২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার



শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণ হবে কবে

মিজানুর রহমান মিথুন || ০৬ অক্টোবর, ২০২২, ০৯:৪২ পিএম
শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণ হবে কবে


শিক্ষক শব্দটি শুনলেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে একটি ছবি। আর সে ছবিটি হচ্ছে-চক, ডাস্টার, বই ও বেত নিয়ে একজন প্রাজ্ঞ মানুষ শিক্ষার্থীদের সামনে চেয়ারে বসে আছেন। তাদের জ্ঞান দান করছেন। জ্ঞানের দ্বীপ শিখা জ্বেলে সমাজের অন্ধকার, অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করতে পাঠ দান করছেন। বেত প্রসঙ্গে এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, এখন অবশ্য শিক্ষকরা ক্লাসে বেত ব্যবহার করেন না। আইন করে বেতের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

একটি সমাজ, জাতি তথা একটি দেশ গঠনে এই শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান-এই ৫টি মৌলিক চাহিদার একটি শিক্ষা। এই শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে শিক্ষকরা নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। 

শিক্ষকরা নিজের জীবন ও কর্মময় যৌবনের সোনালি সময় ব্যয় করছেন এই শিক্ষার পেছনে। তাই শিক্ষকদের মহত্বের কথা যুগে যুগে অকৃপণভাবে উচ্চারিত হয়েছে। এখনো হচ্ছে। শিক্ষকদের অমূল্য অবদানের কথা নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ। 

এ কারণে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো শিক্ষকদের শুধু সম্মান দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে না। সেসব দেশের রাষ্ট্র ও সরকার শিক্ষদের বৈষয়িক ও আর্থিকভাবে সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে। সম্মানজনকভাবে বেতন-ভাতা দেয়। শিক্ষকদের উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে সেসব দেশের সরকার। 

কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। সামাজিকভাবে আমাদের দেশের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ও মান-সম্মান দেওয়ার বিষয়টি যেন কাগজে-কলমে থাকার মতোই। সেই সঙ্গে বেতনা-ভাতাও সম্মানজনক নয়। পুঁজিবাদী বিশ্বের সব কিছু নির্ধারিত হয় মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা ও ক্ষমতা দিয়ে, যেহেতু শিক্ষকদের এসব নেই, সেহেতু শিক্ষকদের মূল্যায়ন কেমন হচ্ছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা এর বাস্তব চিত্রও দেখতে পাচ্ছি।

জাতীয়করণের আশায় অনেক মেধাবী এই পেশায় এসেছেন। কিন্তু তাদের স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। জাতীয়করণের জন্য বছরের পর বছর রাজপথে আন্দোলনও করছেন শিক্ষকরা। 

মানবসভ্যতার এই উন্নতির চরম সময়ে এসেও আমাদের রাষ্ট্র শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় পেশায় পরিণত করতে পারছে না। ফলে মেধাবীরা এই পেশায় আসছেন না। একদল স্বপ্নবাজ মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে এই পেশাতে আসেন। কিন্তু এই পেশায় প্রবেশের কিছুদিন পর তাদের অধিকাংশের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। 

একটি জাতির উপযুক্ত মানস গঠনের জন্য প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত দেশগুলোতে সেসব দেশের মেধাবী ও সবচেয়ে সেরা সৃজনশীল মানুষদের এই পেশায় নিযুক্ত করে। সেই সঙ্গে বিভিন্নভাবে তাদের উৎসাহিত করে। 

তাদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও পদোন্নতির ব্যাপারটি মেধাবীদের এই পেশায় আসতে নিরুৎসাহিতই করবে। 

অন্যদিকে এই পেশায় কেউ এলে কিছুদিনের মধ্যে পেশা বদলের সিদ্ধান্ত নেন। চলেও যাচ্ছেন কেউ কেউ। কিছু কিছু উচ্চশিক্ষিত এই পেশায় স্থায়ী হলেও তারা আর্থিক-সামাজিক মর্যাদা না পেয়ে হতাশায় ভোগেন। ফলে আশানুরূপ শিক্ষা দান করতে পারেন না।

এ তো গেলো সরকারি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের কথা। বেসরকারি  উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবস্থা আরও করুণ। আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, তা দিয়ে সম্মানজনক জীবনযাপন তো দূরের কথা, বর্তমান সময়ের নিরিখে তাদের প্রত্যাহিক জীবনের অনেক চাহিদাও পূরণ করতে পারছেন না। 

আমাদের দেশের সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেনি কোনো সরকার। সবাই প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে যায়। 

জাতীয়করণের আশায় অনেক মেধাবী এই পেশায় এসেছেন। কিন্তু তাদের স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। জাতীয়করণের জন্য বছরের পর বছর রাজপথে আন্দোলনও করছেন শিক্ষকরা। রাজপথে লাঞ্চিত হচ্ছেন। তারপর তারা স্বপ্ন দেখছেন। 

আশা করছেন, একদিন তারা শিক্ষকতা পেশায় থেকে উন্নত জীবনের সন্ধান পাবেন। আশায় থেকে থেকে অবসরে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বপ্ন তাদের কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে।  

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

ই-মেইল: [email protected]



আরো পড়ুন