২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



উদয় হাকিমের কলাম
প্রিন্ট

মালটায় বাংলাদেশিরা কেমন আছেন

উদয় হাকিম, মালটা থেকে || ২৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:১০ পিএম
মালটায় বাংলাদেশিরা কেমন আছেন


ভূ-মধ্যসাগরের দ্বীপ দেশ মালটা। শেঙ্গেনভুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনিন্দ্য সুন্দর দেশটিতে আসার জন্য অনেকেই আগ্রহী। কেউ কেউ সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবেও এদেশে আসেন। অনেকেই মালটাতে গড়েছেন তাদের সুখের নিবাস। স্বপ্ন দেখছেন বাকিটা জীবন এখানেই কাটিয়ে দিতে। কেউ কেউ আছেন, যারা কেবল আরও সুখের আশায় ছুটে বেড়াচ্ছেন; থিতু হতে পারছেন না। 

নাঈম ও সানজিদা। এই দম্পতি খুব ভালো আছেন। সুখেই আছেন। তারা দুজনেই আয়ারল্যান্ডে পড়ালেখা করেছেন। সেখান থেকে চাকরি নিয়ে এসেছেন মালটায়। দুজনেই চাকরি করেন লুফথানজা এয়ারলাইনসে। দুজনেই এয়ারক্রাফ্ট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার। তাদের কাছে মালটা বসবাসের জন্য ভালো জায়গা। নিরাপত্তা, নিয়ম-কানুন, নাগরিক সুরক্ষা সবকিছুই ভালো। সপ্তাহে তিনদিন তাদের ছুটি। মালটা বেশ উপভোগ করছেন তারা। 

শাওন ও তুলি। এই দম্পতিও ভালো আছেন। তিন রুমের একটি ভালো বাসা নিয়ে আছেন। দুজনেই মার্কেটিংয়ে জব করেন। নিজের মতো করে থাকতেই পছন্দ করেন তারা। জানালেন, তারাও খুব ভালো আছেন। শনি-রবি দুদিন ছুটি। ওই দুদিন তারা ঘুরে বেড়ান। 

ব্যবসায়ী দিদার জানান, তিনি আগে ইতালিতে ছিলেন। সেখান থেকে মালটায় এসে ব্যবসা শুরু করেছেন। ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। তার লক্ষ্য ব্যবসায়ের পরিধি বাড়িয়ে এখানেই থেকে যাবেন। 



ইরফান এসেছেন পড়ালেখা করতে। রকিবুল এসেছেন জব নিয়ে। বয়সে তরুণ। শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে তাদের সঙ্গে পরিচয়। জানালেন, ভালো আছেন তারাও।  

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের অভিযোগ, মালটাতে সবুজ কম, গাছগাছালি কম। আকাশ হোসেনের কথা হলো সব কিছু নিজের মতো করে হয় না। বেহেশত হলে আলাদা কথা, দুনিয়াতে সব কিছু ভালো হবে এমন জায়গা হয়তো নাই! একটা বিষয়ে তারাও একমত, মালটার মানুষ খুব আড্ডাবাজ। ফূর্তির মধ্যে থাকে সবসময়। খাওয়া-দাওয়া বিনোদন আড্ডা নিয়ে তাদের ব্যস্ততা। 

স্থানীয় অধিবাসীদের মালটিজ বলা হয়। তারা অভিবাসীদের মোটেও খারাপ চোখে দেখে না। সবাইকে সমানভাবেই মূল্যায়ন করেন। ছোট-বড় নেই। সবাই সবাইকে সম্মান করে। মানবিকতা, মনুষ্যত্ব আছে সবার মধ্যেই। আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি সব ইউরোপের মতোই। চারদিকে সাগরে ঘেরা দেশ। 

এদেশের মানুষের মন-ও সাগরের মতোই উদার। তবে সাগর পাড়ি দিয়ে কিম্বা অনেক টাকা পয়সা খরচ করে এসেও কেউ কেউ মালটা থাকেন না। ভালোর কোনো শেষ নেই, সেই আরো ভালো’র আশায় তারা ছুটে চলে দেশ থেকে দেশে। এসব করতে গিয়ে কেউ যায় ফেঁসে। 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলেন, কিছু মানুষ আছেন যারা স্বর্গে গিয়েও বিবাদ করবেন। পারলে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেও ঝামেলা লাগাবেন। এরকম বাংলাদেশি মালটাতেও আছেন। 

