১৮ মে ২০২৪, শনিবার



এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা উত্তরবঙ্গবাসীর

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল || ২৫ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:০৪ এএম
এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা উত্তরবঙ্গবাসীর


বিগত বছরগুলোতে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট থাকতো। চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো ঘরমুখো মানুষের। কিন্তু এ বছর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থায় এই মহাসড়কে ঈদযাত্রায় স্বস্তি মিলেছে। 

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিটি ঈদযাত্রায় যানজট ছিল নিত্যসঙ্গী। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের বিশেষ পরিকল্পনায় মহাসড়কে পুলিশ সদস্যদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ নির্ভিঘ্নে বাড়ি ফিরেছেন। 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারাও মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করেন।

যানবাহন চালকরা জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকতো। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহসড়কে পরিবহন ও যাত্রী সাধারণকে অপেক্ষা করতে হতো। ঢাকা থেকে সেতু পার হতে তিন ঘণ্টার রাস্তা পারি দিতে ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগতো। বিশেষ করে নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের ঈদযাত্রার দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। প্রতিটি  ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মস্পর্শী মৃত্যুর মিছিল ছিল নিত্যসঙ্গী। 

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন ও যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সবসময় সতর্ক থাকতেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মহাসড়কের স্ব স্ব এলাকায় অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ, পানীয় জলের সংস্থানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট থাকতেন। যাত্রী সাধারণের প্রয়োজনে গড়ে ওঠেছিল বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান-পাট। অনেকে পানি ও হালকা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির যাত্রীদের কাছে বিক্রি করতেন। 

এবছর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ি গিয়েছেন। এছাড়া মহাসড়ক ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেনে (সাইড রোড সহ) প্রশস্তকরণ করা এবং বাকি সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ডিভাইডার বিহীন দুই লেন একমুখীকরণ (উত্তরবঙ্গমুখী) ও ঢাকাগামী পরিবহনগুলো ভূঞাপুর লিংক রোড ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়ায় দীর্ঘ দিনের যানজটের অবসান হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে এসেছে। 

বাসচালক আফছার আলী, রাকিবুল ইসলাম ও সুপারভাইজার ফরহাদ আলী, চালক মোকাদ্দেস, সুপারভাইজার রায়হান, চালক আহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সুপারভাইজাররা বলেন, এ মহাসড়ক তাদের কাছে যানজটের অপর নাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। মহাসড়ক চারলেন হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা ও পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় এবার স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পেরেছেন। যাত্রী সাধারণেরও কোনো অভিযোগ শুনতে হয়নি।

মহাসড়কে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী শহিদুল, সাথী বেগম, সাদ্দাম হোসেন, বকুল তরফদার, কাকলী আক্তারসহ অনেকেই জানান, গত ঈদে তারা ৭-৮ ঘণ্টার জটে পড়েছিলেন। এবার মহাসড়কে যানজট না থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারছেন। 

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করার ফলে এবার ভোগান্তি হয়নি। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগ ও বাসেক (বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ) সবাই মিলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ যাতায়াত করতে পেরেছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে সেতুমুখী সাড়ে ১৩ কিলোমিটারে একমুখী যাওয়া এবং ঢাকামুখী পরিবহনগুলো ভূঞাপুর হয়ে মহাসড়কে যুক্ত হওয়ায় যানবাহনগুলো একমুখী সুবিধা পেয়েছে। ফলে মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া লিংক রোডগুলোর মুখ প্রশস্তকরণ ও যথোপযুক্ত ব্যবহার করায় এবার মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পেরেছে। মহাসড়কে যানজট নিরসনে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করে। 

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন