কাঠ ও বাঁশের ঠকঠক শব্দ, কাগজে রঙের তোড়জোড় , রঙের তুলিতে সাজছে সব। আর মাত্র দুদিন বাকি।
এরপরই বাংলা বর্ষবরণ। মঙ্গল শোভাযাত্রার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ঘুরে বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
চারুকলার প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই জয়নুল আবেদিন গ্যালারির সামনেই চোখে পড়লো একদল শিক্ষার্থী ও শিল্প অনুরাগীকে। তারা জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিভিন্ন আকার-রকমের ছবি আঁকছেন।
পাশেই আরেক দল শিক্ষার্থী ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। মাটির সরায় নানা রঙে ফুটিয়ে তুলছেন মাছ-ময়ূর-পাখির মুখ, কেউবা আঁকছেন আলপনা, ফুল-লতাপাতাসহ নানা প্রতীক।
জয়নুল গ্যালারির এক কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো, বাঘ-সিংহ-হাতি ও পেঁচাসহ বিভিন্ন পশু-পাখির মুখোশ তৈরি হচ্ছে। চলছে রঙ করার কাজও। পুরো কক্ষজুড়ে তৈরি করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রতীক।
সামনের ফটকে ক’জন শিক্ষার্থী মাউনবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট পাখি, ফুল, ছোট পেঁচার ভাস্কর্য বানাচ্ছেন। একইসঙ্গে তৈরি করছেন হাতপাখা আর চড়কি। চলছে তাতে রঙ করার কাজও।
তুলির নিখুঁত ছোঁয়ায় মনের মাধুরী মিশিয়ে রঙ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা এ সময় ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ধ্রুব বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই আছি। প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ রঙ করে যাচ্ছি। কাজ করতে বেশ ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে না, কাজ করছি। কাজ করতে-করতে অনেক কাজ হয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, আজে মুখোশগুলোর সব রঙ করা শেষ হয়ে যাবে।’
এদিকে, মুখোশসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম আবার সরাসরি বিক্রও করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে চারুকলার শিক্ষার্থী মিম বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন মোটিভ যে কেউ এখান থেকে কিনতে পারেন। বিভিন্ন রঙে আঁকা সরা, বাঘের মাস্ক, ছোট পাখি-বড় পাখি, ছোট পেঁচা-বড় পেঁচা, ফুল, পাখা ও চিত্রকর্ম বিক্রি করা হচ্ছে। আকারভেদে সরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় , বড় পাখি, বাঘ, পেঁচার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়।’
গ্যালারি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে যেতেই একপাশে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন মিস্ত্রি ও শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে কিছু মোটিভের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখন বাকি কাগজ ও রঙের প্রলেপ দেওয়া।
শিক্ষার্থীরা জানান, এই কাজগুলো চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো, স্ট্রাকচার, পাখির অরিগামি, মুখোশ, সরাচিত্র ও পেন্টিং।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার পাঁচটি বড় মোটিভ থাকবে। এসবের মধ্যে রয়েছে মা ও শিশু, নীলগাই, ময়ূর, হাতি ও ভেড়া। এছাড়া, তারা তৈরি করছেন হাতপাখা, চড়কিসহ আরও কিছু লোকজ ঐতিহ্যের অংশ ।
আয়োজক সদস্য ও মাস্টার্স সেকেন্ড পার্টের শিক্ষার্থী শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির জন্য একমাসের প্রস্তুতি নেই। এবার কিছুদিন পিছিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে আমাদের এবারের মোটিভগুলো প্রায় পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেছে। মোটিভগুলোর মধ্যে রয়েছে মা ও শিশু, নীলগাই, ময়ূর, হাতি ও ভেড়া।’
এই আয়োজন দেখতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করছেন চারুকলা প্রাঙ্গণে। পরিবার নিয়েও এসেছেন অনেকে।
সুমন সরকার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি এখানে অনেক বছর ধরে আসি। যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন থেকেই আসি। এখন পরিবার নিয়ে আসি। বাচ্চাকে বাংলার সংস্কৃতির সবকিছু দেখাতে বোঝাতে নিয়ে এসেছি।’
উল্লেখ্য, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ হয়ে টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে।
ঢাকা বিজনেস/এনই/