২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



১৫ হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে হিলিতে ভারতীয় শিক্ষার্থী

আনোয়ার হোসেন বুলু, হিলি (দিনাজপুর) || ১০ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম
১৫ হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে হিলিতে ভারতীয় শিক্ষার্থী


প্লাস্টিক-পলিথিনের ভয়াবহতা ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের শিক্ষার্থী রোহান আগারওয়াল। নিজ দেশের ২৭টি রাজ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা শেষে তিনি গত বছরের অক্টোবরে ফেনীর বিলোনিয়া চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৩টি জেলা ঘুরে গতকাল সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে দিনাজপুরের হিলিতে আসেন। এরপর তিনি হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালান।

রোহান আগারওয়াল বলেন, ‘২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গা নদীর তীর থেকে পায়ে হাঁটা শুরু করি। সেখান থেকে নিজ দেশের রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চন্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, কর্ণাটক, কেরালা ও গোয়াসহ ২৭টি রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনবহুল এলাকা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্লাস্টিক-পলিথিনের ক্ষতিকারক দিক ও ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছি। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার আহবান জানিয়েছি।’

জানা গেছে, গত বছরের ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন তিনি। তারপর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ৩৩টি জেলায় প্রচারণা চালান। এরপর গতকাল সোমবার রাতে হিলিতে আসেন।

রোহান আগারওয়াল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘এই যাত্রায় আমি ১৫ হাজার কিলোমিটার হেঁটেছি এবং কখনো কখনো লিফটও নিয়েছি। আমি ৯০ দিনে ভারতের ২৭টি রাজ্য এবং বাংলাদেশের ৩৩টি জেলা কভার করে ৮৬০ দিনেরও বেশি ভ্রমণ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই যাত্রা শুরু করার মূল উদ্দেশ্য হলো প্লাস্টিকের বিপদজনক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেওয়া। আমি ভারত ও বাংলাদেশের অনেক স্কুল এবং ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছি এবং তারপর আমি সাইবেরিয়ার ওমিয়াকোমে হেঁটে যাবো। যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭২ ডিগ্রি এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান। আমার আশা আমিই দক্ষিণ এশীয় হিসেবে প্রথম স্থলপথে সেখানে পৌঁছাবো। সাইবেরিয়া যাওয়ার পথে আমি আরো ৫ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার ২০টি দেশ অতিক্রম করবো।’

গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে দিনাজপুরের হিলিতে পৌঁছালে সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম, আকতার হোসেন বকুল, আব্দুল আজিজ, মোসলেম উদ্দিন, লুৎফর রহমান ও সোহেল রানা তাকে অভ্যর্থনা জানান। 

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রোহান বলেন, নাগপুরে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পরিবারে তার মা-বাবা ও ছোট বোন রয়েছে। পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য নয়। প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্যও পৃথিবী। প্লাস্টিক থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতেই আমার এই যাত্রা। তাই ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছি। পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। বাংলাদেশের যেখানেই গেছি, সেখানকার স্কুল-কলেজে গেছি, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে গেছি। সবাইকে পরিবেশের সুরক্ষার কথা বলেছি। বাংলাদেশের মানুষ আন্তরিক ও ভালো। কেউ কোনোদিন জানতে চায়নি, আমি কোন ধর্মের। মানুষ হিসেবে সবাই ‘হেল্প’ করেছে। আই লাভ বাংলাদেশ।’

রোহান বলেন, ‘আমি ভারতের গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাকত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাংলাদেশের পর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’

স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য আমাদের জীবনে ও পরিবেশের উপর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করছে। এরফলে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমি মনে করি রোহানের এই প্রচারণা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তার এই পথচলায় সবার এগিয়ে আশা দরকার। তাহলে হয়তো একদিন প্লাস্টিকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এম 



আরো পড়ুন