২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



উদয় হাকিমের কলাম
প্রিন্ট

ইউরোপের কোন দেশে সহজে যাওয়া যায়

উদয় হাকিম, মালটা থেকে || ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ০৯:১০ পিএম
ইউরোপের কোন দেশে সহজে যাওয়া যায়


এশিয়ানদের কাছে ইউরোপ একটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। বিশেষ করে সেনজেনভুক্ত ইউরোপের দেশের প্রতি মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষদের আগ্রহ বেশি। উচ্চ আয়ের ইউরোপের দেশের প্রতি বাংলাদেশিদের ব্যাপক আকর্ষণ রয়েছে। কিভাবে সেনজেনভুক্ত ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়া যায়, তা জানতে উদগ্রিব অনেকেই। 

দ্বীপ দেশ মালটা এসে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপের সব দেশ এখন ওয়ার্ক পারমিট দিচ্ছে না। কিছু দেশে যাওয়া আগে সহজ থাকলেও এখন আর সেটি নেই। তবে কেবল পড়ালেখা করার জন্য ওইসব দেশে যাওয়া যায়, তাতেও ভিসার হার খুব বেশি নয়। কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যেতে চাইলে তা যেমন কঠিন, তেমনি নানা বাধ্যবাধকতার জালে আবদ্ধ। আবার অনেক দেশ বাংলাদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট দিচ্ছে না। 

এরমধ্যে রয়েছে আরেকটি সমস্যা। সেনজেনভুক্ত সব দেশের দূতাবাস বা ভিসা সেন্টার বাংলাদেশে নেই, সেসব দেশে যেতে চাইলে ভিসা নিতে হয় ইন্ডিয়াতে গিয়ে। কিন্তু ইন্ডিয়া এখন বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না। সুতরাং ওইসব দেশে যাওয়া কার্যত বন্ধ। 

ওদিকে, ইউরোপের দেশগুলোতে বিরাজ করছে লোকবল সংকট। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, এসব দেশের লোকজন সহজ গন্তব্য হিসেবে মালটায় আসেন। অনেকে মালটা থেকে সেনজেনভুক্ত অন্য দেশেও চলে যান।

মালটায় বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন আইনজীবী নাজমুল ইশতিয়াক বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন বিশদভাবে। তার মতে, একেকটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একেক দেশ প্রয়োজন অনুযায়ী তার ভিসানীতি সহজ করে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কঠিন করে। লোকবল সংকট হলে বা কোনো খাতকে বেশি গুরুত্ব দিলে বেশি সংখ্যক লোকবল নেওয়া হয়। যেমন, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড; এসব দেশে সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। 

প্রশ্ন ছিল, এখন ইউরোপের কোন দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশিদের আসা সহজ? তিনি বলেন, ইউরোপে আসা সহজ নয়, আবার কঠিনও নয়। একেক সময় একেক দেশ নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কিছুটা ছাড় দেয়। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ শেষ হয়ে গেলে আবার নিয়ম কানুন কঠিন করে। 

নাজমুল বলেন, মালটা আসা এখন কিছুটা সহজ, ওয়ার্ক পারমিট  ও ভিসা দেওয়ার হার সন্তোষজনক। মালটা একটি পর্যটননির্ভর দেশ। এখানকার জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে ৫ লাখ। এদেশে রয়েছে প্রচুর হোটেল রেস্টুরেন্ট। প্রতি বছর হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকবল প্রয়োজন। বাংলাদেশিদের জন্য এখানে ভালো সুযোগ রয়েছে। আগে মালটা’র ওয়ার্ক পারমিট বা ভিসা একেবারেই সহজ ছিল। এখন নতুন করে স্কিলপাস নামে একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, যদিও তা খুব একটা কঠিন কিছু নয়; ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। 

নাজমুল ইশতিয়াক আরও বলেন, মালটার পাশাপাশি কিছু ট্রেডে স্পেনও লোকবল নিচ্ছে। হেলথ কেয়ার বা নার্সিং, রেস্টুরেন্ট ওয়ার্কার ও ড্রাইভার পদে স্পেন যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্পেন যাওয়ার পর স্প্যানিস ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ নিতে হয়। ড্রাইভারদের স্থানীয়ভাবে লাইসেন্স নিতে হয়। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ও মালটার মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। দক্ষ লোকবল নিতে আগ্রহী তারা। নতুন প্রবর্তিত স্কিলপাস করলে সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। আগ্রহীদের খেয়াল রাখতে হবে যে, কোম্পানিতে কাজ করতে চাইছেন, সেটা যেন রেজিস্ট্রিকৃত হয়। মালটা হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম লিস্টে ওই রেস্টুরেন্ট বা হোটেল এর নাম আছে কি না, তা দেখতে হবে। এটা অনলাইনেই চেক করা যায়। 


মালটা পিঙ্ক গারলিক রেস্টুরেন্টে কাজ করেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, মালটিজরা এখানে রেস্টেুরেন্টে কম সংখ্যায় কাজ করে। তাদের ২ হাজার ইউরোর কমে পোষায় না। অন্যদিকে বাংলাদেশিদের ১ হাজার ইউরো হলেই চলে যায়। থাকা-খাওয়াসহ ৪০০ ইউরোতে মোটামুটি মাস চলে যায়। ওভারটাইম বাদে ৬০০ ইউরো সেভ করা যায়। এখানে পার্টটাইম কাজের সুযোগও রয়েছে। 

তবে নতুন প্রবর্তিত স্কিলপাস পরীক্ষা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো আপত্তি জানানো হয়েছে। তাদের যুক্তি হলো যারা অফিসিয়াল পজিশনে বা ব্যাক অফিসে যারা কাজ করবেন, তাদের এই স্কিলপাস না হলেও চলে। স্কিলপাস বাতিল করতে বাংলাদেশ মালটা বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটি পিটিশন দায়ের করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের ধারণা, এআইভিত্তিক এই স্কিলপাস পরীক্ষা হয়তো শিগগিরই বাতিল হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে ওই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অদক্ষ লোকদের জন্য নতুন একটি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করার পরিকল্পনা আছে। যেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষানবিশ  হিসেবে কাজও করা যাবে। 

কেউ কেউ বলেন, স্পেনে ভিজিট ভিসা নিয়ে গিয়ে আবেদন করলেই ওয়ার্ক পারমিট মেলে। এ বিষয়ে আইনজীবী নাজমুল ইশতিয়াক বলেন, কথা সত্য। তবে বাংলাদেশিদের জন্য সেটা রিস্কি, জটিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে আবেদন বাতিল হতে পারে, ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানো হতে পারে। 

একটা ভঅলো খবর হলো, বাংলাদেশে মালটা’র ভিসা পেপার গ্রহণ করে ইটালি অ্যাম্বাসি নিযুক্ত ভিএফএস সেন্টার। ভিসা সিদ্ধান্ত হয় সরাসরি মালটা থেকে। অন্যদিকে ঢাকায় স্পেনের অ্যাম্বাসি থাকায় ইন্ডিয়া যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

তবে ভিসার ব্যাপারে নাজমুল ইশতিয়াক ৪ টি বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো: 

১. আসল পরিচিতি তুলে ধরা: প্রকৃত পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র পূরণ করতে হবে। কেউ কেউ ভিন্ন নামে বা অন্যের নামে সার্টিফিকেট দিয়ে বিদেশে আসতে চান। সেটা করা যাবে না। পাসপোর্ট, এনআইডি বা জন্ম সনদ, শিক্ষা সনদ এসবে যেন কোনো গোলমাল না থাকে। 

২. ভ্রমণের উদ্দেশ্য: কী কারণে মালটা বা অন্য দেশে যেতে চান, তার সঠিক কারণ উল্লেখ করতে হবে। চাকরি হলে ওয়ার্ক পারমিট লাগবে। ইউকাস লাগবে শিক্ষার জন্য হলে। ভিজিট ভিসা হলে সেটাও উল্লেখ করতে হবে। এসবের জন্য চাই উপযুক্ত ডকুমেন্টস।  

৩. তহবিল: ভিজিটর বা শিক্ষার্থী হলে ব্যাংকে টাকা আছে কি না তার প্রমাণপত্র দিতে হবে। 

৪. ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা: ভিসা অফিসার দেখতে চান ভিজিটর হলে আবার তার দেশে ফিরে যাবেন কি না। রিটার্ন টিকিট বা হোটেল রিজার্ভেশন আছে কি না। ইনভাইটেশন, পরিবারের লোকজন, আত্মীয় স্বজন আছে কি না। রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে কি না।

ঢাকা বিজনেসের অনুরোধে বাংলাদেশিদের যোগাযোগের জন্য নাজমুল ইশতিয়াক একটি ইমেইল আইডি দিয়েছেন (bdglobalcareer@gmail.com)। তথ্যগত সহায়তার জন্য সেখানে চাইলে কেউ ইমেইল করতে পারেন বলে তিনি জানিয়েছেন।  

 



আরো পড়ুন