিন্তু এ বছর অজ্ঞাত রোগের কারণে ভুট্টা গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। কৃষকরা বলছেন, ভুট্টার মোচা আসার পর গাছ নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে। শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভুট্টা গাছে যে রোগটা দেখা গেছে তা আমরা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছি। আরও গবেষণা চলমান রয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ভুট্টার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৫৩০ হেক্টর থাকলেও তা ছাড়িয়ে ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার করা হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ১৮০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ১৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, দামুড়হুদায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর, জীবননগরে ৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ হয়েছে। বহুমুখী ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা এখন চুয়াডাঙ্গার প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভুট্টার ব্যাপক ফলন হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে অজ্ঞাত রোগ। চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলা ও দামুড়হুদা উপজেলার কিছু মাঠে এখন পর্যন্ত ২৩ হেক্টর জমিতে এ রোগ বিস্তার লাভ করছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুট্টার মোচা পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই শুকিয়ে মারা যাচ্ছে গাছ। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ লক্ষণ দেখে ধারণা করছে এ রোগের নাম ‘ফিউজারিয়াম স্টক রট’।
গত তিন বছর ধরে এ জেলার কিছু কিছু মাঠে এ রোগ স্বল্পমাত্রায় দেখা গেলেও এবছর বেশি বিস্তার হয়েছে। ভুট্টার ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হয়ে সবুজ ভুট্টার গাছ বিবর্ণ হয়ে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে গাছ মরে গেলে বিঘা প্রতি প্রায় অর্ধ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।
বেগমপুর ইউনিয়নের কোটালি গ্রামের ভুট্টাচাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টার মোচা আসার পর গাছ নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে কোনো সমস্যা হয় না। আমি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি, তার মধ্যে ১ বিঘা পরিমাণ ভুট্টাও আমি পাবো না।’
একই গ্রামের ভুট্টাচাষি রানা আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের ভুট্টার এই রোগ আরও তিন বছর আগে থেকে দেখা যাচ্ছে। এর আগে অল্প পরিমাণ ছিল, কিন্তু এ বছর ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। এর আগে যা ক্ষতি হয়েছে তা অনেকে পুষিয়ে নিয়েছে পরিমাণ অল্প থাকার কারণে। কিন্তু এ বছর যা খরচ হয়েছে সে টাকাও উঠবে না।’
ভুট্টাচাষি আক্তার আলী বলেন, ‘যখন ভুট্টার মোচা বের হয়, তখনই গাছ মরা শুরু হয়েছে। এ রোগ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করেছি কিন্তু কোনো উপকার পাচ্ছি না। আমরা আর কিছু দিন পরই ফসল ঘরে তুলতাম। গাছ মরে যাওয়ার কারণে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিন বিন্তে আজিজ বলেন, ‘ভুট্টা গাছে যে রোগটা দেখা গেছে তা আমরা প্রাথমিকভাবে “ফিউজারিয়াম স্টক রট” নামে চিহ্নিত করেছি। এটা নিয়ে আমাদের আরও বিস্তর গবেষণা চলমান রয়েছে। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করছি। যে সকল মাঠে এ রোগ দেখা যাচ্ছে, আমরা সেসব মাঠে পরবর্তী বছরে ভুট্টা চাষ না করার জন্য বলেছি। এবং বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে বলা হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। কৃষকেদের নানাভাবে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ভাইরাসজনিত এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে ভুট্টা চাষিদের গত বছরও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অনেক কৃষকই পরামর্শ মানছেন না। এছাড়া আগামীতে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় বীজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এম