আগে এখানে বাংলাদেশিদের খুব সম্মান ছিল। কিছু লোকের অসততার কারণে কিছুটা হলেও সে সম্মান ম্লান হয়েছে। তারপরও তুলনামূলক সম্মান নিয়েই বাংলাদেশি কমিউনিটি মালটাতে আছেন। ভালো আছেন। কেউ কেউ আরো বেশি খাবারের লোভে, আরও বেশি ইনকামের লোভে মালটা ছেড়ে ইতারি কিংবা শেঙ্গেনভুক্ত অন্য দেশে চলে যায়। তারা নিজেরাই কেবল জানে- আদৌ ভালো আছে কি না। 

মোহাম্মদ রফিক নামে এক বাংলাদেশি জানালেন, তিনি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। নিজের খরচ-খরচা মিটিয়ে দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। অপেক্ষায় আছেন সিটিজেনশিপ পেলে হয়তো তার স্বপ্ন সফল হবে। তিনি জানান, গত সপ্তায় তার রুমমেট ইতালি চলে গেছেন। তারপর আর যোগাযোগ করেনি। তাই তার ভালো-মন্দ জানাও সম্ভব হয় নাই। 

লিয়াকত হোসেন কয়েক বছর ধরে আছেন মালটায়। তিনি শুনেছেন, আগে অনেকেই মালটা থেকে আরও বেশি বেতনের লোভে পর্তুগাল যেতো। এখন সেখানকার বেতন অনেক কমে গেছে, মাল্টার প্রায় অর্ধেক। এখন পর্তুগাল আর তেমন কেউ যাচ্ছে না। তার মতে, দৌড়াদৌড়ি না করে কেউ যদি ধৈর্য ধরে এখানে বসবাস এবং চাকরি করে, মাত্র ৫টা বছর থাকে, তাহলে তারা নাগরিকত্ব পেতে পারে। এরপর যে-কোনো জায়গায় চলে গেলে তারও সুবিধে, অন্যদিকে বাংলাদেশিদের বদনামও হয় না। 


কথা বলে জানা গেলো, আশার কোনো শেষ নেই। সবাই চায় আরও ভালো থাকতে। এ কারণে অনেকেই ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানিতে চলে যান। এখন নাকি মালটা থেকে পর্তুগালে যাওয়া কমেছে। তবে প্রবণতা কমে গেলেও ইতালি যাওয়া একেবারে থামেনি। ইতালি খুব কাছের দেশ হওয়ায় অনেকেই চলে যান। সেখানে গিয়ে তারা ভাষাগত, আবহাওয়া ইত্যাদি নানা সমস্যায় পড়ছেন। 

জানা গেছে, অবৈধপথে মালটা আসার প্রবণতাও কমে গেছে। সমুদ্রে ঘেরা দেশটির চারপাশে কড়া পাহারায় রয়েছেন মালটার নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। এমনকি রাতের বেলাতেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সাগরপথ। 

অনেক বুদ্ধিমান আছেন, যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এখানে এসে ব্যবসা করেন। ৪০-৫০ লাখ টাকা হলে এখানে রেস্টুরেন্ট বা রিটেইল শপ করা যায়। বেচা-বিক্রি খুবই ভালো। সুবিধা হলো এখানে কোনো চাঁদাবাজি বা দুর্যোগ বলতে কিছু নেই। সারা বছরই ব্যবসা চলে। প্রফিট মার্জিনও ভালো। 

মালটার স্থানীয়রা শুধু অফিসিয়াল জব এবং সরবরাহ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। বাকি ব্যবসাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। অনেকের মতে, ইউরোপে কেউ ধনী হতে চাইলে তাকে ব্যবসা শুরু করতে হবে। শুরুতে চাকরি নিয়ে এলেও অনেকে মালটা এসে ব্যবসা করছেন এবং ভালো করছেন। 

বাংলাদেশিদের ব্যবসা বা বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি হেল্প ডেস্ক খুলেছে ‘বাংলাদেশ মালটা বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন’ (বিএমবিএ)। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আফসানা প্রিয়া আগ্রীদের হেল্প ডেস্কের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি যোগাযোগের জন্য একটি ইমেইল আইডি দিয়েছেন info@bmba.org.mt। ভিজিট করতে বলেছেন সংগঠনের ওয়েবসাইট: www.bmba.org.mt এবং কেউ চাইলে হোয়াটস অ্যাপ নাম্বারেও (+35699241016) যোগাযোগ করতে পারেন।  



আরো পড়ুন