২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

মিরাশা চাষি বাজারে দিনে রসুন বিক্রি ২ কোটি টাকা

সাইফুল ইসলাম, শরীয়তপুর || ২৫ মার্চ, ২০২৩, ১০:০৩ এএম
মিরাশা চাষি বাজারে দিনে রসুন বিক্রি ২ কোটি টাকা


মিরাশা চাষি বাজারে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার শুধু রসুনই বিক্রি হয়। তারপর রয়েছে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। স্থানীয় কৃষক, আড়তদার ও পাইকারদের পদচারণায় প্রতিদিন মুখরিত থাকছে কৃষকদের এই বাজারটি। পদ্মা সেতুর কারণে যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কারণেই সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা সহজে এ বাজারে আসতে পারছেন বলে জানান আড়তদাররা। 

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মিরাশা চাষি বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকরা রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচ. টমেটো, করলা, বেগুন, ধনেপাতাসহ নিজেদের চাষের বিভিন্ন মশলা ও শাক-সবজি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন এই বাজারে। 

বাজারে মশলা ও শাক সবজির প্রায় ২ শতাধিক পাইকারি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে রসুন কেনাবেচা হয় ৭০টি দোকানে। এসব দোকানে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।

স্থানীয় চাষি নুরুল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‌‘বিঘা প্রতি আমার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির রসুন ৫০ হাজার পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছি। গত ৫ বছর ধরে লোকসান করতেছি। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় আমরা ভালো আছি। সরকার যদি আমদানি না করে, তবে কৃষকরা ভালো থাকে, জণগণও ভালো থাকে।’

আড়তদার আব্দুল জলিল বলেন, ‘কাঁচা রসুনের বাজার দর বর্তমানে প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা আছে। চাষি বাজারের রসুন নাটোর, খুলনা, যশোর, চট্রগ্রাম, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ রাজধানীর শ্যাম বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। দেশের প্রায় সব জেলারই পাইকার এসে আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান।’

আড়তদার মতিউর রহমান খান বলেন, ‘প্রতিদিন প্রতিটি রসুনের দোকানে ৫ হাজার থেকে ১৪ হাজার কেজি রসুন বিক্রয় হয়। কোনো দোকানেই ৫ হাজার কেজির কম বিক্রি হয় না।’


মো. হানিফ নামে এক পাইকার বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জ ভোলতা থেকে এসেছি। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা থেকে মাত্র ২ ঘণ্টায় চাষি বাজারে পৌঁছাতে পারি। অল্প সময়ে মালামাল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারি। বাজারের আড়তদারসহ চাষিরা বেশ মিশুক। ব্যবসা ভালোই চলছে।’

গোপালগঞ্জ থেকে আগত পাইকার রেজাউল করীম বলেন, ‘আমি প্রতিদিন চাষি বাজারে আসি রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি কিনতে। প্রতিদিন এক ট্রাক করে মালামাল কিনে নিয়ে যাই।

বাজারের নিরাপত্তা যথেষ্ট ভালো। নির্বিঘ্নে আমরা মালামাল কিনে গন্তব্যে ফিরতে পারি। এই বাজারের রসুন অন্য এলাকার রসুনের তুলনায় বেশ ভালো এবং দামে কম।’

রসুন প্যাকেট সহায়তাকারী শ্রমিক বকুল খান বলেন, ‘দলবদ্ধ হয়ে কাজ করি আমরা। সারাদিনে ভালোই কাজ হয়, এখন রসুনের সিজন আর কিছুদিন পরে পেঁয়াজ উঠবে আমরা কখনো বসে থাকি না । এখানে কাজ করে যে টাকা ইনকাম হয়, সেই টাকা দিয়ে সংসার অনেক সুন্দরভাবে চালাতে পারি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি, ভালোই চলে যায়।’

রুজিনা নামে এক নারী শ্রমিক জানান, চাষি বাজারে কাজ করে সংসার খরচ চালান। ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখেই আছেন তিনি। সারাদিন কাজ করে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পান। এই কাজ করে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন।

বাজারের শ্রমিক মো. হাবিব ঢালী বলেন, ‘বড় গাড়ি হলে বেশি ইনকাম, ছোট হলে কম । তবে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আমাদের ইনকাম হয়।’

মিরাশা চাষি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন খালাসি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ায় সারাদেশ থেকে আমাদের বাজারে পাইকাররা আসেন সল্প সময়ে। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীসহ সারাদেশে মালামাল পৌঁছানো যায় এখান থেকে। সারাদেশ থেকে পাইকাররা আসায় চাহিদা বেশি। এখন বাজারে রসুন বিক্রি বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের বাজারে অন্য সবজি বাদ দিয়ে শুধু রসুনই বিক্রি হয় ২ কোটি টাকার বেশি।’


জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জামাল হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘জাজিরা উপজেলায় রসুন চমৎকারভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১,৬০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ। পুরোটাই আমাদের অর্জিত হয়েছে। কাঁচা রসুন বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের খরচের তুলনায় বাজারদর ঠিক রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকার বাজারসহ দেশের বড় বড় সব বাজারেরই পাইকাররা এখান থেকে রসুন নিয়ে সেখানে বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে যে দাম রয়েছে, আগামীতে কৃষক আরও বেশি দাম পাবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কৃষকদের উন্নত মানের রসুন চাষে উদ্ধুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগে ফেরির মাধ্যমে ঢাকার বাজার ধরতে অনেক কষ্ট হতো। অনেক সময় ঢাকার বাজারে যাওয়া সম্ভব হতো না। এখন পদ্মা সেতুর কারণে কৃষকরা হাতের নাগালের মধ্যে ভালো দামে রসুন বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন